হাতের টানেই উঠে আসছে কোটি টাকার সড়কের কার্পেটিং

3 months ago 21

হাত দিলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং, চাপ দিলেই ভেঙে পড়ছে কোটি টাকার উন্নয়ন। এমন দৃশ্য এখন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা-বেড়িরহাট সড়কে।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, রাস্তা কার্পেটিং করার পরদিনই উঠে যায়, যেন রাস্তা নয়- এটা দুর্নীতির জ্যান্ত দলিল!

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এক কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রকল্প নিয়ে শুরু করেছিল ৩ হাজার ৭০০ মিটার দীর্ঘ সড়কটির সংস্কার। কাজ পেয়েছিল ‘মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ’। কিন্তু শুরুতেই নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের বিষয়টি নজরে পড়ে।

শনিবার (১৪ জুন) ১৫০ মিটার রাস্তার কাজ শেষ হতেই রোববার (১৫ জুন) এক মোটরসাইকেল আরোহী দুর্ঘটাবশত সড়কে পড়ে যান। পরে কৌতূহলী জনতা এক পর্যায়ে হাত দিয়ে টান দিতেই শুরু হয় জাদুর খেলা- চাপড়া ধরে উঠে আসছে কার্পেটিং! মুহূর্তেই জড়ো হয় মানুষ, বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো এলাকা। পরে সহকারী প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারপক্ষকে অবরুদ্ধ করা হয় এবং রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

বাজারের মুদি দোকানি জুয়েল রানা বলেন, ‘শুরু থেকেই বারবার বলেছি, ভাই এভাবে কাজ করলে চলবে না। কিন্তু ঠিকাদার যেন নিজেদের জমিদার ভাবছে!’

স্থানীয় মেহেদি হাসান কাছেদ বলেন, ‘কার্পেটিং বলতে কিছুই হয়নি, হয়েছে কাগজ লাগানো রাস্তা। হাত দিতেই সব উঠে আসে। এটা উন্নয়ন না, প্রতারণা!’

তিনি বলেন, ‘সহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের লোক ঘটনাস্থলে ছিল। আমরা যখন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলি, তখন বাকবিতণ্ডা হয়। পরে দুই-তিনশ মানুষ এসে তাদের অবরুদ্ধ করে কাজ বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তারা সটকে পড়ে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, শিশু-কিশোররাও মজা করে হাত দিয়ে তুলে দেখাচ্ছে সরকারের ‘উন্নয়নযজ্ঞ’।

স্থানীয় ভ্যানচালক সিরাজ বিশ্বাস বলেন, ‘দীর্ঘদিন ভাঙা রাস্তায় কষ্ট করে চলেছি। কাজ শুরু হওয়ায় ভেবেছিলাম এবার বুঝি স্বস্তি মিলবে। কিন্তু এখন দেখি, আগের রাস্তাই ভালো ছিল। কার্পেটিং একদিন পরেই উঠে যাচ্ছে- এটা কেমন কাজ! এখন শুধু আল্লাহ ভরসা।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘কার্পেটিংয়ের বেশিরভাগ অংশ এখনো বাকি। এর মধ্যেই এমন দুর্বল কাজ দেখে মানুষ ক্ষেপে গেছে। কাজ যেন নতুন করে ভালোভাবে করা হয়- সেটাই দাবি।’

বিষয়টি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ উল্লেখ করে অভিযোগ অস্বীকার করে মাহমুদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদ বলেন, ‘শিডিউল অনুযায়ী কাজ করছি। ৭২ ঘণ্টার আগে রাস্তা পুরোপুরি বসে না। ২৪ ঘণ্টার মাথায় টান দিলে তো এমন হবেই।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত ইসলাম বলেন, ‘গুণগত মান ঠিক আছে বলেই মনে করছি, তবে স্থানীয়দের আপত্তির কারণে কাজ আপাতত বন্ধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে দুই-একদিনের মধ্যে কাজ পুনরায় শুরু করার চেষ্টা চলছে।’

Read Entire Article