সুবাহদার শব্দের উৎপত্তি, বিকাশ ও শাসনামল

3 hours ago 5

সুবেদার মূলত মুঘল সাম্রাজ্যের একজন প্রবীণ আধিকারিকের সঙ্গে সম্পর্কিত যা একটি নির্ধারিত ‘সুবাহ’ (প্রদেশ) শাসন করে ঐতিহাসিক নাগরিক বা সামরিক পদমর্যাদার। ভারতের ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ‘সুবাদার’ হল একজন ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাকে অধিনায়কের সমতুল্য পদমর্যাদার এক পদবী দেওয়া হয়েছিল। দেশ মুঘল সাম্রাজ্য ভারত পাকিস্তান মুঘল মারাঠা যুদ্ধ মুঘল সাম্রাজ্য জড়িত যুদ্ধ। 

সুবেদার অন্য উচ্চারণ, (সুবাদার, সুবাহদার, সুবেহ দার) বলতে মুঘল আমলে যেকোনো সুবাই তথা প্রদেশের প্রশাসক বা গভর্নর কে বোঝানো হতো। সুবাহ দারকে নাজিম সাহিব ই সুবাহ, ফৌজদারি ই সুবাহ ইত্যাদি নামে ও অভিহিত করা হয়। 

সূত্র অনুসারে, সুবাদার আউলিয়া খান ছিলেন বাংলার খলজি রাজবংশ (১২০৪-১২৩১) এর একজন বিখ্যাত এবং বিশ্বস্ত সুবাদার যার উপাধি সাহেব ই সুবাহ ছিল। সুবাদার আউলিয়া খান সাহেব মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির পরম বন্ধু। পরবর্তীকালে বাংলা বিজয়ের সময় সুবাদার আউলিয়া খান তার সহযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করেছিলেন। তার পূর্বপুরুষ অঘুয তুর্কি কায়ি গোষ্ঠীর বেই এর বংশধর ছিলেন। ইসলামের সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য দ্য গ্রেট সেলযুক সাম্রাজ্যের বিস্তারের সময় এ অঞ্চলে আসেন এবং আফগানিস্তানের গর্মশিরে খলজি গোষ্ঠীতে আশ্রয় নেন। 

বর্তমানে মহান সুবাদার আউলিয়া খানের বংশধররা প্রায় নয়শত বছর ধরে বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার ফুলুদী গ্রামে বসবাস করেছেন এবং সুবাহদার আউলিয়া খানের বংশধর মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ খান আব্দু মিয়া ছিলেন ভাওয়াল এস্টেটের একমাত্র সুন্নি মুসলিম জমিদার। সুবাহাদার ফার্সি শব্দ এর শাব্দিক অর্থ সুবাহ এর অধিকারী কে সুবাহদার বলা হয়। কখনো কখনো সিপাহীদের অধিনায়ক বোঝাতেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

মোগল আমলে সমগ্র দেশকে কয়েকটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করে শাসন কার্য পরিচালনা করা হতো। এসব প্রশাসনিক অঞ্চল কে বলা হতো সুবাহ সাধারণত উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা এবং শাহজাদাদের বা রাজবংশের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সুবাদার নিয়োগ রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আঞ্চলিক পর্যায়ে মাধ্যমিক কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় আনুগত্য নিষেধ করা হয় একজন সুবাদার তার অধীনে থাকা সুবাহ তথা প্রদেশে মোগল বাদশাহর পক্ষ থেকে সর্বময় ক্ষমতা লাভ করেন। পদধিকার বলে তিনি একই সঙ্গে সামরিক ও বেসামরিক বিভাগের প্রধানের ক্ষমতা লাভ করেন। 

কেন্দ্রের সমস্ত আদেশ সুবাদার আঞ্চলিক পর্যায়ে বাস্তবায়ন করে থাকেন কোনো অঞ্চলের বিদ্রোহ দেখা দিলে তা দমন করার ক্ষমতা সুবাদারের থাকে। সুবাদারের অধীনে দেওয়ান, বকশি, ফৌজদার, কোতোয়াল, কাজী, সাদর, ওয়াকা-ই-নাভিস, পাটোয়ারী, ইত্যাদি পদাধিকারী কাজ করেন। বাদশা চাইলেই কোন সুবাহদারকে পদচ্যুত করতে পারতেন। কোনো সুবাদার বিদ্রোহ করলে যুদ্ধের মাধ্যমে তাকে পরাজিত করা হতো, ১৮৫৮ অবধি সুবেদার রা প্রতিটি কাঁধে দুটি ছোট বুলিয়ান ফ্রিঞ্জসহ দুটি এপোলেট পড়তেন। 

