সড়কে লাগানো ধান কেটে প্রতিবাদী পিঠা উৎসব

দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় যানবাহন ও মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়ক। খানাখন্দে ভরপুর সড়কের বেহালদশায় চলাচলকারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সংস্কারে নেননি উদ্যোগ। বারবার তাদের কাছে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেননি। পরে বাধ্য হয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর কর্তাব্যক্তিদের কাছে দিনের পর দিন দেওয়া হয় ধরনা; কিন্তু তাতেও মেলেনি প্রতিকার।  এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়কটিতে ধানের চারা রোপণ করে জানান প্রতিবাদ। কর্তৃপক্ষকে প্রতিবাদ হিসেবে জানান দিতে প্রায় চার মাসে আগে তারা রোপণ করেছিলেন ধানের চারা।  সোমবার (২৪ নভেম্বর) সেই ধান কেটে তা মাড়াই করে চাল বানিয়ে এক অনন্য ‘প্রতিবাদী পিঠা উৎসব’ করেছেন স্থানীয়রা। এমনই অভিনব প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছীতে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়ক ডাকবাংলো মোড় দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল। বর্ষা মৌসুমে কাদা পানি, আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলোর রাজত্ব। এসব থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয়রা চার মাস আগে ডাকবাংলো তিন মাথা মোড়ে ধানের চারা লাগিয়েছিলেন। পরিচর্যা করায় সেই সড়ক যেন রূপ নেয় একখণ্ড সবুজ ক্ষুদ্র ধানের ক্ষেতে। দীর

সড়কে লাগানো ধান কেটে প্রতিবাদী পিঠা উৎসব
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় যানবাহন ও মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়ক। খানাখন্দে ভরপুর সড়কের বেহালদশায় চলাচলকারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সংস্কারে নেননি উদ্যোগ। বারবার তাদের কাছে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেননি। পরে বাধ্য হয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর কর্তাব্যক্তিদের কাছে দিনের পর দিন দেওয়া হয় ধরনা; কিন্তু তাতেও মেলেনি প্রতিকার।  এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়কটিতে ধানের চারা রোপণ করে জানান প্রতিবাদ। কর্তৃপক্ষকে প্রতিবাদ হিসেবে জানান দিতে প্রায় চার মাসে আগে তারা রোপণ করেছিলেন ধানের চারা।  সোমবার (২৪ নভেম্বর) সেই ধান কেটে তা মাড়াই করে চাল বানিয়ে এক অনন্য ‘প্রতিবাদী পিঠা উৎসব’ করেছেন স্থানীয়রা। এমনই অভিনব প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছীতে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়ক ডাকবাংলো মোড় দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল। বর্ষা মৌসুমে কাদা পানি, আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলোর রাজত্ব। এসব থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয়রা চার মাস আগে ডাকবাংলো তিন মাথা মোড়ে ধানের চারা লাগিয়েছিলেন। পরিচর্যা করায় সেই সড়ক যেন রূপ নেয় একখণ্ড সবুজ ক্ষুদ্র ধানের ক্ষেতে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন অবস্থায় পড়ে থাকা রাস্তাটি স্থানীয়দের কাছে এখন ‘ধানের রাস্তা’ নামেই পরিচিত। আর সেই রাস্তার ধান কাটাকে কেন্দ্র করে যে উৎসব হলো, তা হাসি-ঠাট্টায় ভরা ঠিকই; কিন্তু ভেতরে লুকিয়ে আছে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, অবহেলা আর সংগ্রাম। বছরের পর বছর ধরে ভাঙাচোরা সড়কটি মেরামতের দাবি জানাতে জানাতে মানুষ ক্লান্ত। বর্ষায় গর্তে পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়, শুকনো মৌসুমে ধুলোয় চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে আসে। আর এ অবহেলার প্রতিবাদে ধানের চারা রোপণ করেন স্থানীয়রা। কেউ কেউ প্রথমে বিষয়টি দেখেছিলেন মজা হিসেবে, পরে সেটিই হয়ে ওঠে মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক। ‘যে রাস্তায় গাড়ি চলাচলে সমস্যা, সেখানে ধান জন্মালেও অবাক হওয়ার কিছু নেই’, বললেন স্থানীয় কৃষক উজ্জ্বল হোসেন। তিনি আরও বলেন, ‘অবাক হওয়া উচিত যারা দেখেও দেখেন না, তাদের আচরণে।’ ধান গাছে যখন শীষ ধরল, স্থানীয়দের অভিমান তখন আর চেপে রাখা গেল না। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন এ ধান শুধু কাটবেনই না, বরং এই ধানের চাল দিয়ে আয়োজন করবেন এমন এক উৎসব, যার বার্তা পৌঁছে যাবে প্রশাসনের টেবিল পর্যন্ত। যারই ধারাবাহিকতায় সোমবার বিকেলে রাস্তার একপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ধান কাটেন এলাকার কিছু পুরুষ, অপর পাশে ছিল শিশুদের কৌতূহলী ভিড়। কারও হাতে কাঁচি, কারও হাতে হাসি। রাস্তা যেন পরিণত হয় জনমতের এক বিশাল মঞ্চে। ধান কাটা শেষ হলে শুরু হয় পিঠা বানানোর প্রস্তুতি। হাঁড়িতে ভাপ ওঠে, চুলায় শুঁটকি-জ্বালানির গন্ধ। নতুন চালের খই ভাঙার শব্দে মুখর হয়ে ওঠে আশপাশ। স্থানীয় নারীরা একে একে বানিয়ে ফেললেন ভাপা, পুলি, চিতই, দুধপুলি— সব মিলিয়ে এক অনন্য ‘প্রতিবাদী পিঠা উৎসব’। স্থানীয় গৃহিণী সাহেরা বলেন, ‘আমরা কষ্টের ভাত খাই, কষ্টের পিঠা বানাই। এই পিঠা যেনো আমাদের না বলা কথার মিষ্টি প্রতিবাদ।’ স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন হোসেন বলেন, ‘হাসির আড়ালে জমে থাকা ক্ষোভও স্পষ্ট। রাস্তাটা যদি ঠিক না হয়, তাহলে হয়তো পরের বছর আমরা আরও বড় মাঠ পাব ধান রোপণের জন্য।’ এ ‘উৎসবের’ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় আলোচনার ঝড়। একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘যেখানে রাস্তা ঠিক করা যায় না, সেখানে জনগণ সৃজনশীলতা দিয়ে সমস্যাকেই উৎসবে রূপ দেয়।’ স্থানীয়দের আশা, এ ব্যতিক্রমী বার্তাটি এবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙাবে। রাস্তায় ধান জন্মানোকে হাসি দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু সেই ধানের পিঠা দিয়ে করা প্রতিবাদের স্বাদ এড়িয়ে যাওয়া সহজ হবে কি? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘ওই সড়কে অধিগ্রহণের জটিলতা আছে। যত তাড়াতাড়ি আমাদের জমি হস্তান্তর করবে, তত দ্রুত কাজ করতে পারব। সড়ক সংস্কার করতে গিয়ে অধিগ্রহণের জটিলতায় কাজ ধীরগতি হচ্ছে। আশা করা যায় দ্রুত সমাধান হবে।’

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow