হাসপাতালে গোরখোদক মনু মিয়া, ঘোড়াটি মেরে ফেলল দুর্বৃত্তরা

3 months ago 45

অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি গোরখোদক মোঃ মুনু মিয়া। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার এ প্রবীন মুন মিয়া নামেই পরিচিত। যে কারোর মৃত্যু সংবাদ কানে আসা মাত্রই খুন্তি, কোদাল, ছুরি, করাত, দা, ছেনিসহ সহায়ক সব যন্ত্রপাতি নিয়ে ছুটে যান কবরস্থানে। মানুষের অন্তিম যাত্রায় তিনি বাড়িয়ে দেন তার আন্তরিক দু’হাত। তবে তার অসুস্থতায় চলার সাথী  ঘোড়াটি মেরে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

গত শুক্রবার (১৬ মে) এই ঘোড়াটিকে মিঠামইন উপজেলা কাঠখাল ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামে তার ঘোড়াটিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এসময় এটির শরীরে জখমের চিহ্ন মিলেছে। বিষয়টা জানাজানি হলে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে এলাকায়।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগা পাড়া গ্রামের প্রবীণ মুরুব্বি মোঃ মুনু মিয়া। কবর খননের কাজ করে তিনি পার করে দিয়েছেন তার ৬৭ বছরের জীবনের সুদীর্ঘ ৪৯টি বছর। কোনো ধরনের পারিশ্রমিক কিংবা বখশিস না নিয়ে তিনি এ পর্যন্ত খনন করেছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর। দূরের যাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে নিজের ধানীজমি বিক্রি করে বেশ কয়েক বছর আগে কিনেছেন একটি ঘোড়া। এই ঘোড়ার পিঠে তিনি তুলে নেন তার যাবতীয় হাতিয়ার-যন্ত্র। সেই ঘোড়ায় সওয়ার হয়েই শেষ ঠিকানা সাজাতে মনু মিয়া ছুটে চলেন গ্রাম থেকে গ্রামে।

মুনু মিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার অসুস্থতার সুযোগে চলার পথে সাথী ঘোড়া বাহাদুরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে কে বা কাহারা। এই বিষয়টা জানাজানি হলে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে এলাকায়।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, এই ঘোড়াটি দুইদিন কাটখাল গ্ৰামের আশে পাশে দেখা গেছে। কিন্তু কে হত্যা করেছে সঠিকভাবে জানা যায়নি। ঘোড়ার হত্যাকারীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মনু মিয়া স্ত্রী রহিমা বেগমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ হলে তিনি জানান, তারে (মনু মিয়া) তাড়াতাড়ি করে ঢাকা নিয়ে আসলে ঘোড়াটিকে দেখার মতো কেউ ছিলো না। হয়তো রশি ছিঁড়ে চলে গেছে এখন খবর পেয়েছি ঘোড়াটাকে মেরে ফেলেছে। তার (মনু মিয়া) কাছে ঘোড়াটা সন্তানের মতো ছিলো। নিজের থেকে বেশি আদর যত্ন করেছে। আমরা বিচার চাই।

বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার।

Read Entire Article