সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ভুয়া নথি দেখিয়ে ২ অসহায় পরিবারের জমি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠে সেটেলমেন্ট অফিসার মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। তিনি খুলনা সদর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (হেডকোয়ার্টার) ও শ্যামনগরের এসও। এ ব্যাপারে গত ১৬ মার্চ কালবেলার অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। জাকিরের দেওয়া ভুয়া রায় বাতিল চেয়ে আবেদন করেছেন খুলনা জোনাল কর্তৃপক্ষ।
খুলনা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ও চার্জ অফিসার শুভ্রা দাস স্বাক্ষরিত একটি পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। পরিচালক ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর বরাবর ৩১.০৩,০০০০,৬৫১.০৪.০৮২.২৫-৪৬৮ স্মারকে প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর ৪২(ক) বিধিমতে রুজুকৃত ১১৪৪/২০২৪ ও ১৬৪৯/২০২৪নং মিস মামলার রায় বাতিল চেয়ে এ পত্র প্রেরণ পাঠানো হয়।
জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার ভৈরব নগরের মৃত জরিপ গাজির ছেলে বাহার আলী গাজি কর্তৃক তিনি ও তার স্ত্রী বাদী হিসেবে শ্যামনগর উপজেলাধীন ৭৮নং ভৈরব নগর মৌজার ৩৪৪৬৪/০৮ ও ১৪৪০২/০২নং আপিল কেসের রায়ের বিরুদ্ধে (ডিপি খতিয়ান নং ১৪১৬ ও ১২২৭) প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর ৪২(ক) বিধিমতে মিস মামলার আবেদন করেন। ওই আবেদনপত্রের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ২০২৪ সালের ২৮ এপ্রিল তারিখে মিস কেস রুজু করার নির্দেশনা দেন। সে মোতাবেক আবেদনের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রারে ১১৪৪/২৪নং মিস মামলা এন্ট্রি করা হয়।
মামলার মূল নথিতে দেখা যায়, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার কর্তৃক ওই মিস মামলা শুনানির জন্য কোনো তারিখ ধার্য করা হয়নি। উক্ত বাহার আলী গাজিসহ মোট ৬ আবেদনকারী একই মৌজার ৫টি ডিপি খতিয়ান-১৪৭৯, ৬৬৫, ৪৪২, ১০৯৫ ও ১২২৭ রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করায় ১১৪৪/২৪নং মিস মামলা রুজু করা হয় এবং ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে মিস মামলাটির শুনানিপূর্বক আপোষনামা মূলে নালিশ খতিয়ানের রেকর্ড সংশোধনের আদেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ১১৪৪/২৪নং মিস মামলার রায়ে উল্লেখিত ৫টি ডিপি খতিয়ানের মধ্যে ১৪৭৯, ৪৪২ ও ১০৯৫নং ডিপি খতিয়ান তিনটি ১০১১/২৪ ও ১০১২/২৪নং মিস মামলার অন্তর্ভুক্ত, মামলা দুটি জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার যশোর কোর্টে বিচারাধীন আছে, যা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার কর্তৃক বর্ণিত মিস মামলার রায় প্রদান করেননি। অথচ মামলার নথি যশোরে থাকা এবং খুলনা জোনাল অফিসারের বদলির সুযোগ কাজে লাগিয়ে শ্যামনগরের এসও জাকির হোসেন ১১৪৪/২৪নং মিস কেসের মঞ্জুর আদেশ সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে তামিল করেন। বাদীপক্ষের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচের মাধ্যমে গোপনে অবৈধ পন্থায় জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত ওই মামলার রায় দিয়েছেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে নজরে আসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। আর এরই প্রেক্ষিতে উক্ত ভুয়া রায় বাতিলের জন্য লিখিতপত্র পাঠিয়েছেন খুলনা জোনাল কর্মকর্তা। তবে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। তার এসব কাজের সহযোগী শ্যামনগরের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পেশকার রণজিৎ কুমার সূত্রধর। এই সিন্ডিকেট মিলে মাঠ পর্যায়ে বিগত আমলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ও চার্জ অফিসার শুভ্রা দাস জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে আসায় সংশোধনের জন্য লিখিতভাবে পরিচালক ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করি ভুয়া রায় বাতিল হবে।