হাত-পা হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে আসে, এটি কীসের লক্ষণ?

শীত এলেই অনেকের হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আসে। ভোর বা সন্ধ্যার দিকে তো সমস্যা আরও প্রকট হয়। মফস্বল, সীমান্ত কিংবা নদীবিধৌত অঞ্চলে বসবাসকারীরা এ সময় যেন নিত্যদিনের সঙ্গী করে নেন এই অস্বস্তিকে। তবে প্রশ্ন হলো, শুধু আবহাওয়ার কারণে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া কতটা স্বাভাবিক? আর যদি বছরের অন্য সময়েও হঠাৎ করে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে কিংবা সব সময়ই শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হয়, তাহলে কি তা কোনো ভেতরকার রোগের সংকেত? বিষয়টি নিয়ে মানুষের মাঝে রয়েছে নানা ভুল ধারণা ও অজানা ভয়।  একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নিবন্ধে এই ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা দিয়েছেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকার ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আফলাতুন আকতার জাহান।  চলুন তাহলে হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার কারণগুলো জেনে নিই— রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া ডা. আফলাতুন আকতার জাহান বলেন, হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার সবচেয়ে প্রধান কারণ রক্ত সঞ্চালন দুর্বল হওয়া। রক্তনালির মধ্যে রক্তপ্রবাহ কমে গেলে শরীরের দূরের অংশগুলো, যেমন হাত ও পা প্রথমে তাপ সরবরাহ কম পায়।  সম্ভাব্য কারণ হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল ও হৃদ্‌রোগ বা হৃদ্‌যন্ত্রের

হাত-পা হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে আসে, এটি কীসের লক্ষণ?

শীত এলেই অনেকের হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আসে। ভোর বা সন্ধ্যার দিকে তো সমস্যা আরও প্রকট হয়। মফস্বল, সীমান্ত কিংবা নদীবিধৌত অঞ্চলে বসবাসকারীরা এ সময় যেন নিত্যদিনের সঙ্গী করে নেন এই অস্বস্তিকে।

তবে প্রশ্ন হলো, শুধু আবহাওয়ার কারণে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া কতটা স্বাভাবিক? আর যদি বছরের অন্য সময়েও হঠাৎ করে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে কিংবা সব সময়ই শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হয়, তাহলে কি তা কোনো ভেতরকার রোগের সংকেত? বিষয়টি নিয়ে মানুষের মাঝে রয়েছে নানা ভুল ধারণা ও অজানা ভয়। 

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নিবন্ধে এই ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা দিয়েছেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকার ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আফলাতুন আকতার জাহান। 

চলুন তাহলে হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার কারণগুলো জেনে নিই

রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া

ডা. আফলাতুন আকতার জাহান বলেন, হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার সবচেয়ে প্রধান কারণ রক্ত সঞ্চালন দুর্বল হওয়া। রক্তনালির মধ্যে রক্তপ্রবাহ কমে গেলে শরীরের দূরের অংশগুলো, যেমন হাত ও পা প্রথমে তাপ সরবরাহ কম পায়। 

সম্ভাব্য কারণ হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল ও হৃদ্‌রোগ বা হৃদ্‌যন্ত্রের দুর্বলতা।

অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা

শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্তের অক্সিজেন বহনের ক্ষমতাও কমে যায়। এতে হাত-পা সহজেই ঠান্ডা হয়ে যায়। সঙ্গে থাকতে পারে ক্লান্তি, মাথাঘোরা, ফ্যাকাশে ত্বক।

থাইরয়েড হরমোন কমে যাওয়া বা হাইপোথাইরিডিজম

থাইরয়েড শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোন কমে গেলে শরীর তাপ উৎপাদনও কম হয়; সঙ্গে ওজন বেড়ে যাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব, চুল পড়া, ত্বক শুষ্ক হওয়ার মতো উপসর্গও থাকে।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি

ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে হাত-পায়ে ঝিনঝিন ভাব ও ঠান্ডা অনুভূতি দেখা দিতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে জ্বালাপোড়া ও সংবেদন কমে যাওয়া।

ভিটামিনের ঘাটতি

বিশেষ করে বি১২, আয়রন, ফলেট— এগুলো কম থাকলে স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে। রক্তশূন্যতাও তৈরি হতে পারে, যার ফলে হাত-পা ঠান্ডা লাগে।

ধূমপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন

নিকোটিন ও ক্যাফেইন রক্তনালি সংকুচিত করে। ফলে রক্ত সঞ্চালন কমে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়।

রেনোডস ডিজিজ

এটি একটি বিশেষ অবস্থা, যেখানে ঠান্ডা বা মানসিক চাপের কারণে হাত-পায়ের আঙুলের রক্তনালি হঠাৎ সংকুচিত হয়ে পড়ে। ফলে আঙুল সাদা বা নীলচে হয়ে যায় এবং খুব ঠান্ডা লাগে।

স্ট্রেস বা ঘুমের সমস্যা

স্ট্রেস হরমোন রক্ত সঞ্চালনে প্রভাব ফেলে। এতে হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি

১. হাত-পা সব সময় বরফের মতো ঠান্ডা থাকলে

২. আঙুলের রং সাদা বা নীল হয়ে গেলে

৩. ঝিনঝিন, অবশ ভাব, জ্বালাপোড়া বা ব্যথা থাকলে

৪. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা মাথাঘোরা থাকলে

৫. ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের ইতিহাস থাকলে

নিয়মিত করণীয়

১.গরম পানিতে হাত-পা ভিজানো।

২. পর্যাপ্ত পানি পান ও সুষম খাবার।

৩. ভিটামিন ই, আয়রন, ফলেটসমৃদ্ধ খাদ্য।

৪. ধূমপান ও অতিরিক্ত চা/কফি কমানো।

শেষকথা

ডা. আফলাতুন জাহান বলেন, হাত-পা ঠান্ডা হওয়া হালকা সমস্যা মনে হলেও এর পেছনে থাকা রোগগুলো অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত হলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow