• ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় একজন আটক
• শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ আন্দোলনকারীদের
• ভাইরালের নেশায় পেয়ে বসেছে অনেককে
• ‘একমাত্র দাবি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উপস্থিতি ও আশ্বাস’
• ‘দাবি যৌক্তিক, আন্দোলনে পদ্ধতিগত ত্রুটি’
• আন্দোলনে পাল্টে গেছে শেবাচিমের চিত্র
• তাৎক্ষণিক, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধাপে দাবি পূরণ
হাসপাতালের ট্রলি ধরলেই লাগে টাকা। রোগী দেখানোর সিরিয়াল থেকে ভর্তি পর্যন্ত থাকে দালাল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ওষুধ ও টেস্টের অপ্রতুলতা সর্বত্র। সরকারি হাসপাতালের এমন চিত্র যেন স্বাভাবিক ঘটনা। এর বাইরে নয় দেশের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম)। সম্প্রতি এ হাসপাতাল ঘিরে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে বরিশালের ছাত্র-জনতা।
টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। এরই মধ্যে সব দাবি মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিছু দাবি তাৎক্ষণিক পূরণ করছে, বাকি দাবি স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরু করেছে। এতেও সন্তুষ্ট নয় আন্দোলনকারীরা। ১৭ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্র-জনতা। এখন তাদের একমাত্র দাবি— স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উপস্থিতি ও আশ্বাস।
এদিকে, আন্দোলনে যোগ দিয়েছে পতিত স্বৈরাচারের প্রতিনিধিরাও। আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় ‘জয় বাংলা’ বলে বক্তব্য শেষ করায় একজনকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। আজ শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং গত রোববার নিজেদের দু’গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ‘এই আন্দোলনকে ঘিরে সুযোগ নিচ্ছে পতিত স্বৈরাচার। ছাত্রদের ওপর ভর করে একটি ম্যাসাকার করতে পারে তারা।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ‘তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আমরা মেনে নিয়েছি। বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কাজও শুরু হয়েছে। তবে উপদেষ্টা যেতে হবে— এমনটি তো দাবি হতে পারে না। আজ এক জায়গায় গেলে সব জায়গায় বলবে, উপদেষ্টা আসতে হবে। কাজ রেখে সবখানে যাওয়া কী সম্ভব? আর গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে এর মধ্যে পতিত স্বৈরাচারের সন্ত্রাসীরা যোগ দিয়েছে। কোনোভাবে উপদেষ্টাকে নিয়ে সেখানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তারা। এজন্য আমরা ভাবছি— ব্যক্তির উপস্থিতির চেয়ে দাবিপূরণই মূল বিষয়। তাই তাদের দাবি পূরণে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
আন্দোলনে পাল্টে গেছে হাসপাতালের চিত্র
জাগো নিউজের বরিশাল প্রতিনিধি আরিফ শাওন হাসপাতাল ঘুরে জানিয়েছেন, ‘পাল্টে গেছে বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিত্র। হাসপাতালের করিডোর ও সব টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ কাজে অস্থায়ীভাবে ৯০ জন হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যকে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উন্নয়নে আটটি অটোমেটিক মেশিন চালু আছে। আরও ১২টি অটোমেটিক মেশিন আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ সরবরাহ করা হবে। হাসপাতাল জীবাণুমুক্ত রাখতে ২০টি স্প্রে মেশিন আনা হয়েছে। হাসপাতালের সব টয়লেটের দরজা ও জানালা মেরামত ও পরিবর্তনের কাজ চলছে। ভেতরে ১০০টি সিলিং ফ্যান লাগানো হয়েছে।’
‘রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালে সব স্বেচ্ছাসেবী ট্রলি ম্যানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নতুন ৪৬ জন জনবল প্রাপ্তির পর বর্তমানে ট্রলি ম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারি স্টাফদের। হাসপাতালে রোগী বহনের সব পুরোনো ট্রলি মেরামত করা হয়েছে, দেওয়া হয়েছে নতুন ট্রলি। সাতটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এ মনিটরিং টিম সকাল, বিকেল ও রাতে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে মনিটরিং করছে।’
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ. কে. এম. মশিউল মুনীর জানান, হাসপাতালের রোগীদের জন্য নতুন করে আরও ১০০টি বেডের ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বেডগুলো বসানো হবে। হাসপাতালে রোগীর দালাল, বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি, হকার ছদ্মবেশে হাসপাতালে প্রবেশকারীদের দেখা মাত্রই ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অসংখ্য দালাল, প্রতারক ও হকারকে আটক করে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে অবাধে প্রবেশ প্রতিহত করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালের একজন ওয়ার্ড মাস্টার ও একাধিক স্টাফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ বাক্স বসানো হয়েছে। অভিযোগ সংগ্রহ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে নষ্ট লিফট মেরামতসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে নতুন করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের চাহিদা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার এবং দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য সব নার্সকে সতর্ক করা হয়েছে।’
