স্টারমারের নতুন অভিবাসন পরিকল্পনা, যুক্তরাজ্য ছাড়তে পারেন ৫০ হাজার নার্স

যুক্তরাজ্যের নতুন অভিবাসন পরিকল্পনা কার্যকর হলে দেশটি ছাড়তে পারেন প্রায় ৫০ হাজার নার্স। এমনই শঙ্কা দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক এক জরিপে। এতে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস) পড়তে পারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জনবল সংকটে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার অভিবাসন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী, অভিবাসীদের যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে থাকার আবেদন করতে অপেক্ষা করতে হতে পারে ১০ বছর, যা বর্তমানে পাঁচ বছরেই পাওয়া যায়। এছাড়া বিদেশি কর্মীদের দক্ষতার মান বাড়িয়ে ডিগ্রি পর্যায়ে নেওয়া ও সব ধরনের ভিসা, এমনকি ডিপেনডেন্টদের (সঙ্গী) ক্ষেত্রেও ইংরেজি ভাষার মানদণ্ড কঠোর করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো ‘রিফর্ম ইউকে’র নেতা নাইজেল ফারাজের উত্থান ঠেকানোর রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। নার্সিং নেতাদের ক্ষোভ ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে নার্সিং নেতারা বলেছেন, এই পরিকল্পনা ‘অমানবিক’ ও দক্ষ নার্সদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, বহু নার্স দেশ ছেড়ে গেলে স্বাস্থ্যখাত বিরাট হুমকিতে পড়বে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যখাত এরই মধ্যে কর্মী সংকট ও চাহিদা বৃদ্ধির চাপে নাজুক

স্টারমারের নতুন অভিবাসন পরিকল্পনা, যুক্তরাজ্য ছাড়তে পারেন ৫০ হাজার নার্স

যুক্তরাজ্যের নতুন অভিবাসন পরিকল্পনা কার্যকর হলে দেশটি ছাড়তে পারেন প্রায় ৫০ হাজার নার্স। এমনই শঙ্কা দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক এক জরিপে। এতে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস) পড়তে পারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জনবল সংকটে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার অভিবাসন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী, অভিবাসীদের যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে থাকার আবেদন করতে অপেক্ষা করতে হতে পারে ১০ বছর, যা বর্তমানে পাঁচ বছরেই পাওয়া যায়।

এছাড়া বিদেশি কর্মীদের দক্ষতার মান বাড়িয়ে ডিগ্রি পর্যায়ে নেওয়া ও সব ধরনের ভিসা, এমনকি ডিপেনডেন্টদের (সঙ্গী) ক্ষেত্রেও ইংরেজি ভাষার মানদণ্ড কঠোর করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো ‘রিফর্ম ইউকে’র নেতা নাইজেল ফারাজের উত্থান ঠেকানোর রাজনৈতিক প্রচেষ্টা।

নার্সিং নেতাদের ক্ষোভ

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে নার্সিং নেতারা বলেছেন, এই পরিকল্পনা ‘অমানবিক’ ও দক্ষ নার্সদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, বহু নার্স দেশ ছেড়ে গেলে স্বাস্থ্যখাত বিরাট হুমকিতে পড়বে।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যখাত এরই মধ্যে কর্মী সংকট ও চাহিদা বৃদ্ধির চাপে নাজুক অবস্থায় আছে। নতুন প্রস্তাবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগবে এই খাতেই।

