হামলার শিকার দেশের যেসব থানা

3 months ago 11

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ও পদত্যাগের পর যখন উত্তাল দেশ তখন দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশ সদস্যদের মারধর, হত্যাসহ থানায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় থানায় অগ্নিসংযোগসহ ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আহত অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান আরও এক পুলিশ সদস্য।

এছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানায় হামলা চালিয়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় থানার সীমানা প্রাচীরের ভেতরে থাকা রেকার ও থানার কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা৷

হামলার শিকার দেশের যেসব থানা

নোয়াখালীর চাটখিল ও সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগর ঘটনায় সোনাইমুড়ী থানার তিন পুলিশসহ আটজন নিহত হন। এ থানার ছয়জন পুলিশ সদস্য এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এসব সহিংস ঘটনা ঘটে। এ সময় লুট হয় থানার বেশিরভাগ অস্ত্র ও গুলি।

গত ১৮ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের মস্তফাপুরে পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এরপর ১৯ তারিখে মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার ১নং পুলিশ ফাঁড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে ফরিদপুরে কোতোয়ালি থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। অবরুদ্ধ পুলিশেরা থানা থেকে বের হওয়ার সময় টিয়ারশেল ও গুলি বর্ষণ করলে দুইজন নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে থানা ছেড়ে পুলিশেরা বেরিয়ে গেলে থানা ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ও কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

হামলার শিকার দেশের যেসব থানা

একইদিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানায় পুলিশের গাড়ি, মোটরসাইকেল ও থানা কার্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে রাত ১০টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে সাদা পোশাকে পুলিশ থানা থেকে বের হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরে সোমবার (৫ আগস্ট) কুমিল্লার তিতাস থানা ঘেরাও করতে গেলে থানা-পুলিশ আত্মরক্ষার্থে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় অন্তত ২০-৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন। এতে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা থানা এবং পাশের একটি মার্কেটে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় থানার গেইট পাহারার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য রেজাউল করিম ও মাঈন উদিনকে গণপিটুনী দিলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

সোমবার কক্সবাজারে সদর থানা, ট্রাফিক পুলিশ অফিস, ঈদগাঁও থানা ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। লুট করে নিয়ে যায় মামলার আলামত, শতাধিক মোটরসাইকেল, সরকারি ডকুমেন্টস, আসবাবপত্রসহ মূল্যবান মালামাল। সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনীর টহল টিম এসে এসব লুট নিয়ন্ত্রণ করলেও রাত ১১টার দিকে লুটকারীরা আবার থানায় ঢুকে দ্বিতীয়বার লুটপাট চালায়।

সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় হামলা করে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় গুলিতে আহত হন অন্তত ২০ জন। এই ঘটনার পর লুটপাট চলে থানায়।

হামলার শিকার দেশের যেসব থানা

টাঙ্গাইল সদর থানা ও ধনবাড়ী থানায় হামলা ও সংঘর্ষে একজন নিহত হন। সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর থানা, বিকেলে ধনবাড়ী থানা ও বাসাইল থানায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

মানিকগঞ্জের শিবালয় থানা, পাটুরিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি, সিংগাইরের ধল্লা পুলিশ ফাঁড়ি, পাটুরিয়া পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও মানিকগঞ্জ ট্রাফিক কার্যালয় ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

বগুড়ার সদর থানা, সার্কেল এসপির কার্যালয়, সদর পুলিশ ফাঁড়ি, ট্রাফিক পুলিশ অফিস, দুপচাচিয়া ও শেরপুর থানা ভাঙচুর করা হয়।

ফেনী মডেল থানা, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঞা ও মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়।

হামলার শিকার দেশের যেসব থানা

কুষ্টিয়া মডেল থানা ও খোকসা থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পাওয়ার পর চাঁদপুরের কচুয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুনুর রশিদ গণপিটুনীতে ও ফরিদগঞ্জে বিক্ষুব্ধরা থানায় হামলার চেষ্টাকালে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত (২০) নামে এক ছাত্রনেতা নিহত হন।

এছাড়া চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ প্রজনন রক্ষা অভিযানে জব্দ জেলে নৌকা, ট্রলার ও ট্রলারে থাকা ইঞ্চিনসহ বিবিন্ন সরঞ্জামাদি লুট করে নিয়ে যান বিক্ষুব্ধ জেলেরা। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে ঘাটের কিনারে বেঁধে রাখা ট্রলার ও নৌকা নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবরে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও রামগঞ্জ থানায় হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় মালামাল ও অস্ত্র লুট করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

ঝিনাইদহের মহেশপুরের দত্তনগর পুলিশ ক্যাম্পে সোমবার হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

জয়পুরহাট সদর থানায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। সেসময় গুলিতে মেহেদী নামে একজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। পরে সেনাবাহিনী সদস্যরা এসে থানায় অবরুদ্ধ থাকা পুলিশ সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান।

এফএ/এএসএম

Read Entire Article