- ৪-৫ মাসজুড়ে দৈনিক ৫ হাজার পর্যটক চান ব্যবসায়ীরা
- গত বছর পর্যটক না পেয়ে এ বছর প্রস্তুতি শুরু হয়নি
- সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা
দরজায় কড়া নাড়ছে পর্যটন মৌসুম। ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে শুরু হবে এবারের পর্যটনের পথচলা। সেই লক্ষ্যে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস প্রস্তুতি শেষ করলেও দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে নেই কোনো প্রস্তুতি। গত বছর স্বল্প সময়ে সীমিত সংখ্যক পর্যটক পেয়ে জীবন ধারণের ব্যয় তুলতে না পারায় সামনের দিনে কী হবে এ নিয়ে দ্বীপজুড়ে হতাশা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস শুরু হলেই হোটেল-রিসোর্ট ও শুঁটকি-কাঁচা মাছ ব্যবসায়ীসহ পর্যটকসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার শুরু করে। কিন্তু গত মৌসুমে ক্ষতির মুখে পড়ায় এবার হোটেল-রিসোর্ট সংস্কার কিংবা পর্যটকদের সেবায় কর্মকর্তা- কর্মচারী রাখা চূড়ান্ত করেনি। গত বছর পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারি বিধিনিষেধের কারণে ভরা পর্যটন মৌসুমে মাত্র দু’মাস পর্যটকরা দ্বীপে ভ্রমণের সুযোগ পান। তাও আবার দৈনিক দু’হাজার করে। এবার এখনো পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল অথবা পর্যটকরা ভ্রমণে যাবে কি না বা কী পরিমাণ পর্যটক যেতে পারবে তা নিয়ে কোনো বার্তা নেই কারো কাছে।
স্থানীয়রা আরও বলেন, গত দু’দশক ধরে সেন্টমার্টিনের দু’তৃতীয়াংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। পযর্টকরা দ্বীপে গেলে চার-পাঁচ মাসের আয় দিয়ে পুরো বছর তাদের ঘর-সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চলে। এটি মাথায় রেখে শুরু হতে যাওয়া পর্যটন মৌসুমে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার পাশাপাশি পর্যটকরা চার-পাঁচ মাস ও দিনে পাঁচ হাজার পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণে যাওয়ার অনুমতি পেলে পর্যটন নির্ভর মানুষের দুঃখ দুর্দশা অনেকটা কেটে যাবে।
সেন্টমার্টিন মারমেইড রিসোর্টের দায়িত্বে থাকা তৈয়ব উল্লাহ বলেন, প্রতিবছর এ সময়টা আমাদের নানান ব্যস্ততার মধ্যে যায়। হোটেল রিসোর্ট সংস্কার, রঙ করা ও নানান প্রস্তুতিতে উৎসবের আমেজ থাকতো। এবার সেটা নেই। অনিশ্চয়তা জেঁকে বসেছে সবার মাঝে। অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে নিজের চেয়ে বেশি যত্ন করা হোটেল রিসোর্টগুলো।
সেন্টমার্টিন হোটেল রিসোর্ট ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিবলী আজম কোরেশি বলেন, কখন সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকরা আসবেন, পযর্টকবাহী জাহাজ কখন বা কোথা থেকে চালু হবে, কী পরিমাণ পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণে আসতে পারে তার বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সরকারি বিধিনিষেধের কারণে গত বছর প্রতিদিন দু’হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পেরেছে। সময় ছিল দু’মাস। এখনো সেটা বহাল আছে কি না সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
আরও পড়ুন-
ঢেউয়ের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত সেন্টমার্টিন, বেড়িবাঁধ চান বাসিন্দারা
সেন্টমার্টিন রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে: পরিবেশ উপদেষ্টা
পর্যটকশূন্য সেন্টমার্টিনে ফিরছে প্রকৃতির আসল রূপ
আবদুল মালেক নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমরা সরকারকে উদ্দেশ্য করো বলতে চাই, সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন ৫ হাজার করে পর্যটক ভ্রমণের সুযোগ করে দিলে পর্যটকনির্ভর দ্বীপের মানুষের দুঃখ দুর্দশা কেটে যাবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, দ্বীপের দু’তৃতীয়াংশ মানুষ পর্যটকনির্ভর ব্যবসা বাণিজ্য ও কাজ কর্মের মাধ্যমে ৪-৫ মাস যা আয় করে, সেটা দিয়ে পুরো বছর সংসার চালায়। কিন্তু গত বছর যে দু’মাস পর্যটক এসেছে তা খুব সীমিত। এবার যাতে ৪-৫ মাস পর্যটক দ্বীপে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করা হলে দ্বীপের মানুষের কষ্ট দূর হবে।
জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, আমি নতুন এসেছি, গত বছরের সিদ্ধান্ত মিডিয়ার মাধ্যমে অবগত হয়েছিলাম। কিন্তু এবারের সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। তবে সিদ্ধান্ত না এলে গতবছরের মতোই পর্যটক পরিবহন হবে। আর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন ও পর্যটক সেবায় প্রস্তুত রয়েছে পর্যটনসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো।
অপরদিকে কক্সবাজারের পর্যটন জোনের কলাতলী ও আশপাশের কয়েকশ হোটেল পর্যটক সেবা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর থেকে কক্সবাজারে সারাবছরই কমবেশি পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। এ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক মৌসুমের জন্য নতুন করে তোড়জোড় নেই বলে দাবি করেছেন কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, এখম সারাবছরই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে কক্সবাজার সৈকত। দিবারাত্রি সমানে বেলাভূমি ও পর্যটন এলাকায় পুলিশি টহল থাকে। বিশ্ব পর্যটন দিবস ও তার পরে নিরাপত্তা বলয় আরও জোরদার করে সবার আনন্দ ভ্রমণ নিশ্চিতে প্রচেষ্টা থাকবে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সম্ভাবনার পর্যটন শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। অতীতের চেয়ে সামনের পর্যটন মৌসুম আরও আশান্বিত করবে বলে এগুচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পরিবেশ সমুন্নত রেখে সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পর্যটক সমাগম বাড়ুক। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সেবায় পর্যটন মৌসুম তার নিজস্ব স্বকীয়তা ফিরে পাবে সেটাই কাম্য।
এফএ/এএসএম