জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ভোট শেষে শুরু হবে গণনা। প্রথমে মেশিনে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত হলেও পরে ম্যানুয়ালি বা হাতে ভোট গণনা হবে বলে জানিয়েছে জাকসুর নির্বাচন কমিশন। এতে ফলাফলে পেতে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
আজ সকাল ৯টায় জাকসু ও হল সংসদের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলকে কেন্দ্র করা হয়। ২১ কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ হাজার ৮৯৭ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১১৫ জন এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ জন।
এদিকে, ভোটগ্রহণের শুরুতেই হোঁচট খেতে দেখা জাকসুর নির্বাচন কমিশনকে। কোথাও ব্যালট পেপার না পৌঁছানোয় দেরিতে ভোট শুরু করতে হয়। আবার কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। একটি কেন্দ্রে ছিল না আঙুলে দেওয়া অমোচনীয় কালিও।
দুপুরের দিকে ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের প্রবেশ নিয়ে দুই কেন্দ্রে হট্টগোল শুরু হয়। এতে ওই দুই হলে ভোট বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া শেষ সময়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সব প্রার্থী।
ব্যালট না আসায় ভোটগ্রহণ শুরুতে দেরি
সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরুর কথা থাকলেও কেন্দ্রে ব্যালট পেপার না আসায় সময়মতো তা সম্ভব হয়নি। প্রায় ৪৫ মিনিট পর কেন্দ্রে ব্যালটপেপার আসে। এরপর ভোটগ্রহণ শুরু হয়। যদিও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কিছুসময় ভোটগ্রহণ করেই আবার হলটিতে ভোট বন্ধ হয়ে যায়।
লোডশেডিংয়ে ভোটকেন্দ্র অন্ধকার, ভোট বন্ধ
ভোটগ্রহণ শুরুর পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ নম্বর হলে বৈদ্যুতিক বিভ্রাট দেখা যায়। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হলটির কেন্দ্র অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এতে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় এক ঘণ্টা ১০ নম্বর হলে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।
দুই হলে হট্টগোল, ভোট বন্ধ
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেসা হলে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। পরে ঘটনাস্থলে যান ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান। তিনি জোর করে ছাত্রীদের ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করায় ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে শুরু করেন। এ নিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
তুমুল হট্টগোল সৃষ্টি হলে সেখানে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। ফলে সেখানে প্রায় একঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার পর সেখানে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু করা হয়।
- আরও পড়ুন
অনিয়মের অভিযোগ তুলে জাকসু নির্বাচন বর্জন করলো ছাত্রদল
ছাত্রদলের ভিপি-এজিএস প্রার্থীর কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা, হট্টগোল
ছাত্রীদের কেন্দ্রে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী, হট্টগোলে ভোট বন্ধ
১০ নম্বর হলে বিদ্যুৎ নেই, অন্ধকারেই চলছে ভোটগ্রহণ
দুপুর ১২টার কিছু সময় পর তাজউদ্দীন হলে প্রবেশের চেষ্টা করেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান। সেখানেও শিক্ষার্থী ও নির্বাচন কর্মকর্তারা তাদের প্রবেশে বাধা দেন। শিক্ষার্থীদের ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ভোটকেন্দ্র। এতে হট্টগোলের মুখে তাজউদ্দীন আহমেদ হলের কেন্দ্রেও ২৩ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু করা হয়।
ভোটারের চেয়ে ব্যালট পেপার বেশি!
সকালে ভোট শুরুর আগে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলে ভোটারের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বাগছাস সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা এ নিয়ে অভিযোগ তোলেন। তাদের অভিযোগ, সালাম-বরকত হলে মোট ভোটার ২৯৩টি। অথচ সেখানে ৪০০টি ব্যালটপেপার পাঠানো হয়েছে। সংগঠনগুলোর নেতারা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেন। তবে এ নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি জাকসুর নির্বাচন কমিশন।
ভোট দিয়ে ফের লাইনে দাঁড়িয়ে ‘কৃত্রিম ভিড়’
ভোট দেওয়ার পর আবারও অনেক শিক্ষার্থী লাইনে দাঁড়িয়ে ‘কৃত্রিম ভিড়’ সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন বাগছাস সমর্থিত জিএস প্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম। ছাত্রদল ও ছাত্রী সংস্থার কর্মীরা এটি করছেন বলেও অভিযোগ তোলেন সিয়াম। তবে এ অভিযোগ ছাত্রদল ও শিবিরের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচন কর্মকর্তারাও এ তথ্য সত্য নয় বলে দাবি করেছেন।
আঙুলে অমোচনীয় কালি না দেওয়ার অভিযোগ
ভোট দেওয়ার পর প্রত্যেক ভোটারের বাম হাতের আঙুলে অমোচনীয় কালি দিয়ে দেওয়া হয়। যাতে ভোট দেওয়ার পর আবার কেউ জাল ভোট দিতে না পারেন। তবে জাতীয় কবি নজরুল হল কেন্দ্রে ভোট শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টা-এ কালি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন এজিএস প্রার্থী আল-আমিন। তিনি অভিযোগ করেন ভোট দেওয়ার পর কালি দেওয়া হয়নি। শুধু স্বাক্ষর নিয়ে ব্যালট পেপার দেওয়া হয়েছে। এতে অনিয়মের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অবশ্য হলটির পোলিং কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল এ অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথমদিকে জাকসু নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদেরকে মার্কার পেন দেওয়া হয়নি। ফলে আমরা ভোটারদের আঙুলে কালি দিতে পারিনি। যখন মার্কার পেন পেয়েছি, তখন কালি দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রদলের ভোট বর্জন
নির্বাচনে অনিয়ম, জালিয়াতি, জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট পেপার ও স্ক্যানিং মেশিন কেনার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হল কেন্দ্রের সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান।
এএএইচ/এমএএইচ/জেআইএম