উচ্চতর গ্রেড বাতিলের জটিলতায় মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৩ সহকারী শিক্ষকের বেতন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ৪৩টি বিদ্যালয়ের এসব শিক্ষক অক্টোবর মাসের বেতন তুলতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
জানা গেছে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষক ১০ বছর পূর্তিতে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হন। সেই অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু কোনো পূর্ব ঘোষণা বা লিখিত নির্দেশনা ছাড়াই হঠাৎ অক্টোবর মাসের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।
বেতন বন্ধের কারণ নিয়ে জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয় ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পরস্পরকে দায় দিচ্ছে। এ বিষয়ে গত বুধবার শিক্ষকরা জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে গেলে অডিট অফিসার মেহেদী হাসান শরীফের সঙ্গে তাদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে ওই কর্মকর্তা অশোভন আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় শিক্ষকরা জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
নৈরপুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রের কথা বলে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে উচ্চতর গ্রেড বাতিলের ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এরপর উপজেলা শিক্ষা অফিস বেতন বন্ধের নির্দেশ দেয়। কিন্তু আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। হঠাৎ দেখি অক্টোবরের বেতন বন্ধ।’
ইদ্রাকপুর ১নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা খালেদা আক্তার বলেন, ‘চাকরিতে ১০ বছর পর আমরা উচ্চতর গ্রেডে যাই। দীর্ঘদিন সেই বেতনই পাচ্ছিলাম। কিন্তু এই মাসে বেতন তুলতে গিয়ে দেখি সব বন্ধ। এতে পরিবারে চরম আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে।’
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম বলেন, ‘আমরা মাসিক বেতনের ওপরই নির্ভরশীল। কিন্তু এক মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’
কেওয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিতাই দাস বলেন, ‘গত মাসের বেতন পাইনি, সামনের মাসগুলোতেও পাব কিনা তা অনিশ্চিত। সংসার, সন্তানের পড়াশোনা— সব কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিট অফিসার মেহেদী হাসান শরীফ কালবেলাকে বলেন, ‘শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ বা গালাগালির অভিযোগ মিথ্যা। বরং তারা ২০-২৫ জন একত্র হয়ে আমাকে হুমকি দিয়েছে। তাদের বেতন বন্ধ করা হয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিসের চিঠির ভিত্তিতে।’
এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মোমিন মিঞা কালবেলাকে বলেন, ‘জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের লিখিত নির্দেশেই সাময়িকভাবে বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রেড উন্নীতকরণ সংক্রান্ত সমস্যায় এটি হয়েছে। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করছি ১৫–১৬ দিনের মধ্যেই শিক্ষকরা আগের গ্রেডে নিয়মিত বেতন পেয়ে যাবেন।’

5 hours ago
8









English (US) ·