- আরও পড়ুন
- উপদেষ্টা না আসা পর্যন্ত অনশন অব্যাহত রাখার ঘোষণা, ফিরে গেলেন ডিজি
- স্বাস্থ্যখাতের কাঠামোগত সংস্কারে দৃঢ় পরিকল্পনা
- নির্দলীয়, সৎ ও দক্ষ লোক পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে
- বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ধরে পুলিশে দিলেন আন্দোলনকারীরা
তিনি বলেন, ‘নির্মাণাধীন ৪৬০ শয্যা বিশিষ্ট ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্রের কাজ দ্রুত শেষ করে হস্তান্তরের বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ হবে। একইভাবে দ্রুততার সঙ্গে বরিশাল শিশু হাসপাতাল চালুর প্রক্রিয়া চলছে। ডিসেম্বরে হস্তান্তর হবে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এটির কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। পাশাপাশি হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে টেলিথেরাপি, এমআরআইসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির চাহিদা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের লিনেন প্ল্যান্ট আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে।’
অকেজো যন্ত্রপাতি চলছে মেরামত
আন্দোলনের মধ্যে বরিশাল মেডিকেলে অকেজো যন্ত্রপাতি মেরামত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পাঁচ সদস্যের একটি দল ঢাকা থেকে বরিশাল পৌঁছায়। তারপরই তারা কাজ শুরু করেন। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপসহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রনিক্স) অপু সরকার। অপর চারজন হলেন উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) শুভদেব সরকার, উপসহকারী প্রকৌশলী (আরএসি) মো. মাহাবুব হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী (অপটিক্যাল) হাফিজুর রহমান ও টেকনিশিয়ান (ইলেকট্রনিক্স) মো. তৌহিদুর জামান।
হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘কারিগরি টিম অকেজো মেশিন সরেজমিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুততার সঙ্গে অকেজো যন্ত্রগুলো চালু করা হবে। এ ছাড়া রোগীর সেবার মান বাড়াতে একটি এমআরআই মেশিন, ক্যাথল্যাব ও সি-আরম মেশিন বরাদ্দ হয়েছে।’
হাসপাতালের ইন্সট্রুমেন্ট কেয়ারটেকার শাখা থেকে জানা যায়, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে ইটিটি, ইকো, কার্ডিয়াক ডিফাইব্রিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, ইসিজি মেরামত হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে ক্যাথল্যাব (এনজিওগ্রাম), সিটি স্ক্যান, এক্সরে, চোখের লেসিক, চোখের ফ্যাকো, অপটিক্যাল কোহেরেন্স টমোগ্রাফি (ওসিটি), ইউরোলজি লিথোরিপটর, সি-আরম, ডায়াথার্মি, অ্যান্ডোসকপি মেশিন চালু করা হবে।
যে কারণে চাপ সামলাতে হিমশিম
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৬৮ সালে মাত্র ৫০০ শয্যার অবকাঠামো নিয়ে নির্মিত হয়েছিল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ৫৮ বছর পরও হাসপাতালটির অবকাঠামোগত তেমন উন্নতি হয়নি। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন নতুনভাবে ৭০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। ফলে আন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকেন প্রায় ৩ হাজার রোগী। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার রোগী। প্রতি একজন রোগীর সঙ্গে তাদের স্বজন বা দর্শনার্থী আসেন গড়ে ৩ জন করে। মোট ৬ হাজার রোগীর সঙ্গে এ স্বজন বা দর্শনার্থী মিলিয়ে হয় ২৪ হাজার মানুষের সমাগম। এর সঙ্গে হাসপাতাল ও কলেজের ৫০০ চিকিৎসক, প্রায় এক হাজার নার্স, হাসপাতালের প্রায় ৫০০ অন্যান্য স্টাফ, মেডিকেল কলেজ, আইএইচটি ও নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীসহ আরও প্রায় ৬ হাজার সেবাদানকারী যোগ হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এ হাসপাতালে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় অতিরিক্ত চাপে হাসপাতালের টয়লেট ও পরিবেশ নোংরা হওয়াসহ সর্বত্র সমস্যা হচ্ছে। শয্যার তুলনায় ছয়গুণ রোগী ভর্তি হওয়ায় অনেককে মেঝে বা বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হয়। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।
আন্দোলনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
গতকাল (১২ আগস্ট) দুপুরে নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন সরোয়ার তালুকদার। বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন তিনি। এসময় তাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারী তামিম বলেন, ‘সরোয়ার তালুকদার নামের ওই ব্যক্তি আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তিনি স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের কথাও বলেছেন। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তব্য শেষ করেন। তখন আমরা তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিই।’
