সুযোগ পেয়েও ইমনের মেডিকেলে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত

12 hours ago 5

চলতি শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার ছেলে ইমন কাজী। তবে ভর্তির টাকা জোগাড় ও পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার খরচ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তিনি। অভাব-অনটনের সংসারে ছেলে আনন্দের সংবাদ নিয়ে এলেও মা-বাবার কপালে চিন্তার ভাঁজ। 

২৭৩৪ মেধাক্রম উত্তীর্ণ হওয়া ইমন কাজী (১৮) উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বেড়াখলা এলাকার দিনমজুর কাজী মনিরুল ইসলামের ছেলে। তিনি দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। 

জানা গেছে, ইমন কাজী উপজেলার পুমকারা সিদ্দিকুর রহমান এন্ড হাকিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ ও পার্শ্ববর্তী বুড়িচং উপজেলার পারুয়ারা আবদুল মতিন খসরু কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বিগত দিনে তার পড়াশোনায় স্থানীয় সংগঠন ‘আমরা এলাকাবাসী’ ও স্থানীয় কিছু লোকজন তাকে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করেছে। সম্প্রতি তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে পারিবারের দৈন্যদশার কারণে অর্থাভাবে মেডিকেল ভর্তি ও পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার খরচ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তিনি। 

ইমন কাজী বলেন, আমি হতদরিদ্র দিনমজুর বাবার সন্তান। কষ্ট করে পড়াশোনা করে এ পর্যন্ত এসেছি। মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি, পাশাপাশি ভর্তির অনিশ্চয়তায় ভুগছি। মেডিকেলে ভর্তি, বইখাতাসহ আনুষঙ্গিক কাজ ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনেক টাকার দরকার। আমার দিনমজুর বাবার পক্ষে এ ভার নেওয়া সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে আমি যদি ডাক্তার হতে পারি তবে আমার স্বপ্ন মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকব। অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের পাশে সাহায্য হয়ে দাঁড়াব। আমি সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন আমার মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। 

মা মাসুদা বেগম বলেন, আমাদের জায়গাজমি নেই। আমার বাবার ভিটায় একটি ভাঙাচোরা একচালা টিনের ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে কোনোমতে বসবাস করছি। আমরা দিনে আনি দিনে খাই। আমাদের কোনো সঞ্চয় নেই। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছি। এখন আমার ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। তাকে মেডিকেল পড়ানোর তৌফিক আমাদের নেই। এ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। যদি সমাজের হৃদয়বানরা এগিয়ে আসে আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হবে। আমি আমার ছেলের জন্য সকলের কাছে সাহায্য চাইছি যেন আমার ছেলে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে এবং মানুষের সেবা করতে পারে।

শিদলাই ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম আলাউল আকবর কালবেলাকে বলেন, ইমন কাজী ব্রাহ্মণপাড়া তথা শিদলাই ইউনিয়নের গর্ব। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় আমি তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। ইমন কাজীর পারিবারিক অবস্থা খুবই নাজুক। ওর বাবা দিনমজুর। বসবাসের জন্য তাদের একটি ভালো ঘরও নেই। তবে তার মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার বিষয়ে শিদলাই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ও আমি নিজে তাকে সহযোগিতা করব। আমি সমাজের বিত্তবানদের প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি মেধাবী ইমন কাজীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য। 

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মাহমুদা জাহান কালবেলাকে বলেন, আমি ইমন কাজীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গর্ব। আমি জানতে পেরেছি সে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার মেডিকেলে ভর্তি ও অন্যান্য বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে।

 

Read Entire Article