শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। সামরিক শাসন ঘোষণার জেরে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টে তাকে অভিশংসনের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো ভোটাভুটি হয়। এতে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতা।
দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত আগামী ছয় মাসের মধ্যে ইউনের অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি যদি পদ থেকে অপসারিত হন, তবে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউনেরই নিয়োগ করা প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু। ইউনের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। হান সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি সরকারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো।
আরও পড়ুন>>
এ নিয়ে পরপর দুজন দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হলেন। এর আগে ২০১৭ সালে পার্ক গিউন-হাইকে অপসারিত করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে প্রথমবার অভিশংসন চেষ্টার সময় ভোট বর্জন করেছিল ইউনের দল।
ইউন বলেন, যদিও এখন আমি কিছু সময় থেমে থাকছি, তবে আমি জনগণের সঙ্গে গত দুই বছর ধরে যে যাত্রা করেছি তা কখনো থামবে না। আমি কখনো হাল ছাড়বো না।
এদিন ইউনের অভিশংসনের খবর পেতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন পার্লামেন্টের কাছে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা। অন্যদিকে, ইউনের সমর্থকদের একটি সমাবেশ মুহূর্তেই খালি হয়ে যায়।
বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জায়-মিউং বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা, জনগণ, এটি করেছেন। আপনারা নতুন ইতিহাস রচনা করছেন।
এদিন ইউনের পিপল পাওয়ার পার্টির অন্তত ১২ জন সদস্য বিরোধী দলের অভিশংসনের প্রস্তাবে সমর্থন দেন। ৩০০ সদস্যের পার্লামেন্টে বিরোধীরা ১৯২টি আসন নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ইউনকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেওয়া আইনপ্রণেতাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০৪ জনে, বিপক্ষে ভোট দেন ৮৫ জন, বিরত ছিলেন তিনজন এবং অকার্যকর হয় আটটি ভোট।
গত ৩ ডিসেম্বর আচমকা দেশজুড়ে সামরিক শাসন জারি করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইউন। তুমুল প্রতিবাদের মুখে মাত্র ছয় ঘণ্টা পরই এই ঘোষণা প্রত্যাহার করেন তিনি। এই ঘটনা দেশটিতে একটি সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করে এবং আইনভঙ্গের অভিযোগে ইউনের পদত্যাগের জন্য জোরালো দাবি ওঠে।
পরে তিনি জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেও নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে অনড় থাকেন এবং পদত্যাগের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। তখন বিরোধী দলগুলো প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের জন্য ভোটাভুটির ঘোষণা দেয়।
বিদ্রোহের অভিযোগে বর্তমানে ইউনের বিরুদ্ধে আইনগত তদন্ত চলছে এবং তার বিদেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স
কেএএ/