আপনি কি জানেন, ২০২৪ সালে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন?
প্রতিটি মৃত্যুর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন করেন, ‘কাছের মানুষরা যদি আরও সচেতন থাকত, তাহলে কি এই জীবনটা বাঁচানো যেত?’
নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না হলেও মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অনেক প্রাণ অকালে ঝরে যায় মানসিক সাপোর্ট ও সহানুভূতির অভাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ ডে ২০১৭-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১০,০০০-এর বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেন। বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিক বলছে, এই সংখ্যা ১০ থেকে ১৪ হাজার পর্যন্ত।
আমাদের অনেকেরই এমন কিছু অভিজ্ঞতা আছে - কেউ হয়তো বন্ধুর কাছে প্রচণ্ড হতাশামূলক কথা শুনেছেন। কেউ পরিবারের কোনো সদস্যকে দিনের পর দিন নিজের মধ্যে গুটিয়ে যেতে দেখেছেন। আবার কেউ দেখেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট, যেখানে একজন ব্যক্তি তার জীবন নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করছেন, জীবনকে শেষ করে দিতে চাচ্ছেন। সেখানে আবার তার পরিচিতরাই অনেকে নানান নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
তবে প্রতিটি ঘটনা হয়তো আত্মহত্যার মতো করুণ পরিণতির দিকে যায়নি। বেশিরভাগই নিজেকে সামলে নিয়েছেন বিভিন্নভাবে। তবে এর মধ্যেই অনেকে বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ।
একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষের চরম সংবেদনশীল মুহূর্তগুলোতে নেতিবাচক মন্তব্য তাদেরকে আরও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই একজন ব্যক্তি যখন আত্মহত্যাপ্রবণ বা সুইসাইডাল লক্ষণ প্রকাশ করে, তখন তার সঙ্গে সংবেদনশীল আচরণ করা খুব জরুরি। কারণ, আপনার একটি নেতিবাচক কথাও ওই মুহূর্তে তার জীবন ওলটপালট করে দিতে পারে। আবার একইভাবে আপনার একটি ইতিবাচক কথা তাকে ফিরিয়েও আনতে পারে।
তাই আজ (১০ সেপ্টেম্বর), আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে জেনে নিন একজন সুইসাইডাল ব্যক্তিকে কোন কথাগুলো কখনোই বলবেন না—
১. এসব নিয়ে চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে
শুনতে সান্ত্বনামূলক মনে হলেও, এই কথায় সমস্যাকে হালকাভাবে নেওয়া হয়। এতে ব্যক্তি ভাবতে পারেন, তার যন্ত্রণাকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই এই বাক্য মোটেই হতাশ ব্যক্তির সাহায্যে আসে না।
বরং তার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনি যদি তার সমস্যাটির সঙ্গে পরিচিত না হন, তাহলে মন্তব্য না করাই ভালো। সমস্যার কথা শুনে ‘এর থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই’ জাতীয় কথাও বলবেন না। অনেকসময় হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তির একজন সহানুভূতিশীল শ্রোতার প্রয়োজন হয়—সেটি হওয়ার চেষ্টা করুন।
২. এতো ছোট ব্যাপারে কষ্ট পাওয়ার কী আছে
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ (যুক্তরাষ্ট্র)–এর মতে, সমস্যার আকার ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, কারও মানসিক যন্ত্রণা তার কাছে বাস্তব এবং গভীর। এটিকে ছোট করে দেখা বিপজ্জনক।
যার যার কষ্ট, তার কাছে সর্বোচ্চ বাস্তব। তাই অন্যের পরিস্থিতিকে ছোট করে দেখবেন না।
৩. তোমার তো কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, অনেকের অবস্থা আরও খারাপ
আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন বলছে, তুলনামূলক মন্তব্য করলে মানুষ আরও বিচ্ছিন্ন বোধ করেন এবং মনে করেন, তার অনুভূতিগুলো অবৈধ।
কারো কষ্ট কমানোর জন্য তা আরও বড় কোনো ট্র্যাজেডির সঙ্গে তুলনা করলে কোনো লাভ হয় না। বরং এতে ওই ব্যক্তি নিজের কথা আপনাকে বলতে আর আগ্রহ পাবে না। এমনকি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতেও সংকোচ বোধ করবে।
৪. শুধু ভালো ভালো কথা ভাবো
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা বলছে, অবসাদগ্রস্ত বা আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষকে ইতিবাচক চিন্তা চাপিয়ে দিলে তা উল্টো চাপ বাড়ায়। বরং তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা দরকার, যেখানে তারা খোলাখুলি নিজেদের কথা বলতে পারবেন।
৫. বিদ্রুপের সুরে ‘তুমি কি আসলেই মরতে চাচ্ছো নাকি’ বলা
এই ধরনের প্রশ্ন ব্যক্তিকে আরও লজ্জিত ও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। অনেকে আবার বলেন, ‘এসব ঢং/নাটক করো না’। এই জাতীয় অপমানজনক কথা আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে আরও হতাশার দিকে নিয়ে যায়।
হতাশাগ্রস্ত ও আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় এই বিষয়গুলো মনে রাখুন।
যদি মনে হয় কেউ তাৎক্ষণিক ঝুঁকিতে আছে, তবে তাকে একা রেখে যাবেন না। বরং পরিবার, স্থানীয় জরুরি হেল্পলাইন বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ, আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, আঁচল ফাউন্ডেশন
এএমপি/জিকেএস