স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল মামুনের, ফেরেন লাশ হয়ে

1 month ago 8

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মাদারীপুরের মামুন সরদার (৩৪)। মৃত্যুর কিছু সময় আগেই স্ত্রী ও ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তা আর হয়নি। ঘর থেকে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হয় মামুনকে। আজও সেই স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন তার স্ত্রী শাহিনুর বেগম (২৫)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ঘটমাঝি গ্রামের আবু তালেব সরদার ও ইউনা বেগমের ছেলে মামুন সরদার। চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে বিএ পাস করেন তিনি। এরপর ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি নেন।

কয়েক বছর আগে শাহিনুর বেগমকে বিয়ে করেন মামুন। এরপর থেকে ঢাকার মিরপুরে স্ত্রীসহ থাকছিলেন তিনি। পরে তাদের একটি মেয়ে হয়। নাম রাখা হয় মানহা বিনতে মামুন। বর্তমানে মেয়ের বয়স দুই বছর। এই মেয়েকে ঘিরেই ছিল মামুনের স্বপ্ন। মেয়েকে পাইলট বানাতে চেয়েছিলেন তিনি।

স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল মামুনের, ফেরেন লাশ হয়ে

স্বজনরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই অংশ নেন মামুন সরদার। ১৯ জুলাই (শুক্রবার) দুপুরে খাবার খেয়ে বাসা থেকে বের হন। যাওয়ার সময় স্ত্রীকে বলেন, বিকেলে তোমাদের নিয়ে (স্ত্রী ও সন্তান) ঘুরতে যাবো। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে থেকো। এরপর বিকেল ৪টায় ঢাকার মিরপুর-১০ এ আন্দোলনরত একটি মিছিলে গেলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান মামুন।

পরে মামুনের মরদেহ একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে রাতেই মাদারীপুরের নিজ বাড়িতে আনা হয়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এরপর থেকে তার স্ত্রী শাহিনুর বেগম ও মেয়ে মানহা গ্রামের বাড়িতেই থাকছেন।

শাহিনুর বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‌‌‘প্রতি শুক্রবার আমরা ঘুরতে যাই। ওইদিনও আমাদের ঘুরতে যাবার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হলো না। ঘর থেকে সুস্থ একজন মানুষ বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরে এলো।’

স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল মামুনের, ফেরেন লাশ হয়ে

কান্না করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছোট্ট মেয়ে মানহাকে নিয়ে ছিল তার অনেক স্বপ্ন। ভালো একটি স্কুলে পড়াবে, বড় হয়ে পাইলট বানাবে...কিন্তু তার কিছুই হলো না। আমার মেয়ে এতিম হয়ে গেলো। বাবা ছাড়াই এখন তার বড় হতে হচ্ছে। জানি না তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো কি না। কিন্তু তার এই অকাল মৃত্যু আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। সেদিনের কথা মনে পড়লে কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না।’

ছেলের শোকে আজও ভেঙে পড়েন বাবা আবু তালেব সরদার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার সন্তানদের মধ্যেই মামুন ছিল সবচেয়ে বেশি মেধাবী, পরিশ্রমী ও প্রতিবাদী। আজ সেই সন্তানকেই আমার হারাতে হলো। তাই যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।’

প্রতিবেশী মিজানুর রহমান বলেন, ‘মামুন খুব ভালো ও ভদ্র মানুষ ছিলেন। সবার সঙ্গেই মিশতেন, কোনো অহংকার ছিল না। ঢাকা থেকে এলেই সবাইকে সম্মান দিতেন। তার পরিবারের বড় একটা সার্পেট দিতেন মামুন। সেই মানুষটি আজ নেই।’

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসআর/এএসএম

Read Entire Article