একটি ক্যাডারের স্বেচ্ছাচারিতায় এক ক্যাডারের উপসচিবকে আরেক মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করে পুলের মূল চরিত্র ও উদ্দেশ্যকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে।
১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কনভেনশন হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে এ কথা জানান বক্তারা।
সেমিনারে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে কর্মরত ও সাবেক সদস্যদের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার স্বনামধন্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সংবিধান সংস্কার কমিটির সাবেক সদস্য ফিরোজ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম রব্বানি, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন, বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইলিয়াছ মাতাব্বর। এছাড়া বক্তব্য দেন ২৫ ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আহ্বায়ক কৃষিবিদ ইকবাল আহম্মেদ চৌধুরী।
সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান ও আতিয়া সুলতানা। মূলপ্রবন্ধে বলা হয়, একটি ক্যাডার নিজেদের ব্রিটিশ কলোনিসটদের উত্তরাধিকারী দাবি করে নিজেদের এলিটিস্ট মনোভাব বজায় রেখে চলছে।
এসময় বক্তারা বলেন, ১৪টি মূল ক্যাডার ও ১৪টি সাব-ক্যাডারসহ মোট ২৮টি ক্যাডার সমন্বিত করে একটি পেশাদার, আদর্শমুখী ও একীভূত সিভিল সার্ভিস গঠন করা হয়েছিলো।
গতানুগতিকতাকে বাদ দিয়ে সুস্থ ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য পদ্ধতির মাধ্যমে গুণগত মানের বিচারে সিভিল সার্ভিসের সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ হিসেবে এ পদ্ধতি নেওয়া হয়েছিল। সর্বস্তরের মেধাবী কর্মকর্তারা যাতে সরকার পরিচালনায় ভূমিকা রেখে দেশের উন্নয়নকে গতিশীল করতে পারে– এটা ছিল উদ্দেশ্য।
পত্রিকার বরাত দিয়ে বক্তারা আরও বলেন, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কোটাবিহীন মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গঠনের ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে এরশাদের সরকার কোটাভিত্তিক ডিএস পুল গঠন করে রাষ্ট্রের স্বার্থকে একটি ক্যাডারের স্বার্থে জলাঞ্জলি দিয়েছে, যে ধারা আজও বহাল রয়েছে।
বক্তারা এসময় রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গঠনে ডিএস পুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবি জানান, পেশাদারত্ব নিশ্চিত করতে পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয়ের ওপর গুরুত্ব দেন এবং সবার সমান সুবিধা নিশ্চিত করে জবাবদিহিমূলক ও উন্নত পেশাদার সেবা ব্যবস্থাপনা গড়তে সরকারের প্রতি আহ্বান করেন।
তারা আরও বলেন, স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কাজে স্ব স্ব ক্যাডারের মেধাবীদের পেশাদার জ্ঞান কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে উপসচিব পুল করা হলেও বর্তমানে এক ক্যাডারের উপসচিবকে আরেক মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করে পুলের মূল চরিত্র ও উদ্দেশ্যকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে একটি ক্যাডারের স্বেচ্ছাচারিতায়।
বলা হয়, একটি ক্যাডার পদ ছাড়াই পদোন্নতি পায়, অন্য ক্যাডারের পদ খালি থাকলেও এবং একই পদের ফিডারের দ্বিগুন কাল অতিবাহিত হলেও পদোন্নতি পায়না, যা চূড়ান্ত বৈষম্যমূলক ও স্বেচ্ছাচারিতা।
বক্তারা বলেন, সিভিল সার্ভিসের কার্যকর সেবা নিশ্চিত করতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ থেকে কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়েছে, অর্থাৎ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে স্ব-স্ব ক্যাডারের অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তারা পদায়িত হবেন। বর্তমানে প্রতিটি সেক্টরে নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা যারা সেই সেক্টর সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ। ফলে সেক্টরগুলো কাঙ্ক্ষিত জনসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মো. জামিলুর রহমান এবং কমিটির সদস্যসচিব ডা. মো. আহসান হাবীব সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন।
আরএমএম/এমএএইচ/এমএস