আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধের পরিকল্পনা যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) যাত্রী অধিকার দিবসের আলোচনা সভায় সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি তুলেন। সকালে নগরীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সভাটি হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে সভায় মোজাম্মেল জানান, দেশে গত ১১ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৬ হাজার ৬৯০ জন নিহত এবং ১৫ লাখ ৩ হাজার ২৫৭ জন আহত হয়েছে।
যানজট নিয়ে বিশ্বব্যাংকের হিসাব উল্লেখ করে যাত্রী কল্যাণের মহাসচিব জানান, অসহনীয় যানজটে প্রতিদিন কেবল রাজধানীতে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি ৯৮ হাজার কোটি টাকা। জ্বালানি অপচয় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ যানজটে সময় ও আর্থিক ক্ষতি হিসাবে আসলেও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত ক্ষতি কয়েকগুণ বেশি। দীর্ঘক্ষণ যানজটে পড়ে নাগরিকদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে ও উদ্বেগ বাড়ছে।
মোজাম্মেল বলেন, ‘এখন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, কিডনি, হৃদ্যন্ত্র ও প্রজননতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজধানীতে যানজটের তীব্রতা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। মারাত্মকভাবে শব্দ ও বায়ুদূষণও হচ্ছে। এতে যাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। নিয়মিত যানজটের বিরক্তি থেকে মানুষের সংসার ভাঙার ঝুঁকি বাড়ে ৫০ শতাংশ। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশ এবং স্নায়বিক ক্ষতির অন্যতম কারণও অতিরিক্ত যানজট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে টিনএজদের বিপদগামিতা যানজট ও বেকারত্বের কারণ বলে মনে করেন অনেকেই।’
মোজাম্মেল অভিযোগ করেন যে সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট ও বিশৃঙ্খলা রোধে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নে যাত্রী ও নাগরিক সমাজের মতামত উপেক্ষা করায় এসব সমস্যার সমাধান আসেনি। উন্নত গণপরিবহনের অভাবে দেশে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, অটোরিকশার মতো ছোট ছোট যানবাহন প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে। ৫৬ শতাংশ মানুষ বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবহার করছেন।
পরিবহনখাতে বিগত সরকারের দুর্নীতি ও ভুলনীতির ফলে যানজট এখন নগর-বন্দর পেরিয়ে গ্রামগঞ্জেও সম্প্রসারিত হয়েছে জানিয়ে মহাসচিব বলেন, হাজারো ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার সড়কখাত সংস্কারে কোনো কার্যক্রম নেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি বন্ধ ও যানজটের ভোগান্তি লাঘবের কৌশল রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
সভায় আরও বক্তব্য দেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব মিনার, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক রায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফ রফিকুজ্জামান, সিনিয়র সদস্য মো. ইয়াসিন চৌধুরী, মো. বিল্লাল হোসেন প্রমুখ।
এমএমএ/একিউএফ/এমএস