দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ সেবা আরও সহজ করতে মোবাইল অপারেটরগুলোর টাওয়ার স্থাপনে বিদ্যমান নীতিমালা কিছুটা শিথিল করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এতে ২০২১ সালের নির্দেশিকায় টাওয়ার স্থাপন-সংক্রান্ত অনুমোদন ও সময়ক্ষেপণ কমিয়ে আনা হয়েছে।
নতুন নির্দেশিকায় চারটি জেলা ছাড়া অন্যান্য সীমান্তবর্তী জেলায় সীমানারেখার শূন্য থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে শুধু বিটিআরসি থেকে অনুমোদন নিতে হবে। আগে এসব ক্ষেত্রে বিজিবি, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরে (এনএসআই) ধরনা দিতে হতো।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিটিআরসির পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিটিএস (মোবাইল টাওয়ার) স্থাপন-সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০২৫’ জারি করা হয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ম সহজ করায় সীমান্তবর্তী এলাকায় মোবাইল টাওয়ার বাড়বে। এতে সীমান্তের মানুষের নেটওয়ার্ক না পাওয়ার বঞ্চনা ঘুঁচবে। এছাড়া, অসংখ্য বাংলাদেশি দেশীয় নেটওয়ার্ক না পেয়ে বাধ্য হয়ে ভারতীয় সিম কার্ড ব্যবহার করতেন। কিন্তু নতুন নির্দেশিকা মেনে বেশি টাওয়ার স্থাপন করা হলে দেশীয় সিম ব্যবহারে ঝুঁকবেন সীমান্তের বাংলাদেশিরা। এতে ভারতীয় সিম ব্যবহার কমবে।
যা আছে নতুন নির্দেশিকায়
নির্দেশিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, সীমানারেখার তিন থেকে আট কিলোমিটার এলাকায় মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে আগে ডিজিএফআইর কাছে অনুরোধ করার শর্ত ছিল। নতুন নির্দেশনায় শুধু বিটিআরসির কাছে আবেদনের কথা বলা হয়েছে। তবে শূন্য থেকে তিন এবং তিন থেকে আট কিলোমিটারের মধ্যে বিটিএস স্থাপনের ক্ষেত্রে বিটিআরসি থেকে অনুমোদন দেওয়ার পর উল্লেখিত সংস্থাগুলোকে অবহিত করার বিধান রাখা হয়েছে।
আগের নীতিমালায় কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া অন্যান্য সীমান্তবর্তী স্থানে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আবেদনের পর ৪৫ দিনের মধ্যে আপত্তি বা অনাপত্তি পাওয়া না গেলে পরে ১৫ দিনের মধ্যে মতামত চাওয়া হতো। এ সময়ের মধ্যে কোনো মতামত না পাওয়া গেলে সেটিকে অনাপত্তি হিসেবে ধরা হতো। নতুন নির্দেশনায় এ সংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ রাখা হয়নি।
এদিকে, নতুন নির্দেশিকায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শূন্য থেকে তিন কিলোমিটার এলাকায় মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে (এএফডি) অনুরোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে ৪৫ দিনের মধ্যে এএফডি থেকে কোনো মতামত পাওয়া না গেলে অনাপত্তি হিসেবে গণ্য করে বিটিএস স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে।
আগের নীতিমালায় তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে বিজিবি, ডিজিএফআই, এএসআই এবং এএফডির কাছে অনুরোধ করার নির্দেশনা ছিল। অনুরোধের ৪৫ দিনের মধ্যে আপত্তি বা অনাপত্তি পাওয়া না গেলে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে মতামত চাওয়া হতো। এ সময়ের মধ্যে কোনো মতামত না পাওয়া গেলে সেটিকে অনাপত্তি হিসেবে গণ্য করা হতো।
নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে নিরাপত্তা সংস্থা থেকে আপত্তি বা নির্দেশনা এলে সেলুলার মোবাইল অপারেটর লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নতুন এ নির্দেশিকাকে স্বাগত জানালেও প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো। রবি অজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে টিএ ভ্যালু বা অন্যান্য প্রযুক্তিগত সূচক নির্ধারণ না করলে বিষয়টি গ্রাহককেন্দ্রিক হবে। দুঃখজনকভাবে সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন নির্দেশিকায় পাওয়া যায়নি। তাছাড়া রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকায় টাওয়ার স্থাপনে অন্য জেলার মতো অভিন্ন নীতিমালা প্রয়োগ করা অধিকতর যুক্তিযুক্ত হতো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে সীমান্তবর্তী এলাকা এবং সাধারণ এলাকায় টাওয়ার স্থাপনে নিয়মনীতিতে পার্থক্য রাখেনি। ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিটিএস স্থাপনে আলাদাভাবে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না বা সীমান্তবর্তী এলাকার বিটিএসগুলোতে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা করে ব্যবস্থা নিতে হয় না।
এএএইচ/কেএএ/