১৮৫৮ এরপরে তারা দুই অতিক্রম সুবর্ণ তলোয়ার পড়তেন। বা এ গুর্খা রেজিমেন্ট, দুই সুবর্ণ অতিক্রম নিমা এর কলার প্রতিটি পাশ দিয়ে বা ডান বুকে কুর্তা। ১৯০০ এরপরে সুবেদার রা প্রতিটি কাঁধে দুই পিপস পড়েছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রতিটি পিপের নিচে একটি লাল হলুদ লাল ফিতা চালু করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই ফিতাটি কাদের শিরোনাম এবং র‍্যাঙ্ক প্রতীক (উভয় কাঁধে দুটি ব্রাশ তারকা) ব্রিটিশ শাসনের সময়কালে, সুবেদার এবং অন্যান্য ভিসিয়ারা স্বতন্ত্র ইউনিফর্ম পরিধান করতেন যা ব্রিটিশ এবং ভারতীয় উভয় সামরিক পোশাকের সমন্বিত বৈশিষ্ট্য ছিল। সব তিনটি থেকে মারাঠা সাম্রাজ্যের ব্রাহ্মণ ইন সুবেদার এবং পাহাড় দুর্গ কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। 

শিবাজী এবং তার দুই পুত্রের সময়ে দেশস্ত ব্রাহ্মণরা ছিল প্রধান ভারতীয় মারাঠা প্রভাবশালী দল। মারাঠা কনফেডারেসির অধীনে সুবেদাররা পেশায়া সেনাপরিদের কাছে জবাবদিহি করেছিলেন। নিজামের অধীনে রাজপুত্র রাজ্যে বাহিদারাবাদের প্রশাসক এবং কর আদায়কারীদের শীর্ষ পদক্ষে সুবেদার বলা হত যদিও তারা সরাসরি নিজামের প্রতি দায়বদ্ধ ছিল। তারা দিল্লির মুঘলের প্রতিও কিছুটা দায়িত্ব নিয়েছিল। সুবাহ বাংলার শুভদারদের তালিকা মুঘল আমলে সমগ্র দেশকে কয়েকটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করে শাসন কার্য পরিচালনা করা হতো। এসব প্রশাসনিক অঞ্চল কে বলা হতো সুবাহ, যেকোনো সুবাহ তথা প্রদেশের প্রশাসক বা গভর্নরকে সুবাহদার বলা হত। 

সাধারণত উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা সেনা কর্মকর্তা এবং শাহাজাদাদের বা রাজবংশের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সুবাদার হাদার হিসেবে নিযুক্ত করে পাঠানো হতো। মোগল সাম্রাজ্যের আমলে বর্তমানের বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ওড়িশা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে সুবাহ বাংলা গঠন করা হয়েছিল। 

শুভ বাংলায় সুবাহদার হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি এসে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তারা হলেন- (মুনিম খান খান ই খানান -২৫ সেপ্টেম্বর ১৫৭৪- ২৩ অক্টোবর ১৫৭৫)। (হোসেন কুলি বেগ খান জাহান ১-১৫ নভেম্বর -১৯ ডিসেম্বর ১৫৭৮)। (মুজাফফর খান তুর বারি-১৫৭৯ -১৫৮০)। (মির্জা আজিজ কোকা খান ই আজম-১৫৮২-১৫৮৩)। (শাহবাজ খান কাম বোহ- ১৫৮৩- ১৫৮৫)। (সাদিক খান-১৫৮৫- ১৫৮৬)। (ওয়াজির খান তাজওক-১৫৮৬-১৫৮৭)। (সাঈদ খান-১৫৮৭-১৫৯৪)। রাজা মানসিংহ ১-৪ জুন ১৫৯৪-১৬০৬)। (কুতুবুদ্দিন কোকা-২ সেপ্টেম্বর-মে ১৬০৭)। (জাহাঙ্গীর কুলি বেগ-১৬০৭-১৬০৮)। (ইসলাম খাঁ ১ ইসলাম খান চিশতী-১৬১৩-১৬১৭)। ( ইব্রাহিম খান ফাতেহ জং-১৬১৭-১৬২২)। (মোহাবাত খান-১৬২২-১৬২৫)। (মির্জা আমানুল্লাহ খান জামানহ-১৬২৫)। (মোকাররম খান-১৬২৫-১৬২৭)। (ফিদাই খান-১৬২৭-১৬২৮)। (কাসিম খান জুইনি কাসেম মনিজা-১৬২৮-১৬৩২)। (মীর মোহাম্মদ বাকির আজম খান-১৬৩২-১৬৩৫)।‌

Read Entire Article