স্বপ্নের ফেরিতে দুঃখ ঘুচলো সন্দ্বীপবাসীর

1 day ago 9

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর চলাচলে দুর্ভোগের ইতি ঘটেছে সন্দ্বীপবাসীর। বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপটিতে শুরু হয়েছে স্বপ্নের ফেরি চলাচল।

সোমবার (২৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ঘাটে ফেরি সেবার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

শত বছর ধরে উত্তাল সাগরপথে স্পিডবোট ও ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযানে চলাচল করতেন দ্বীপের বাসিন্দারা। বিরূপ পরিবেশে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় ঘটতো প্রাণহানি। যাত্রাপথে কখনো কোমর পানি, কখনো হাঁটু পানি মাড়িয়ে ফিরতে হতো তাদের। বেশি দুর্ভোগে পড়তে হতো নারী ও শিশুদের। সূর্যাস্তের পর বন্ধ হয়ে যেত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় দ্বীপবাসীর চলাচলে নতুন যুগের শুরু হলো।

স্বপ্নের ফেরিতে দুঃখ ঘুচলো সন্দ্বীপবাসীর

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া পর্যন্ত চলাচল করবে এই ফেরি। সোমবার সকাল ৯টায় প্রথমবারের মত ফেরি যাত্রা করে সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে।

জানা যায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দৈনন্দিনের কাজে প্রতিদিন এ জনপদের প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার বাসিন্দা ২০ কিলোমিটার উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে জেলা শহর চট্টগ্রামে যাতায়াত করতেন। ফেরি চলাচলের মাধ্যমে সেই কষ্ট ঘুচবে দ্বীপটির চার লাখ মানুষের।

উদ্বোধন উপলক্ষে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

স্বপ্নের ফেরিতে দুঃখ ঘুচলো সন্দ্বীপবাসীর

উদ্বোধনকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, নিরাপদ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। অবশেষে সেই হয়েছে সেই স্বপ্ন। এর মাধ্যমে সন্দ্বীপবাসী একটি নিরাপদ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা পাবে। বাস, ট্রাক, ট্যাংক লরি, মিনিবাস, প্রাইভেট কারসহ সকল ধরনের যানবাহন চলাচল করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় পর্যটন বাড়বে। সন্দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতাও বেড়ে যাবে। সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন, ফেরিতে সন্দ্বীপ পাল্টে যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আরিফ হোসেন বলেন, ফেরি চলাচল সন্দ্বীপবাসীর অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। এর সুফল ভোগ করার জন্য সন্দ্বীপবাসী অধীর আগ্রহে মুখিয়ে আছে। নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের জন্য বাস্তবমুখী সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে স্থায়িত্বশীল সেবা নিশ্চিত করা হলে প্রকৃত অর্থে যাতায়াত তথা আর্থিকভাবে সন্দ্বীপের মানুষের ব্যাপক কল্যাণ সাধিত হবে।

ফেরি সেবা চালু করতে দুই প্রান্তে নতুন সড়ক, পার্কিং ও ফেরিঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে হয়েছে পরীক্ষামূলক চলাচল। এর আগে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও এ পথে ফেরি চালু করা যায়নি।

এদিকে বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সাগরে ফেরি চলাচল সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা আছে। সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।

বিআইডব্লিউটিএ এর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে যেতে বা সেখান থেকে আসতে একবারে এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের মতো সময় লাগছে। জোয়ারভাটা হিসেব করে প্রতিদিন যাওয়া-আসা মিলিয়ে মোট চারবার ফেরি চলাচলের কথা আছে।

স্বপ্নের ফেরিতে দুঃখ ঘুচলো সন্দ্বীপবাসীর

তিনি আরও বলেন, ফেরিতে একবারে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৫টির মতো যানবাহন পরিবহন করা যাবে।

ইম্প্রুভড মিডিয়াম টাইপ ফেরি কপোতাক্ষ’র মাস্টার সামশুল আলম সাইফুল বলেন, ফেরিতে যানবাহনের পাশাপাশি ৬০০ জন মানুষ চলাচল করতে পারবে।

ফেরি চালু উপলক্ষে সোমবার থেকে ঢাকা-সন্দ্বীপ রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলও উদ্বোধন করেন উপদেষ্টারা।

এম মাঈন উদ্দিন/এমএন/জেআইএম

Read Entire Article