হাসিনা-কামালের আমৃত্যু দণ্ডের বদলে মৃত্যুদণ্ড চাইবে রাষ্ট্রপক্ষ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে যে অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, এর বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউসন। আপিলে দণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হবে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ট্রাইব্যুনালে গত ১৭ নভেম্বর দেওয়া রায়ের কপি তারা পেয়েছেন। সেখানে দেখেছেন যে একটি অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেকটি অভিযোগে দুজনকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। প্রসিকিউশন প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে অভিযোগে দুজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আপিল করা হবে। অভিযোগের শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হবে। এ নিয়ে কথা হলে আরেক প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল যে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেননি, আমরা মনে করি এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। রায় সঠিক, তবে দণ্ডাদেশ সঠিক হয়নি। তাই যে অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেই অভিযোগেও দুই আসাম

হাসিনা-কামালের আমৃত্যু দণ্ডের বদলে মৃত্যুদণ্ড চাইবে রাষ্ট্রপক্ষ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে যে অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, এর বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউসন। আপিলে দণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ট্রাইব্যুনালে গত ১৭ নভেম্বর দেওয়া রায়ের কপি তারা পেয়েছেন। সেখানে দেখেছেন যে একটি অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেকটি অভিযোগে দুজনকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। প্রসিকিউশন প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে অভিযোগে দুজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আপিল করা হবে। অভিযোগের শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হবে।

এ নিয়ে কথা হলে আরেক প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল যে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেননি, আমরা মনে করি এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। রায় সঠিক, তবে দণ্ডাদেশ সঠিক হয়নি। তাই যে অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেই অভিযোগেও দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে প্রসিকিউশন আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি যে শেখ হাসিনার উসকানির কারণে এদেশে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। চিরপঙ্গুত্ববরণ করেছে, দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, মাথার খুলি গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে এগুলোর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং আমরা বিশ্বাস করি, এটাই হওয়া উচিত ছিল। ট্রাইব্যুনাল অন্য অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিলেও, এ অভিযোগেও আসামিদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত ছিল।’

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং মামলার রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গত ১৭ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। এখন ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি (কপি) হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার রাষ্ট্র ও আসামি মামুনের পক্ষের আইনজীবীরা।

গত ১৭ নভেম্বর ঘোষিত রায়ে দণ্ডের পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সেই সঙ্গে শহীদদের পরিবারকে এবং আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘হাত, পা, নাক, চোখ, মাথার খুলি হারানো যেসব সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের বাস্তব অবস্থা দেখলে যেকোনো মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক মানসিক অবস্থা ধরে রাখা কঠিন। ফলে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের যেকোনো মূল্যে বিচারের আওতায় আনা উচিত। এক্ষেত্রে ন্যায়বিচারকে ব্যহত হতে দেওয়ার সুযোগ নেই।’

মানবতাবিরোধী অপরাধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে শেখ হাসিনাকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল-১ বলেন, সংঘটিত অপরাধে প্ররোচনা ও উসকানি দেওয়া, আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ এবং সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধে নিষ্ক্রিয়তা ও অপরাধ সংঘটনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়ী। এসব অপরাধে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

আরও পড়ুন
প্লট দুর্নীতির ৩ মামলায় শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড
প্লট দুর্নীতি: হাসিনা-জয়-পুতুলসহ ২২ জনের কে কোন সাজা পেলেন

দুই নম্বর অভিযোগের অপরাধ বর্ণনা করে ট্রাইব্যুনাল-১ বলেন, এই অভিযোগে শেখ হাসিনাকে দুটি অপরাধের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি অপরাধ হচ্ছে জুলাই গণ-আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ। এই নির্দেশনা দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী অপরাধ সংঘটন করেছেন। দ্বিতীয় অপরাধটি হচ্ছে- শেখ হাসিনার এই নির্দেশ অনুসরণ করে গত বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা ও একই দিনে সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া। এই অভিযোগে সাজা ঘোষণা করতে গিয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- এই সমস্ত অপরাধের জন্য তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বলেন, একই অপরাধে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সমানভাবে দায়ী। এর জন্য আসামি আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। কিন্তু আসামি মামুন রাজসাক্ষী হয়ে সংশ্লিষ্ট অপরাধের বিষয়ে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করে সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে ট্রাইব্যুনাল মনে করে। তাই সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশে তার এই সাক্ষ্য বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদালতকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করেছে। ফলে তাকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালত নমনীয়তা প্রদর্শন করছে। সবকিছু বিবেচনায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম শুনানি করেন। এছাড়া শুনানিতে প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্য প্রসিকিউটরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আর রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। এছাড়া রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

ঐতিহাসিক এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট ৫৪ জন সাক্ষী এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে (অ্যাপ্রুভার) রাজসাক্ষী হন সাবেক আইজিপি মামুন।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। এখন দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেসব অভিযোগের বিচার চলছে।

এফএইচ/একিউএফ/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow