দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার পর আবারও সখ্যতার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ, বাণিজ্যিক আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কের জটিলতা কিছুটা হলেও কমেছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সখ্যতা ও যোগাযোগ বাড়াতে সক্রিয় পাকিস্তান। এরই অংশ হিসেবে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। তার সফর শেষ হওয়ার আগেই আসছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার—যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রায় ১৫ বছরের বিরতি শেষে গত এপ্রিলে ঢাকায় বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুই পররাষ্ট্রসচিব। ওই বৈঠকের ৯ দিন পর পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকায় আসার কথা ছিল। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সংঘাতের জেরে সফরটি শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত শনিবার (২৩ আগস্ট) দুদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ইসহাক দার। এ উচ্চপর্যায়ের সফরকে ঘিরে বাড়ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কৌতূহল।
পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরে ছয় থেকে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে দু'দেশ। এছাড়া বাণিজ্য ও কানেকটিভিটির পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমন ও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পাবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোও উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল প্রায় অকার্যকর। তবে এখন আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার কৌশলের অংশ হিসেবে পাকিস্তানসহ সবার সঙ্গে স্বাভাবিক ও পরিমিত সম্পর্ক রাখতে চায় ঢাকা।
অন্যদিকে, ইসলামাবাদ মনে করছে, এটাই বরফ গলানোর সেরা সুযোগ। তাই তারা বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী।
দুদিনের ব্যস্ত কর্মসূচি ইসহাক দারের
আগামী ২৩–২৪ আগস্ট দুইদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের উপ–প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ২৩ আগস্ট দুপুরে বিশেষ ফ্লাইটে তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম ও পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম।
সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের আয়োজনে একটি রিসিপশনে যোগ দেবেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে পৃথকভাবে মতবিনিময় করবেন।
দুইদিনের সফরে অন্তত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে। পাঁচটি চুক্তি সম্পাদনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাকিগুলো পাইপলাইনে, আলোচনা চলছে।
২৪ আগস্ট সকালেই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৈঠকের পর ইসহাক দারের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
এদিনই তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সফরকালে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সরকারের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকেরও কথা রয়েছে।
- আরও পড়ুন
- ব্যবসা-বিনিয়োগ বাড়াতে পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ কমিশন করবে বাংলাদেশ
- বাণিজ্য বাড়াতে পারস্পরিক সহযোগিতায় আগ্রহী পাকিস্তান
- বিনা ভিসায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সফর করা যাবে কূটনৈতিক পাসপোর্টে
এছাড়া রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও তৎপর থাকবেন ইসহাক দার। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। সফর শেষে ২৪ আগস্ট রাতেই বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়বেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
কোনো পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর
ঢাকা ও ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এবারই প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে যাচ্ছে।
অতীতে পাকিস্তানের অনেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীই বাংলাদেশে এসেছেন, সেগুলো কোনোটা ছিল বড় সফরের অংশ, কোনোটা অন্য আয়োজনের ফাঁকতালে সংক্ষিপ্ত বৈঠক অথবা আঞ্চলিক আয়োজনের অংশ হিসেবে। কিন্তু শুধু দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম সফর।
তবে নামপ্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, আগে পাকিস্তানের বিভিন্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এলেও সেগুলোর প্রায় সবই ছিল কোনো রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর সফরের অংশ, আঞ্চলিক কোনো বৈঠক অথবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার ফাঁকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। কিন্তু শুধু দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে কেন্দ্র করে এ ধরনের আনুষ্ঠানিক সফরের ঘটনা এ প্রথম।”
সই হবে ৬-৭টি সমঝোতা স্মারক
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সফরকালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে কেন্দ্র করে অন্তত ছয় থেকে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত পাঁচটি চুক্তি সম্পাদনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাকিগুলো পাইপলাইনে রয়েছে। আলোচনা চলছে।
সফরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন ইসহাক দার। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের বাসায় সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে।
চূড়ান্ত হওয়া সমঝোতাগুলোর মধ্যে রয়েছে— দু'দেশের কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি, সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর সমঝোতা, ফরেন সার্ভিস একাডেমীগুলোর মধ্যে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে যৌথ কার্যকরী গ্রুপ গঠন এবং কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা। এছাড়া বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার মধ্যেও একটি সমঝোতা সই হওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি গবেষণার মতো খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে এখনো আলোচনা চলছে। এ দুটি খাতে সমঝোতা স্মারক সইয়ের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে আলোচনায়
