সুখ-দুঃখের নীরব সাক্ষী বাংলা বাজার ব্রিজ

3 months ago 19

পড়ন্ত বিকেলে বাংলা বাজার ব্রিজ যেন এক স্বপ্নিল ছবি, যেখানে স্থানীয় জনজীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের গল্প ফুটে ওঠে। স্নিগ্ধ বাতাসে ব্রিজটির সৌন্দর্য এবং প্রাণবন্ততা যে কোনো পথচারীকেই মুগ্ধ করে। ব্রিজটি কেবল দুটি থানাকে এক করেনি এটি প্রবীণদের আবেগ, ইতিহাস ও সংগ্রামের সাক্ষী।

৬৫ বছরের উর্ধ্ব স্থানীয় বাসিন্দা মুন্সি মিয়া বলেন, ব্রিটিশ আমলে ১৭০০ কিংবা ১৮০০ সালের দিকে এই ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। তখন থেকে এটি দুপাড়ে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল। পাকিস্তান শাসনামলে পাকিস্তান বাজারের নাম অনুসারে এই ব্রিজকে পাকিস্তান বাজার ব্রিজ নামেই ডাকা হতো। যা ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দুপাড়ের যোগাযোগ ব্যাহত করার লক্ষ্যে; পশ্চিম পাকিস্তানিরা ব্রিজটিকে বোমা বিস্ফোরণে ধ্বংস করে দেয়। ব্রিজের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের একটি অধ্যায়ও হারিয়ে যায়।

এরপর কেটে যায় বহু যুগ। যুদ্ধের পর বাজারের নামকরণ হয় বাংলা বাজার। কালের বিবর্তনে বাজারটি এখন আর নেই। স্থানীয় জনগণ খাল পারাপার করতেন নৌকায়। কিছুকাল আগেও পারাপারে খরচ হতো মাত্র ৫ টাকা।

অবশেষে ২০২৩ সালে ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সবাই এটিকে বাংলা বাজার ব্রিজ নামেই ডাকে। পুনঃনির্মিত ব্রিজটি চাঁদপুর মতলব দক্ষিণ থানার শেষ গ্রাম কালিকাপুর এবং কচুয়া থানার শেষ গ্রাম প্রসন্নকাপকে সংযুক্ত করেছে। দুটি থানার মানুষের হৃদয়ের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে এই ব্রিজ।

ব্রিজের দুই পাশের মানুষরা পড়ন্ত বিকালে এখানে এসে সময় কাটান। মনোরম পরিবেশ, স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় ভাসমান দোকানে ফুচকা খাওয়া, আড্ডা দেয় মানসিক প্রশান্তি। যেন সব মিলিয়ে এক জীবন্ত চিত্র।

পিকনিক কিংবা নৌ-ভ্রমণের জন্য আদর্শ ব্রিজের নিচে বয়ে চলা বজরী খাল। ছেলেমেয়েরা কাজের ফাঁকে সময় পেলেই করেন পিকনিকের আয়োজন। বিশেষ দিনে ব্রিজটি হয়ে ওঠে মেলার মতো আরো প্রফুল্ল। স্থানীয় জনগণ সহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ব্রিজ।

বাংলা বাজার ব্রিজ শুধু একটি সেতু নয়, এটি দুই থানার মানুষের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, দুটি থানার মিলনস্থল, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সেতুবন্ধন।

কেএসকে/জেআইএম

Read Entire Article