- আরও পড়ুন
- স্বাস্থ্যখাতে চীনা বিনিয়োগ চায় সরকার: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
- স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির প্রকট অভাব: উপদেষ্টা
- মেডিকেল কলেজগুলোর গুণগত মান বাড়াতে হবে: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন সিকদার বলেন, একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। আমরা ওই ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করছি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না দেখা হচ্ছে। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে আছেন।
দাবি যৌক্তিক, আন্দোলনে পদ্ধতিগত ত্রুটি
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল শাখার সম্পাদক রফিকুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। তবে আন্দোলনে পদ্ধতিগত ত্রুটিও আছে। তারা যেভাবে দিনের পর দিন রাস্তাঘাট বন্ধ করে আন্দোলন করছে, তা মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।’
তিনি বলেন, ‘বরিশাল হাসপাতালের সিট ছিল ৫০০, পরে সেটি বাড়িয়ে এক হাজার করা হয়েছে। সেখানে রোগী আসে ২৫০০ থেকে ৩ হাজার। শুধু বাংলাদেশেই দেখা যায়, এক রোগীর সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন কয়েকজন থাকে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ হওয়ায় সবকিছু ঠিকভাবে করা যায় না। এছাড়া বড় চিকিৎসকরা রোগী দেখেন না, ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই সব সামলান। হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। তারাই রোগীদের টেনে-হিঁচড়ে টাকা নেওয়ার কাজটি করে। হাসপাতালের ক্রয় প্রক্রিয়াও সঠিক নয়। স্থানীয় নাগরিক সমাজের সম্পৃক্ততা নেই। ওষুধ পাচার বা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিতরণ হয়। এখন এসব সমস্যা তো তিনদিনে সমাধান করা সম্ভব নয়।’
‘একমাত্র দাবি—স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উপস্থিতি ও আশ্বাস’
এ বিষয়ে আন্দোলনের মুখপাত্র নাভিদ আসিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিচালকের পক্ষ থেকে যেসব দাবি পূরণের কাজ হয়েছে বা হচ্ছে, তা আমরা জানি। জনবল নিয়োগ ও অবকাঠামোর উন্নয়নের বিষয়ে তার নিয়ন্ত্রণ নেই, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। তারা আমাদের আশ্বস্ত করলে আমরা নিশ্চিত হব।’
‘জনবল কাঠামো নিয়ে কাজ হচ্ছে, আমি চিঠি দেখেছি মন্ত্রণালয়ে’—এমন কথা জানালে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের চিঠির কার্যক্রম প্রতিনিয়ত চলছে। এগুলো আমাকে পরিচালক মহোদয় এক মাস আগেও দেখিয়েছেন, আমরা এগুলো বিশ্বাস করি না। আমাদের একমাত্র দাবি—উপদেষ্টা স্বয়ং উপস্থিত হবেন এবং তিনি বলবেন, আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি। এবং হয়তো আমরা একটি প্রতিনিধি দল তৈরি করে তাদের মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে পারি, তাহলে আন্দোলনরতরা সন্তুষ্ট হবেন।’
ভাইরালের নেশা কারো কারো, সুযোগ নিতে উঁকিঝুঁকি অন্যদের
বুধবার বিকেলে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে তিন দফা দাবিতে বরিশালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়েছে। শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের হটিয়ে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। পাল্টা ধর্মঘট ডেকে বরিশাল থেকে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা।
গত রোববার (১০ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনকারীদের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মহিউদ্দিন রনিসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রনি বাদে আহতরা হলেন— মোস্তাফিজুর রহমান, রাফি, সিফাত ও সুহান। বাকি আহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও আহতদের সূত্রে জানা যায়, রোববার স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের ১৪তম দিন বিকেলে নথুল্লাবাদ এলাকায় দু’গ্রুপ শিক্ষার্থীর মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র এবং ধূমপান নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী।
নিজেদের দ্বন্দ্ব, শ্রমিকদের সংঘর্ষ এবং জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া একজন আটক— এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা সংস্থা আশঙ্কা করছে, ভাইরাল হওয়ার আশায় একটি পক্ষ আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়। তাদের মধ্যে আরেকটি পক্ষে আন্দোলন থেকে সরে যেতে চায়। একটি বিক্ষব্ধু পক্ষও তৈরি হয়েছে। যার ফলে আজ শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আর এ সুযোগে তৃতীয়পক্ষ পতিত স্বৈরাচারের দোসররা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করতে পারে।
এসইউজে/এমএএইচ/জিকেএস