সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ বাংলাদেশি নিহত, বাড়িতে শোকের মাতম

3 months ago 37

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন বাংলাদেশির বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। প্রিয়জনকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় দেশটির আপিপ থেকে নির্মাণ কাজে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় চাঁদপুরের সবুজ চৌকিদার (৩৮), মো. সাব্বির (২১) ও মো. রিফাত (২০) নামে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

নিহত শ্রমিকদের মধ্যে সবুজ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চর দু:খিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পশ্চিম বিশকাটালি গ্রামের জামাল চৌকিদারের ছেলে। অপর নিহত সাব্বির পার্শ্ববর্তী হাইমচর উপজেলার আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙা গ্রামের সৈয়াল বাড়ীর মো. ইসমাইল সৈয়ালের ছেলে এবং রিফাত আলগী উত্তর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।

সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ বাংলাদেশি নিহত, বাড়িতে শোকের মাতম

নিহত তিন শ্রমিকের বাড়িতে দেখা গেছে শোকের মাতম। আকস্মিক এই মৃত্যু সহ্য করতে পারছেন না মা-বাবাসহ পরিবারের লোকজন। শোকে বাবা-মা এখন শুধুই ছেলের স্মৃতির কথা বলছেন। ঈদুল আজহা আসন্ন সময়ে এমন দুর্ঘটনা প্রত্যেক পরিবারের হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

কমলাপুর গ্রামের রিফাত মাত্র ৩ বছর আগে যান সৌদি। ভবন নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তার বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগেও ছেলের সাথে কথা হয়েছে। বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছেলের। কিন্তু তা আর হলো না।

রিফাতের প্রতিবেশী আল-আমিন খান বলেন, রিফাত খুবই কমবয়সী। এমন দুর্ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা নেই। অল্প বয়সে ছেলেটি তাদের সংসারের উপার্জনের হাল ধরেছিল।

নিহত সাব্বিরের বাবা ইসমাইল সৈয়াল ও মা ফাতেমা বেগমের একটাই দাবি তাদের সন্তানকে দেশে আনার জন্য সরকারিভাবে যেন সহযোগিতা করা হয়। সাব্বিরের মা ফাতেমা বেগম ছেলের শোকে কথাও বলতে পারছে না। অনেকটা বাকরুদ্ধ। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিয়েও মাকে বোঝাতে পারছেন না। কিছু সময় পরপর ছেলের নাম নিয়ে কেঁদে উঠেন।

সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ বাংলাদেশি নিহত, বাড়িতে শোকের মাতম

সাব্বিরের ছোট বোন স্নেহা বলেন, ভাই আমাকে ফোনে অনেক স্বপ্ন দেখাতেন। আমাকে নিয়ে ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। দেশে আসলে কী করবেন। গত কয়েকদিন আগে কথা হলে আমি দেশে আসার জন্য বলি। কিন্তু ভাইয়ের আর আসা হলো না। দুই ভাইয়ের মধ্যে আমি ছোট। বড় ভাইও সৌদিতে থাকেন।

সাব্বির আর রিফাতকে সৌদিতে কাজের জন্য নেন সবুজ চৌকিদার। তিনি তাদের নিয়ে আপিপ শহর ও আশপাশের এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ করতেন। নিজেদের গাড়িতে তারা কাজে আসা-যাওয়া করতেন। গাড়ির চালক ছিলেন সবুজ। দুর্ঘটনার সময়ও গাড়ির চালক ছিলেন সবুজ জানালেন তার পিতা জামাল চৌকিদার।

আরও পড়ুন

জামাল চৌকিদার বলেন, তার ছেলে সবুজ প্রায় ১৮ বছর ধরে সৌদিতে থাকেন। বেশ কয়েকবার দেশে এসেছেন। তার স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান আছে। তাদেরও ভ্রমণ ভিসায় কয়েকবার সৌদিতে নিয়েছেন। সর্বশেষ গত দুই সপ্তাহ আগে দেশ থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের সৌদিতে নিয়েছেন। তারা এখন সৌদি আছেন।

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ বাংলাদেশিসৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ বাংলাদেশি

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় ৪টায় সবুজসহ ৩ জনের দুর্ঘটনার খবর পান। রাত ১০টায় সেখানে অবস্থানরত স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারেন দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে সবুজের মৃত্যুতে তার মা ও স্বজনরা শোকাহত। সবুজের বাবা বলেন, আমি আমার ছেলেকে নিজ চোখে এবং একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই। এই তিন পরিবারের দাবি- তাদের সন্তানদের মরদেহ আনার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যেন সহযোগিতা করে।

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা জানান, সৌদিতে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি। তবে জানালে তাদের জন্য যেসব করণীয় আছে, আমরা তাদের সবধরনের সহযোগিতা করবো।

শরীফুল ইসলাম/এমআরএম/এএসএম

Read Entire Article