বৈশ্বিক হালাল পণ্যের বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে এবং মালয়েশিয়াসহ আসিয়ান অঞ্চলের ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে ২১তম মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেসে (মিহাস) অংশ নিচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোক্তা পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ।
কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবেশন সেন্টারে (মিটেক) ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
প্রদর্শনীতে প্রাণ প্রায় ৫০০ ধরনের ভোক্তা খাদ্যপণ্য প্রদর্শন করছে, যার মধ্যে রয়েছে জুস, বেকারি, বিস্কুট, কনফেকশনারি, নুডলস, চাটনি, সস, চকলেট, অন্যান্য রেডিমেইড ফুড আইটেম।
বিশ্বের ৯০টি দেশ এবারের মিহাসে অংশ নিচ্ছে এবং এতে দুই হাজার ৩০০টি স্টলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য প্রদর্শন করছে।
মিহাসে অংশগ্রহণের লক্ষ্য হিসেবে প্রাণ জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার বাজারে অবস্থান শক্ত করার পাশাপাশি আসিয়ান দেশগুলোর ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো তাদের মূল উদ্দেশ্য। গত অর্থবছরে প্রাণ মালয়েশিয়ায় ৩০ মিলিয়ন ডলারের খাদ্যপণ্য রপ্তানি করেছে।
এ বছরের প্রদর্শনীতে কোরিয়ান নুডলস, বিভিন্ন বিস্কুট ও বাসিল সিড ড্রিংকস বিশেষভাবে ফোকাস দেওয়া হয়েছে।
- আরও পড়ুন
- মালয়েশিয়ায় শুরু হলো বৃহত্তম হালাল প্রদর্শনী
- কুয়ালালামপুরে প্রথমবারের মতো ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং ফেস্টিভ্যাল’
- মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক হালাল শোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন
গত অর্থবছরে প্রাণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ৩১৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ভোগ্যপণ্য রপ্তানি করেছে, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভোক্তা পণ্য রপ্তানি হিসেবেও বিবেচিত।
মালয়েশিয়ায় প্রাণ-এর খাদ্যপণ্যের একমাত্র আমদানিকারক পিনাকল ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম ভূঁইয়া বলেন, প্রাণ-এর এই মেলায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য, বিশাল অর্থনীতির হালাল ফুডের বাজারে ব্যবসা প্রসারের জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা, তাদের কাছে প্রাণ পণ্য তুলে ধরা। পাশাপাশি যারা হালাল অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে প্রাণ-এর ব্যবসায় ইনোভেশন আনা এবং সে অনুযায়ী হালাল ফুডের রপ্তানি বাজার সমৃদ্ধ করা।
সেলিম ভূঁইয়া আরও বলেন, এবারের মেলায় প্রাণ-এর প্রধান লক্ষ্য, আসিয়ান, দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে হালাল পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা এবং মেলা থেকে দুই মিলিয়ন ডলার সমমানের পণ্যের সরাসরি রপ্তানি আদেশ পাওয়া।
মালয়েশিয়া হালাল পণ্যের বড় বাজার। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনাইতে হালাল পণ্যের ব্যাপক বাজার রয়েছে। এই বাজারে প্রাণ পণ্যের সম্প্রসারণও মেলায় অংশ নেওয়ার অন্যতম লক্ষ্য।
বর্তমানে বিশ্বে হালাল ফুডের বাজার অনেক বড়। সারাবিশ্বে হালাল ফুডের বাজার প্রায় তিন ট্রিলিয়নের কাছাকাছি। বিশেষ করে সারা বিশ্বে ২০০ কোটির বেশি মুসলিম জনসংখ্যা এবং এই সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ায় হালাল ফুডের ব্যাপক বাজার রয়েছে। শুধু মালয়েশিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নয়, বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকাসহ বিশ্বের প্রতিটি জায়গায় হালাল ফুডের বাজার তৈরি হয়েছে।
- আরও পড়ুন
- ২০২৬ সালের মধ্যেই রপ্তানি করতে চায় ‘প্রপার্টি লিফটস’
- এবার পুরস্কার পেলো প্রাণ-আরএফএলের ৬ প্রতিষ্ঠান
- বিএসটিআইয়ে হালাল পণ্যের প্রদর্শনীতে প্রাণসহ ১০ প্রতিষ্ঠান
মালয়েশিয়া মিহাস ফেয়ার হালাল অর্থনীতিতে প্রবেশের জন্য ব্যাপক সুযোগ তৈরি করে। কারণ, মিহাস ফেয়ারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহের জন্য হাজির হন। আবার অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে হালাল পণ্যের বাজার সম্পর্কে ধারণা পান এবং সে অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় নিজেদের তৈরি করেন। তাই বিশাল এই অর্থনীতিতে প্রবেশ করতে মিহাস ফেয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বলে মন্তব্য করেন সেলিম ভূঁইয়া।
মেলা পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, অনেক দর্শক প্রাণের স্টলে পণ্য সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন।
মিহাস ফেয়ার ছাড়াও প্রাণ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গালফ ফুড ফেয়ার, জার্মানির আনুগা, ফ্রান্সের সিয়াল ফেয়ারসহ খাদ্যপণ্যের জন্য বিখ্যাত সব মেলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছে।
বর্তমানে বিশ্বের ১৪৮টি দেশে প্রাণ নিয়মিত রপ্তানি করছে। উল্লেখযোগ্য রপ্তানিকৃত দেশ-ভারত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
আইএইচও/এমএমএআর/এএসএম