স্মৃতিভার এবং অন্যান্য

2 weeks ago 6

স্মৃতিভার

ছোট হাতে অনেক মারতাম দাদুকে
তিনি হাউমাউ করতেন, আমি আনন্দ পেতাম
পাশ থেকে মাকে ডেকে ডেকে খুন হতেন ঠাকুরমা
মা রান্নাঘর হতে দৌড়ে এসে
জ্বলন্ত চুলায় কয়লা হতে অপেক্ষমান লাঠি নিয়ে রুদ্রমূর্তি হলে আমি কাঁদতাম।

আমার ব্যথায় দাদু কষ্ট পেতেন, রাগ করতেন ভীষণরকম। পাষণ্ড-পাষণ্ড বলে এক শব্দই আওড়াতেন বারংবার। মা-ঠাকুরমা তখন চুপ থাকতেন।
কখনো কখনো রাগের তীব্রতা প্রকট হলে দেড় মাইল হেঁটে নালিশ করতেন তার ছেলের কাছে।

আমার বাবা মুদি দোকানি, কাকডাকা ভোরে
রোজ নিয়ম করে আসতেন বাজারে।
ভোরের স্নিগ্ধতায় তখনো আমি মায়ের বুকে উষ্ণতার চাদরে ঢাকা এক নিষ্পাপ জীবন।

রাতে বাবার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ঘরের কাছের পেয়ারা গাছে বাঁদুড় তাড়ানো টিনের দড়ি টানতে টানতে প্রায়ই ঘুমিয়ে যেতাম ঠাকুরমা কিংবা দাদুর কোলে। বাবা রাতেও নিয়ম করে বাড়ি ফিরতেন, তখন আমি বাবার ঘুমন্ত ছেলে।

মা কুপি জ্বালিয়ে বাবার পাশে বসতেন, গল্প করতেন আমার এদিক-ওদিক ছুটে চলার।
বাবা খাবার খেতেন আর মৃদু হাসতেন।

দাদু গত হওয়ার বছরের মাথায় আপন উঠোন, ভিটেমাটি ছাড়তে হলো নামমাত্র দামে। অনিচ্ছায় হলাম বাজারবাসী, এখন বাবাকে প্রতিদিন সময়ের ইচ্ছেতে দেখি।

বাবা বছর তিনেক দাদা হলেন, প্রজন্মের ছোট্ট পায়ের দৌড়ঝাঁপে আমার শৈশব ফিরে পান মা।
বাবার সাথে সায়নের এ খুনসুঁটি দাদুকে মনে পড়লে হই নস্টালজিক।

এখন আমি ঘরে ফিরলে রচনা পাঠ করেন ছেলের মা।
আমি শুনি আর মৃদু হাসি।
বেঁচে থাকলে সায়নও মৃদু হাসবে একদিন।

****

বিলয় উপন্যাস

সাড়ে তিন হাতের উপন্যাস
অথচ অধ্যায় কত দীর্ঘ;

শেষ পৃষ্ঠা অবধি হিসেব কষে, ফিরতে হয় ঘরে।
তবুও বর্ণ দেখি, সংখ্যা গুনি; মানুষ দেখি না!

উন্মাদনার এ প্রাচীর পদ্মপাতার জল মাত্র
কদমে-কদমে চোরাবালি তাড়া করে প্রতিমুহূর্ত।

****

অদূরেই কল্কি অবতার

আমাকে বাঁশির একটা সুর লিখতে বলা হলো,
ভারতীর বুকভাঙা আর্তনাদ লিখলাম-
যা বিলাপ রাগে বাজে; শ্যামের বৃন্দাবন।

আমাকে অন্তিম আঁকুতির দৃশ্য আঁকতে বলা হলো,
এঁকে দিলাম রুপপাল ও প্রদীপের জোড়া হাত।
আহ্! বেঁচে থাকার কি আকুতি;
তবুও মন গলে না, শ্বাপদদের।

আমাকে লোকালয়ের হিংস্র জানোয়ারের ঠিকানা
খুঁজতে বলা হলো,
খুঁজে পেলাম ডাঙ্গাপাড়া বুড়িরহাটের বেজন্মাদের।

আমাকে ন্যায্যতার কথা বলতে বলা হলো, যা ফলশূন্য

আমাকে সান্ত্বনার বাণী শোনাতে বল্লেন, শোনালাম;
অধর্মে ধাবিত নির্মমতায় অদূরেই কল্কি অবতার
সময় খুব দ্রুত চলছে, ক্ষমা নেই আর।

এসইউ/জেআইএম

Read Entire Article