আর জি কর-কাণ্ডে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গে এবার কর্তব্যরত অবস্থায় শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন একজন নার্স। স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা এক রোগী ওই নার্সকে আপত্তিকরভাবে স্পর্শ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত যুবককে। শনিবার (৩১ আগস্ট) রাতে বীরভূমের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে জানা যায়, অসুস্থ যুবককে স্ট্রেচারে শুইয়ে হাতে চ্যানেল করতে গিয়েছিলেন নার্স। অভিযোগ, সেই সময়ে তার শ্লীলতাহানি করা হয়। রোগী নার্সের শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা স্পর্শ করেন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন>>
- যে ঘটনায় উত্তাল ভারত, কী হয়েছিল চিকিৎসক তরুণীর সঙ্গে?
- আন্দোলনে উত্তাল ভারতে এবার বাসের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ
- ভারতে এবার পার্টি থেকে ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার তরুণী
এই ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বীরভূমের ইলামবাজারের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ডাকে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তার উপযুক্ত শাস্তি ও হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিতে রোববার সকালে স্থানীয় থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
শনিবার রাতে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ইলামবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন এক যুবক। সঙ্গে তার পরিবারের লোকজনও ছিলেন। জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যুবককে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শমতো নার্স গিয়েছিলেন যুবকের স্যালাইনের ব্যবস্থা করতে। সেই সময়ে তার শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। রাতেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই নার্স।
অভিযোগকারী বলেন, রাতে একজন রোগী এসেছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আমি তাকে স্যালাইন দিতে গিয়েছিলাম। হাতে চ্যানেল করার সময় রোগী আমার গায়ে হাত দেন। গালিগালাজও করছিলেন। আমি এখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। একজন রোগী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে কীভাবে এই সাহস পান? ওনার বাড়ির লোকজনও সামনে ছিলেন। সবাই দেখেছেন কী ঘটেছে।
আরও পড়ুন>>
- ভারতে এক বছরে ২০ হাজার কন্যাশিশুকে ধর্ষণ
- ভারতে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার ৮৭ জন
- ভারতে ৩ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, স্কুলভ্যান চালক গ্রেফতার
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে ওই নার্স বলেন, এখানে সকাল বা রাত কখনোই পুলিশ থাকে না। তবে এই ঘটনার পরে আমরা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসেছিল। আমি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। রোগীকে পুলিশ নিয়ে গিয়েছে।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, রোগীকে স্যালাইন দেওয়ার সময় একজন সহকারীকে সামনে থাকতে হয়। আমি তাই নার্সের সঙ্গে ছিলাম। আমার চোখের সামনেই ঘটনাটি ঘটেছে। দিদি স্যালাইনের জন্য রোগীর হাতে চ্যানেল করতে গিয়েছিলেন। রোগী তখন তার শ্লীলতাহানি করে। আমরা সবাই দেখেছি। দিদি কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে সরে যান। আমরা সবাই ঘটনার প্রতিবাদ করি। পুলিশকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা আসে। তবে রাতে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আর জি কর-কাণ্ডে যখন সারা রাজ্যে তোলপাড়, তার মধ্যেই বীরভূমের হাসপাতালের এই ঘটনা আবার স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
এর আগে, গত ৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজে দায়িত্বরত অবস্থায় ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন মৌমিতা দেবনাথ নামে এক চিকিৎসক। সেই ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। বিচারের দাবিতে এবং সব সরকারি হাসপাতালে উপযুক্ত নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তারপরেও চিত্রটা বদলায়নি পশ্চিমবঙ্গে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি
কেএএ/