সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কমাবেন যেভাবে

1 month ago 10

সকালে ঘুম ভাঙার পর কমবেশি সবাই যে কাজটি করেন তা হচ্ছে ফোনটাকে হাতে নেওয়া। অনেকের এটি সময় দেখা বা এলার্ম বন্ধ করার জন্য হতে পারে। তবে অনেকেই এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু ঢুঁ মারেন। তবে এতে যে কখন ঘণ্টাখানিক সময় পেরিয়ে গেছে টেরই পান না।

এরপর দিনে পড়া কিংবা অফিসের কাজের মাঝে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম স্ক্রোল করা, নোটিফিকেশন চেক করা তো আছেই। এরপর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এসব প্ল্যাটফর্মে চ্যাট, পোস্ট করা, রিলস দেখা। তরুণ প্রজন্মের (জেনজি) মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সর্বোচ্চ।

১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের গড় সময় দাঁড়ায় প্রায় ৩ ঘণ্টা/দিন। গবেষণা আরও বলছে, নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করেন, যা প্রায় ১০-২০ মিনিট অতিরিক্ত।

মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন, যা বিশ্বব্যাপী ৫.২৪-৫.৪২ বিলিয়ন ব্যবহারকারী হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া অনেকের জন্য যোগাযোগ, তথ্য আহরণ এবং আত্মপ্রকাশের মাধ্যম। তবে গবেষকরা সতর্ক করছেন, অতিমাত্রায় ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যারা বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেছেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার অবস্থা খারাপ হয়েছে, যেমন ভবিষ্যতের বিষয়ে নেতিবাচক অনুভূতি, জীবনের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এবং একাকী বোধ করা।

বিশেষ করে কিশোরদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে বিষণ্নতা, নিদ্রাহীনতা ও আত্মমূল্যহীনতা সংক্রান্ত সমস্যা, যা অনেকাংশে সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহারের ফল।

আপনি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করেন তখন প্রতি মুহূর্তে কিছু না কিছু নতুন জিনিস দেখতে পান-যা আপনার মস্তিষ্কে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করে। এই উত্তেজনার ফলে মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। ডোপামিন হল এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার, যা আমাদের আনন্দ ও তৃপ্তির অনুভূতি দেয়। এটি কেউ নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ করে তখনও নিঃসরণ হয়।

সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কমানো বা একেবারে কমানো খুবই কঠিন। তবে চেষ্টা করলে অবশ্যই পারবেন। কয়েকটি উপায় জেনে নিন-

ডিজিটাল ডিটক্স দিয়ে শুরু করুন
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে হঠাৎ পুরোপুরি দূরে থাকা সহজ নয়। তাই শুরু করুন সপ্তাহে একদিন পুরোপুরি সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ রেখে। ধীরে ধীরে দুইদিন, তিনদিন এভাবে সময় বাড়ান। প্রথমে একটু কঠিন মনে হলেও ধীরে ধীরে এটা অভ্যাসে পরিণত হবে। আপনার মস্তিষ্ক ও মন বিশ্রাম পাবে। কয়েক মাস পর আপনি নিজেই অনুভব করবেন যে জীবন কেবল সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয় তা হলে সোশ্যাল মিডিয়ার সব অ্যাপ ডিলিট করে দিন।

নোটিফিকেশন বন্ধ করুন
ডিজিটাল ডিটক্স শুরু করার পর দ্বিতীয় ধাপে আপনার উচিত, ফোনের সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশন বন্ধ করা। প্রায়ই দেখা যায়, ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসলে আমরা সেটা দেখতে গিয়ে পুরো সোশ্যাল মিডিয়ার জালে আটকে পড়ি। এই ফাঁদ থেকে বাঁচতে ফোনের নোটিফিকেশন অফ করে দিন অথবা সাইলেন্ট মোডে রাখুন।

নির্দিষ্ট সময় ধরে ফোন ব্যবহার করুন
যদি আপনি একেবারে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়তে না পারেন, তাহলে ব্যবহারের একটা সীমা নির্ধারণ করুন। আপনার ফোন বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোর জন্য প্রতিদিন কতটা সময় ব্যবহার করবেন, তা নির্ধারিত করে দিন। স্মার্টফোনে স্ক্রিন টাইম বা অ্যাপ লিমিট ফিচার থাকে। এই ফিচার অন করে আপনি দেখতে পারবেন, কোন অ্যাপে আপনি কত সময় দিচ্ছেন। তাতে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সহজ হবে।

অন্য অ্যাকটিভিটিতে ব্যস্ত থাকুন
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকতে হলে বাস্তব জীবনে কিছু রিয়েল অ্যাকটিভিটিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। যেমন: বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, গার্ডেনিং, মিউজিক, ডান্স বা আঁকাআঁকি শিখুন, হাঁটতে বেরোন বা জিমে ভর্তি হন, কোনো স্পোর্টস অ্যাকটিভিটিতে অংশ নিন। নিজেকে এমনভাবে ব্যস্ত রাখুন যাতে সোশ্যাল মিডিয়া চালানোর প্রয়োজনটাই আর মনে না হয়।

কেএসকে/এএসএম

Read Entire Article