পশ্চিম সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন নদী থেকে মুক্তিপণের দাবিতে ১৫ জন জেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। সোমবার (২৫ আগস্ট) থেকে বুধবার (২৭ আগস্ট) পর্যন্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী থেকে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে।
অপহৃতদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় জানা গেছে, বাকিদের পরিচয় এখনো মেলেনি। এ ঘটনায় সুন্দরবন অঞ্চলে নতুন করে বনদস্যু বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
অপহৃত জেলেরা হলেন, পার্শেখালি এলাকার ছাকাত সরদারের ছেলে ইব্রাহীম সর্দার, গফুর গাজীর ছেলে আব্দুল হাকিম, সুজন মুন্ডার ছেলে সুজিত মুন্ডা, কালিঞ্চি এলাকার বোরহান গাজীর ছেলে সাত্তার গজী, কেনা গাজীর ছেলে আকিনুর, কৈখালীর আইনাল গাজীর ছেলে বুলবুল গাজী এবং রমজাননগরে তারানীপুর গ্রামের কাদের হোসেনর ছেলে আরাফাত হোসেন।
ফিরে আসা জেলে ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, অপহৃত জেলেরা সুন্দরবনের দাড়গাং নদী সংলগ্ন খালে নৌকা ও জালদড়া মেরামতের কাজ করছিলেন। এ সময় ছয়/সাতজনের একটি বনদস্যু দল দুই দফায় হামলা চালিয়ে চারটি নৌকা থেকে চারজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এছাড়া, হোগল ডোকরা খাল ও কালির খাল থেকে আরও তিনজনকে অপহরণ করা হয়।
৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা জেলে সুজন মুন্ডা জানান, ‘সুন্দরবনে মুন্না বাহিনী’ নামে একটি নতুন বনদস্যু বাহিনী আত্মপ্রকাশ করেছে এবং তারাই এসব জেলেকে অপহরণ করেছে। এই বাহিনী অপহৃতদের জন্য মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করছে।
সুজন মুন্ডা আরও বলেন, তারা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী থেকে আমার ছেলেসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে অপহরণ করেছে। তবে সবার নাম আমি বলতে পারব না। ওই বাহিনীতে আমি ৬ জনকে দেখেছি। যারা সবাই নতুন ও ভারতীয় বাসিন্দা বলে আমি ধারণা করছি। তাদের কাছে একাধিক অস্ত্র রয়েছে।
রমজাননগর ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লালটু অভিযোগ করেছেন, বনদস্যুদের স্থানীয় সহযোগীরা ৩-৪ দিন আগে ২৫-৩০ হাজার টাকার কাঁচামাল বাজার সদয় করে সুন্দরবনে পাঠিয়েছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. ফজলুল হক জানান, বর্তমানে সুন্দরবনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে, কয়েকজন জেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে তিনি লোকমুখে শুনেছেন।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির মোল্লা জানিয়েছেন, জেলে অপহরণের তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
এ ঘটনায় সুন্দরবন অঞ্চলে জেলেদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এবং বনদস্যুদের দৌরাত্ম্য বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠেছে। একই সাথে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে দ্রুত সুন্দরবনের গহীনে অভিযান চালানোর দাবি উঠেছে।
আহসানুর রহমান রাজীব/এমআরএম