যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশটিতে অভিবাসন নীতি কঠোর হয়ে গেছে। অবৈধ অভিবাসীদের ওপর চাপ বৃদ্ধি, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ এবং শুল্ক ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত নানা পদক্ষেপের ফলে অনেকে নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন। আর একারণে তারা মার্কিন নাগরিকত্ব ছেড়ে অন্য দেশের নাগরিকত্বের দিকে ঝুঁকছেন।
বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকা ও উন্নত জীবনের খোঁজে আমেরিকায় আগত মেক্সিকান অভিবাসীরা নতুন নিয়মের কারণে ভীত ও উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষ নিজের শেকড়ে ফিরে যেতে ও মেক্সিকোর নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে আগ্রহী।
মেক্সিকোর তিজুয়ানা শহর সম্প্রতি ‘আই অ্যাম মেক্সিকো’ শিরোনামে একটি বড় ক্যাম্পেইন চালু করেছে। এই কর্মসূচি মূলত মেক্সিকান বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া মার্কিন নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদান করতে শুরু করেছে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নাগরিকরা মেক্সিকোর নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন সুবিধা পাবেন এবং তাদের নিরাপত্তা ও আইনি অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।
লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দা এসমেরালদা বায়েজ বলেন, ‘আমার বোন ইতোমধ্যেই দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছে। এখন আমিও মেক্সিকোর নাগরিক হতে চাই। আমেরিকাতে থাকতে চাই না, চাই মেক্সিকোতে নতুন জীবন শুরু করতে।’
মেক্সিকো সরকার বলছে, দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণকারী মার্কিন নাগরিকরা মেক্সিকোর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের সুযোগ এবং ভ্রমণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া মেক্সিকোর নাগরিক হিসেবে তাদের আইনি ও সামাজিক অধিকার আরও শক্তিশালী হবে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ হাজার মার্কিনি এই কর্মসূচিতে আবেদন করেছেন। ক্যাম্পেইনটি চলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
অভিবাসন নীতির কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE)-এর কার্যক্রম সম্প্রতি বেড়েছে। শান্ত এলাকা থেকেও অভিবাসীরা এখন নিয়মিত ICE কর্মকর্তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করছেন। এতে অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ভয় এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেকেই জেলের ভয় এবং নিজ দেশে প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা দেখেই দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের দিকে ঝুঁকছেন।
উন্নত জীবনের আশায় বহু মানুষ মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আগত। তবে সাম্প্রতিক অভিবাসনবিরোধী অভিযান ও ICE-এর কড়াকড়ি এই মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টি করেছে। তাই তারা মেক্সিকোর নাগরিকত্ব গ্রহণ করে নিজেদের শেকড়ে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন অভিবাসন নীতি ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে এই প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। আগামী কয়েক মাসে আরও হাজার হাজার মার্কিনি মেক্সিকোর নাগরিকত্ব নিতে আগ্রহী হতে পারেন।