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে বাণিজ্য বাড়ানো এবং সংযোগ বা কানেকটিভিটি উন্নয়ন। এ কারণেই পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক কীভাবে আরও শক্ত করা যায়, তা নিয়ে দু’দেশ বিস্তারিত আলোচনা করবে।
নিউইয়র্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ/ছবি: সংগৃহীত
বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো আগেই ভাগ করে রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন খাত এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়।
এছাড়া আলোচনায় উঠে আসবে জঙ্গিবাদ দমন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন, আর দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাকে (সার্ক) আবারও কার্যকরভাবে সক্রিয় করার প্রস্তাবও আলোচনায় থাকবে।
এবিষয়ে ঢাকার একজন কূটনীতিক বলেন, অনেক বছর পর এমন একটা পূর্ণাঙ্গ বৈঠক হতে যাচ্ছে। আমরা চাই, এটা শুধু আলোচনাতেই না, বাস্তব সম্পর্কের নতুন দিক খুলে দিক।”
তবে পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, দুদেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে পাকিস্তান।
- আরও পড়ুন
- ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ জোরদারে ঢাকায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী
- ঢাকা-ইসলামাবাদ বাণিজ্য বাড়ানোয় প্রাধান্য, হবে ৪ সমঝোতা
- ভারতকে সিন্ধু পানি চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান পাকিস্তানের
- ভারতের হুমকি, পাকিস্তানে বাঁধ নির্মাণে গতি বাড়ানোর ঘোষণা চীনের
পুরোনো ইস্যুতে ছাড় নয়
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহ দেখালেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অতীত ভুলে সামনে এগোনোর অবস্থানে নেই। বরং বাংলাদেশ স্পষ্ট করে দিতে চায়, ১৯৭১ সালের বেদনার ইতিহাস এখনো অমলিন এবং এই ইতিহাস ভুলে যাওয়ার সময় এখনো আসেনি।
পাকিস্তান বরাবরই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এখনো এ বিষয়ে গভীর প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধজনিত ক্ষতিপূরণ, বাংলাদেশে আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, সম্পদের হিস্যা ও ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বৈদেশিক সহায়তার পাওনা পরিশোধ— এ দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা চায় ঢাকা। পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন বৈঠকে বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হবে বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত ১৭ এপ্রিল দুদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে ১৯৭১ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিল ঢাকা। এরপর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এবং ডিসেম্বরে কায়রোতে ডি-৮ সম্মেলনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সেসময় ইউনূস বলেন, এসব বিষয় বারবার আসছে, এবার স্থায়ী সমাধানে এগোনোই ভালো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।”
ভারতের সঙ্গে দূরত্ব, সুযোগ নিতে চায় পাকিস্তান
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা ইস্যুতে টানাপড়েন, সীমান্তে উত্তেজনা, এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপড়েন পাকিস্তানের নজর এড়িয়ে যায়নি। এ পরিস্থিতিকে কৌশলগত সুযোগ হিসেবে দেখতে শুরু করেছে ইসলামাবাদ।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের নতুন আগ্রহের পেছনে একদিকে যেমন রয়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক প্রভাব, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাময়িক দূরত্বকে কাজে লাগানোর কৌশল।
ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী অনেক দেশের সম্পর্ক এখন আগের মতো উষ্ণ নয়। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান বা ভুটানের সঙ্গে খোলাখুলি বৈরিতা না থাকলেও আস্থার ঘাটতি স্পষ্ট। আর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তো দীর্ঘদিন ধরেই বৈরী।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা ইস্যুতে টানাপড়েন চলছে। এ পরিস্থিতিকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে চাইছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান বুঝে গেছে, এখনই সময় দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব মোকাবিলায় বিকল্প বন্ধুত্ব গড়ে তোলার।
উল্লেখযোগ্যভাবে, চীন এ অঞ্চলের প্রায় সব দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্কে রয়েছে, আর পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ। ফলে ভারতকে ঘিরে একপ্রকার চাপ তৈরির কৌশলে এগোচ্ছে পাকিস্তান, যার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশকে আরও কাছাকাছি টানতে চায় দেশটি।
ভারতের সঙ্গে শীতলতার সুযোগ নিতে চায় পাকিস্তান
দক্ষিণ এশিয়ার বড় শক্তি হিসেবে ভারত বরাবরই প্রতিবেশীদের সঙ্গে প্রভাবশালী সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ওই সম্পর্কগুলোতে আগের মতো উষ্ণতা নেই। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান বা ভুটান প্রতিটি দেশের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক এখন কিছুটা চাপের মধ্যে। বৈরিতা না থাকলেও বিশ্বাসের জায়গায় টানাপোড়েন স্পষ্ট।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা ও দূরত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সীমান্ত হত্যা, পানিবণ্টন, বাণিজ্যে অসমতা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক বন্ধন থাকলেও বাংলাদেশ এখন আগের মতো একমুখী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে আগ্রহী নয়। এ সুযোগ নিতে চায় পাকিস্তান।
সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারতে সঙ্গে অন্যদের এ শীতলতার সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে পাকিস্তান। তারা চায়, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কৌশলগত প্রভাব কমিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করতে। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের গভীর সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদ এখন চেষ্টা করছে বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে ভারতকে চারদিক থেকে চাপে ফেলতে।
জেপিআই/এমএএইচ/এএসএম