হাসপাতালের সামনে মেলার আয়োজন, ডিসি-এসপিকে আইনি নোটিশ

3 hours ago 5

শরীয়তপুর জেলা সদর হাসপাতালের সামনেই চলছে শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। বিকেল পর্যন্ত কোনোভাবে পার হলেও বিকেলের পর থেকে সড়কে সৃষ্টি তীব্র যানজট। এতে দীর্ঘসময় আটকে থাকছে অ্যাম্বুলেন্সসহ ও অন্যান্য পরিবহন। এতে রোগী ও পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। জনদুর্ভোগের বিষয় উল্লেখ করে মেলা স্থানান্তর বা বন্ধের জন্য জনস্বার্থে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের এক আইনজীবী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের অদূরদর্শিতায় হাসপাতালের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মেলার অনুমতি দিয়েছে। তারা দ্রুত মেলাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নিউ স্টাইল মার্কেটিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের ১৪ মে শরীয়তপুরে দেশীয় পণ্য, কারুকার্য, কুটিরশিল্প ও বাণিজ্য মেলা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে একটি আবেদন করে। আবেদনের ভিত্তিতে ১২ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিছু শর্ত সাপেক্ষে জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সামনের মাঠে মেলার আয়োজনের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা) সুদীপ্ত ঘোষ স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে এই অনুমতি দেওয়া হয়। তবে মেলাটি চালু করা হয় ৩১ আগস্ট। এদিকে মেলাটি চালুর পর থেকেই শহরের প্রধান সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। এছাড়া মেলার স্থানটি সদর হাসপাতালের সম্মুখে হওয়ায় রোগী আনা নেওয়ায় ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য পরিবহন আটকে থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

শরীয়তপুর জেলা সদর হাসপাতালের সামনেই চলছে শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। বিকেল পর্যন্ত কোনোভাবে পার হলেও বিকেলের পর থেকে সড়কে সৃষ্টি তীব্র যানজট

এদিকে মেলা স্থানান্তর বা বন্ধের জন্য সোমবার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর প্রশাসককে ডাকযোগে জনস্বার্থে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মুহা. মুস্তাফিজুর রহমান।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, শরীয়তপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলার শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মাঠে, দেশীয় পণ্য, কারুকার্য, কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলা ২০২৫ নামে মাস ব্যাপী একটি বাণিজ্য মেলার অনুমতি দিয়েছেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক। যার পাশে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং অপরদিকে শরীয়তপুর পার্ক ও জেলার শিল্পকলা একাডেমি অবস্থিত। শরীয়তপুর জেলার যোগাযোগের জন্য মাত্র একটি প্রধান সড়ক আছে। যা মূল শহরের ওপর দিয়ে গেছে। পদ্মাসেতু চালুর পর এই সড়কে গাড়ি চলাচল বেড়েছে কয়েকগুণ। ব্যস্ততম সড়কের পাশে এই মেলার আয়োজনে মূল সড়কেটিতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, রোগী বহনকারী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স তীব্র যানজটে পড়ে থাকছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের যাওয়া আসায় মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া এবং অনৈতিক কার্যকলাপও পরিলক্ষিত হচ্ছে।

নোটিশে আরও এতে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে, যা বাংলাদেশের সংবিধানে প্রদত্ত নাগরিক অধিকার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়াও বাণিজ্য মেলা শুরুর পূর্বে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন মেলা বন্ধের জন্য মানববন্ধন ও জেলা প্রাশসক বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান করেছেন। আর এ সকল কারণে এলাকার জনস্বার্থে অনতিবিলম্বে দেশীয় পণ্য, কারুকার্য, কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলা স্থানান্তর বা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

সাইফুল ইসলাম নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, মেলাটি আয়োজনের পর থেকে জেলাবাসীর জন্য ভোগান্তির শুরু হয়েছে। শহরের একমাত্র সড়কে তীব্র যানজট লেগে থাকে। হাসপাতালে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারছে না। আমরা চাই মেলাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হোক।

শরীয়তপুর জেলা সদর হাসপাতালের সামনেই চলছে শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। বিকেল পর্যন্ত কোনোভাবে পার হলেও বিকেলের পর থেকে সড়কে সৃষ্টি তীব্র যানজট

আকাশ মুন্সি নামের আরেকজন বলেন, মেলার কারণে বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সড়কে প্রচুর যানজট লেগে থাকে। কারো স্বজন অসুস্থ হয়ে পড়লে সঠিক সময়ে হাসপাতাল নেওয়া যায় না। হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকায় মেলার আয়োজন কীভাবে করলো আমাদের মাথায় আসছে না।

এ ব্যাপারে ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মুহা. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছি শরীয়তপুর প্রাণকেন্দ্র ও সদর হাসপাতালের সামনে বাণিজ্য মেলার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। মেলাটি চালুর পর থেকে থেকে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য যানবাহন আটকে স্থানীয়রা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এসব কারণে জনস্বার্থে মেলাটি বন্ধ কিংবা স্থানান্তরের জন্য আমি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। তারা যদি এই ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেয়, আমি আদালতের দারস্থ হবো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এই সংক্রান্ত কোনো লিগ্যাল নোটিশ পাইনি। পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে মেলার অনুমতির বিষয়টি জেলা প্রশাসনের। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।

এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসকের তাহসিনা বেগমকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে মেলা বন্ধের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি বলেন, আগামীতে এই স্থানটিতে আর মেলার আয়োজন করবো না। জনদুর্ভোগের বিষয়টি আমরা দেখছি। অবস্থা বেশি খারাপ হলে মেলাটি বন্ধ করে দেবো।

বিধান মজুমদার অনি/এমএন/জেআইএম

Read Entire Article