হাত, তুমি উদার হও

3 months ago 42

হাত আমাদের শরীরের একটি অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মায়ের হাত ধরে হাঁটতে শিখেছি, বাবার হাত ধরে সাহস পেয়েছি। নিজের হাতে নিজেকে গড়েছি। আমরা হাত ধরেছি, হাত ছেড়েছি, হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করেছি। হাত তুলে প্রভুর কাছে মোনাজাত করি। হাতে হাত রেখে জীবনের সঙ্গী/সঙ্গিনী হই। হাত দিয়ে আমরা অর্থ উপার্জন করি এবং কুশলাদি বিনিময় করি।

হাত দিয়ে কতই না কী করি! পৃথিবীতে এমনও মানুষ আছে যাদের হাত নেই, জন্মের পর বা পরে কোনো কারণে হাত অচল হয়ে গেছে, তারাও হাত ছাড়া জীবনযাপন করে চলছে। হাত থাক বা না থাক, জীবনের সমাধান খুঁজে নেওয়া যায়। তবে হাত থাকলে জীবনের কাজগুলো সহজতর হয়। আমরা হাত দিয়ে ধরি, করি, অনুভব করি।

আমার বাম হাত টেলিফোনটি চোখের সামনে ধরে রেখেছে, ডানহাত ঝটপট করে লিখছে। চোখ দুটি ছোট্ট কী-বোর্ড ও ডিসপ্লেতে নজর রাখছে। মন ভাবনাগুলোকে হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে প্রকাশ করছে। মাঝে মাঝে সবকিছু থেমে যায়। তখন চোখ দুটি লেখাটি পড়ে, মন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে, দরকারে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে।

আমি এ মুহূর্তে একা, মন এবং জ্ঞানে নীরব, নিস্তব্ধ হয়ে শুধু কমান্ড ফলো করছি। আমার শরীরে কত শত কোটি কম্পোনেন্ট কিন্তু সবকিছু কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে লিখছে! আমার দেহে একাধিক ‘নফস’ রয়েছে, একটি বিশেষ ‘নফস’ সবকিছু মনিটরিং করছে। আমি তার কমান্ড অমান্য করতে পারি না।

সবকিছু নেতৃত্বাধীন, কিন্তু মাত্র একজন নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমার হাতের আঙুল থেমে যাচ্ছে কারণ সে অর্ডার ফলো করছে। কিন্তু কার? আমার মনে হচ্ছে, যা কিছু চলছে সবই একটি বিশেষ ‘নফস’ কমান্ডের ওপর। এই ‘নফস’ দ্বারা যা কিছু নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তাকে আমরা আল্লাহ বলে ডাকি।

লেখার শুরুতে আমি হাত নিয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম, মনে হচ্ছিল হাত বিশাল কিছু। কারণ দুনিয়ায় হাতের অনেক ক্ষমতা, এমনকি আমার কাছেও। কিন্তু লিখতে গিয়ে বুঝলাম, হাতকে আমার দেহের ভেতর থেকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে। হাত থেকে আত্মা, আত্মা থেকে ‘নফস’ এবং ‘নফস’ থেকে আল্লাহ---দ্য গ্রেটেস্ট অলমাইটি।

বাংলাদেশ ছেড়েছি চল্লিশ বছর আগে। যাবার বেলায় মা হাত দুটি ধরে বলেছিল, চিঠি দিয়ো বাবা। দূরপরবাস থেকে বহুবার চিঠি লিখেছি। বাবা-মা যখন এসেছেন, নিজ হাতে রান্না করে তাদের পরিবেশন করেছি। বাবা-মা মারা গেছেন, মাকে নিজ হাতে কবর দিয়েছি। মৃত্যুর পর নতুন জীবন শুরু হবে নাকি এ জীবন তখনই শেষ হবে আজীবন, জানি না।

তবে আমি জানি, হাত ধরে হাঁটা একটি স্বাভাবিক ক্রিয়া। এখন জানি, হাত দিয়ে অনেক কিছু করা যায়। হাতের গুণাগুণ সম্পর্কে জানার পর আমি বিশ্বাস করছি যে, আমার হাতের জোর বাড়ছে। আমি আমার কাজের মাধ্যমে হাতের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলছি। হাত নিজেই নিয়ন্ত্রণের প্রতীক। আমি আমার হাত দিয়ে অনেক কিছু করতে পারি, এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমি কাজ করে চলছি।

অতএব, আমার হাত যেন আজীবন অন্যের দরকারেও বাড়িয়ে দিতে পারি সেই প্রত্যাশা করি। হাত, তুমি উদার এবং মহান হও।

রহমান মৃধা
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
[email protected]

এমআরএম/জেআইএম

Read Entire Article