শেরপুর ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে রাতে অবাধে গরু ঘোরাফেরা করছে—এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেলিম মিঞা বলেন, ‘হাসপাতালে গরু পাহারা দেওয়া দায়িত্ব আমার না’। তবে সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শাহিন বলেন, ‘ডা. সেলিম মিঞার আচরণ দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়’।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনো শূন্যপদে চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ হয়নি। চিকিৎসকের ৫৮ পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৩০ জন। এর মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট ১০টির মধ্যে ৯টি, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১৩টির মধ্যে আটটি, অ্যানেসথেটিস্ট তিনটির মধ্যে একটি, রেজিস্ট্রার ৯টির মধ্যে পাঁচটি পদশূন্য রয়েছে। নার্সের ৮৭টি পদের মধ্যে ৯টি শূন্য রয়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দালালদের দৌরাত্ম্য, যন্ত্রপাতি বিকল এবং কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শেরপুর গ্র্যাজুয়েট ক্লাবের সভাপতি আল-আমিন রাজু বলেন, “জেলার মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল হওয়ার কথা ছিল এই হাসপাতাল। সেটি না হয়ে ভোগান্তির আরেক নাম যেন ‘শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল’। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতালের সেবার মান উন্নত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানাই।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আজকের তারুণ্যের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন বলেন, ‘দায়িত্বহীনতার অভাবেই শেরপুর জেলা হাসপাতালের এই করুণ অবস্থা। তত্ত্বাবধায়ক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এ অবস্থায় যেতো না। আমরা হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কাজ করে আসছি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো ইচ্ছাই নেই ভালো কিছু করার।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখ্য সংগঠক মোর্শেদ জিতু তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘গত রাতে হাসপাতালে গরু চলাচল করেছে—এটা নতুন কিছু না। হাসপাতালের দুর্নীতি, অনিয়ম, দালাল নির্মূল করতে না পারায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক মামুনুর রহমান বলেন, ‘এটা হাসপাতাল না, এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকসেবীদের নিরাপদ আড্ডাস্থল, দালালদের চারণভূমি, রোগী ও স্বজনদের হেনস্তাসহ সবকিছুই হচ্ছে এখানে। দেখার কেউ নেই। বারবার বিষয়টি বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েছি, কিন্তু যেই লাউ সেই কদু।’
শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘ঘটনাটি (গরু বিচরণ) জানার পরপরই হাসপাতালে পরিদর্শন করেছি। গেটে দায়িত্বে থাকা আনসারদের অবহেলার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ডা. সেলিম মিঞার আচরণ দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
মো. নাঈম ইসলাম/এসআর/এমএস