স্লো লিভিংয়ের দিকে মানুষ কেন ঝুঁকছে?

1 hour ago 3

বর্তমানে ৯-৫টার চাকরি, ব্যস্ত কর্মসূচিতে ঠাসা সময়, সাফল্যের পেছনে বিরামহীন ছুটে চলা মানুষের জীবনকে জটিল করে তুলছে। সময়ের পেছনে ছুটতে ছুটতে নিজের সঙ্গে সময় কাটাতেই ভুলে যাই। তাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্লো লিভিং বা ধীরে চলার জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে নতুন ট্রেন্ড। যা শুধু একটি লাইফস্টাইল নয়, বরং এক ধরনের মানসিক শান্তির চর্চার পথ তৈরি করে।

আসুন জেনে নেওয়া যাক স্লো লিভিং সম্পর্ক-

স্লো লিভিং কী?
স্লো লিভিংয়ের ধারণাটি এসেছে স্লো মুভমেন্ট থেকে। স্লো লিভিং এর অর্থ হলো জীবনের গতি কমিয়ে দিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করা। দ্রুততার ভেতর নয়, বরং ধীরে-সুস্থে যাপনকে উদযাপন। ফাস্ট ফুড, ফাস্ট ট্রাভেল বা মাল্টিটাস্কিং আমাদের জীবনকে অনেক বেশি ক্লান্ত করে তোলে। আর সেখানে স্লো লিভিং শেখায় যা করবে প্রয়োজনে কম করো, কিন্তু মন দিয়ে করো।

‘স্লো লিভিংয়ের’ ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। প্রতিটি মানুষকে তার নিজের মতো করে পছন্দের জীবন গড়ে তোলে রীতিতে। কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, পছন্দের কাজ করা ইত্যাদি স্লো লিভিংয়ে অনেক গুরুত্ব পায়।

স্লো লিভিংয়ের দিকে মানুষ কেন ঝুঁকছে?

স্লো লিভিং কেন জনপ্রিয় হচ্ছে
১. অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং ডিজিটাল ওভারলোডের কারণে অনেকের মানসিক ক্লান্তি বাড়ছে।
২. প্রচুর মানুষ মানসিক শান্তি এবং নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ খুঁজছে।
৩. যত দিন যাচ্ছে মিনিমালিজম জীবনযাত্রার ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে।
৪. করোনা মহামারির সময় ঘরোয়া জীবন মানুষকে ধীরে চলার সৌন্দর্য শিখিয়েছে।

স্লো লিভিংয়ের মানসিক উপকারিতা

১. চাপ কমায়
আমাদের ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ বাড়ায়। স্লো লিভিংয়ে ধীরগতির জীবনযাপনে মানসিক চাপ, রাগ, অস্থিরতা কমতে পারে। সময় নিয়ে ও ধীরগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ও বর্তমানের দিকে মনোযোগ দেওয়ার ফলে প্রশান্তি অনুভূত হয়। ফলে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকে।

২.মনোযোগ বাড়ায়
একসঙ্গে হাজারটা কাজ যদি না করেন, তাহলে একটি কাজে মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়। এতে অতিরিক্ত চাপমুক্ত হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। নিজের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়। এটি শুরু করতে, প্রতিদিনের সাধারণ কাজগুলোকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করা যেমন খাওয়া, হাঁটা বা বাসন ধোয়ার সময় পুরোপুরি সচেতন থাকা।

স্লো লিভিংয়ের দিকে মানুষ কেন ঝুঁকছে?

৩. সৃজনশীলতা বাড়ে
স্লো লিভিংয়ের মাধ্যমে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি বাড়ে। কারণ নতুন আইডিয়া ও সৃজনশীল বিষয়ে চিন্তাভাবনা ও কাজ করার জন্য বেশি সময় ও সুযোগ পাওয়া যায়।

৪. ‘মাইন্ডফুলনেস’ বা সচেতনতা চর্চা শেখাবে
‘মাইন্ডফুলনেস’ বা সচেতনতা চর্চা স্লো লিভিং জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি আপনাকে প্রতিটি মুহূর্তে আনন্দ নিয়ে বাঁচতে সাহায্য করবে এবং মানসিক প্রশান্তি বাড়াবে। নিয়মিত মাইন্ডফুলনেস চর্চা করলে স্মৃতি, আত্মসচেতনতা, সহমর্মিতা ও মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

৫. ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলে
ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলে অন্যের সঙ্গে সংযোগ ও সামাজিকতার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় স্লো লিভিংয়ে। এতে কাছের মানুষদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির সুযোগ পাওয়া যায়। যার ফলে মানুষ একাকিত্বে কম ভোগে।

স্লো লিভিং কীভাবে চর্চা করবেন
১. সকাল বেলায় কিছুটা সময় নীরবতায় কাটাতে হবে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

২.হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। প্রতিদিন স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার থেকে স্বেচ্ছায় বিরত নিতে হবে।

স্লো লিভিংয়ের দিকে মানুষ কেন ঝুঁকছে?

৩. শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। যার ফলে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কমিয়ে ফেলতে হবে।

৪. খাবার সময় ফোন হাতে নেওয়া যাবে না। প্রতিটি খাবারের স্বাদ বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

৫. শখের কাজ যেমন আঁকা, গান শোনা, বাগান পরিচর্চা করা-এসব কাজে বেশি করে যোগ দিতে হবে।

আরও পড়ুন
সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসবেন কখন 
দাম্পত্য জীবনের যে ৫ কথা অন্য কাউকে বললে সম্পর্ক নষ্ট হয় 

সূত্র: মিডিয়াম, ভেরি ওয়েল মাইন্ড, নিউজ উইক

এসএকেওয়াই/ কেএসকে/জিকেএস

Read Entire Article