দিশেহারা বিদেশি নার্সরা

রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং (আরসিএন) পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, নতুন পরিকল্পনার প্রস্তাব ঘোষণার পর থেকেই যুক্তরাজ্যের বিদেশি নার্স ও সামাজিক সেবাদানকারী কর্মীদের মধ্যে তীব্র উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। সামাজিক হলো এমন একটি ব্যবস্থা যা শিশু, বয়স্ক বা শারীরিক কিংরা মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া ব্যক্তিদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জন্য ব্যক্তিগত ও ব্যবহারিক সহায়তা দেওয়া। যেমন- পোশাক পরা, খাওয়া-দাওয়া ও চলাফেরায় সাহায্য করা।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বিদেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি, যা মোট নার্সিং জনবলের প্রায় ২৫ শতাংশ। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতে (এনএইচএস) নিয়োজিত নার্স ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের মধ্যে ব্রিটিশ ২ লাখ ৮১ হাজার ৮৫, ভারতীয় ৪২ হাজার ২৯৫, ফিলিপাইনি ২৬ হাজার ৬৯০, নাইজেরিয়ান ১১ হাজার ৭৯০, আইরিশ ৪ হাজর ২৫০, জিম্বাবুইয়ান ৩ হাজার ৮৫০, ঘানিয়ান ৩ হাজার ৬৮০, পর্তুগিজ ২ হাজার ৮২০, ইতালিয়ান ২ হাজার ২৯০ ও রোমানিয়ান ১ হাজার ৯১৫ জন।

এসব কর্মীর মধ্যে যারা ২০২১ সালের পর ভিসা পেয়েছেন ও পাঁচ বছর পর স্থায়ী ভিসা (আইএলআর) পাওয়ার কথা ছিল, এখন সেই সময়সীমা ১০ বছরে বাড়ানোর পরিকল্পনা তাদের ভবিষ্যৎ ঘোর অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে।

আরসিএনের জরিপে ৫ হাজারেরও বেশি নার্স দেখা গেছে, যাদের আইএলআর নেই। তাদের ৬০ শতাংশ বলেছেন, এই পরিবর্তন তাদের যুক্তরাজ্যে থাকার সিদ্ধান্তে ‘গভীর প্রভাব’ ফেলবে। হিসাব অনুযায়ী, এতে ৪৬ হাজারেরও বেশি নার্স দেশ ছাড়তে পারেন।

রয়্যাল কলেজ অব নার্সিংয়ের জেনারেল সেক্রেটারি ও সিইও প্রফেসর নিকোলা রেঞ্জার বলেন, সরকারের নতুন প্রস্তাবগুলো শুধু অমানবিক নয়, রোগীদের জন্যও বিপজ্জনক। যে মন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবার সাফল্য চান, তিনি কখনোই স্থায়ী ভিসা পাওয়ার সময়সীমা দ্বিগুণ করার কথা ভাবতে পারেন না।

তিনি আরও জানান, করোনা মহামারির সময় অনেক নার্স ব্যক্তিগত ত্যাগ স্বীকার করে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। এখন তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তোলা হচ্ছে, যা এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা।

স্থায়ী ভিসা না থাকলে নার্সরা চাকরি বদলাতে পারেন না, ফলে সামাজিক সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের শোষণের শিকার হতে হয়। একই সঙ্গে তারা শিশু ভাতা ও অক্ষমতা ভাতার মতো রাষ্ট্রীয় সুবিধাও পান না, যা পুরো ১০ বছর ধরে অব্যাহত থাকবে।

জরিপে দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ নার্স আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে ‘চরম উদ্বিগ্ন’, ৫২ শতাংশ পরিবারের ওপর প্রভাব নিয়ে ও ৪৯ শতাংশ ক্যারিয়ার নিয়ে একই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং স্থায়ী ভিসার আবেদন ফি ৩ হাজার ২৯ পাউন্ড থেকে কমানোরও দাবি জানিয়েছে, যেখানে প্রক্রিয়াকরণের খরচ মাত্র ৫২৩ পাউন্ড।

এসব বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, বিদেশি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তারা সেবার মান বাড়াচ্ছেন, তবে বছরপ্রতি অভিবাসনের পরিমাণ অবশ্যই কমাতে হবে। নতুন মডেলে যারা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ও সমাজে অবদান রাখবেন, তারা দ্রুতই স্থায়ী হওয়ার জন্য যোগ্য হবেন।

সূত্র: গার্ডিয়ান

এসএএইচ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow