হাসিনার পদত্যাগ: কী প্রভাব পড়বে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে?

1 month ago 21

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সেখান থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী বাংলাদেশের ঘটনাবলী নয়াদিল্লি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সোমবার (৫ আগস্ট) দিল্লির নিকটবর্তী হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণের পরপরই শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। এদিন বাংলাদেশের চলমান ইস্যু নিয়ে সংসদীয় নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে।

কী প্রভাব পড়বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে?

ভারতের অবসরপ্রাপ্ত ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তা অনিল ত্রিগুনায়াত এনডিটিভি’কে বলেন, বাংলাদেশ আমাদের ঘনিষ্ঠ ও কৌশলগত অংশীদার। তাই প্রতিবেশী অঞ্চলে প্রবাসীদের স্বার্থে ও নিরাপত্তাজনিত কারণে স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যা এরই মধ্যে অনুভূত হতে পারে। সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের আগমনও ভারতের জন্য একটি সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া, ভারতের স্বার্থের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বহিরাগত শক্তিগুলো ভিত্তি লাভ করতে পারে, যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। এরই মধ্যে পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

এনডিটিভির ভাষ্যমতে, ভারত ও চীন উভয়ের সঙ্গেই শেখ হাসিনার সুসম্পর্ক ছিল। তার শাসনামলে চীনের সঙ্গে সব উন্নয়নমূলক অংশীদারত্বে বাংলাদেশ ভারতের স্বার্থের প্রতি মনোযোগী ছিল।

এখন কী করবে ভারত?

গত জানুয়ারিতে চতুর্থ মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। তবে ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে অসন্তোষপ্রকাশ করেছিল পশ্চিমারা। সেসময় বাংলাদেশ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর মতো কাজ করেছিল ভারত। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছিল, বাংলাদেশকে সাইডলাইন করার অর্থ হবে চীনকে বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং বিভিন্ন বিষয়ে অংশীদারত্ব করা। এটি ভারত বা যুক্তরাষ্ট্র কারও জন্যই ভালো হবে না।

ফলে, চলমান বিশৃঙ্খলা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ভারত শঙ্কিত হতে বাধ্য।

জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, ঢাকায় যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইবে। কারণ উভয় দেশই জানে, একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে জনগণের উপকার হবে। শুরুতে হয়তো কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকবে, তবে উভয় দেশের সরকারই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হবে।

তার মতে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কিছু দিক হয়তো আগের মতো শক্তিশালী না-ও হতে পারে, আবার কিছু দিক থেকে উন্নতিও হতে পারে।

সামনের রাস্তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়াত বলেন, এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশের পরবর্তী ক্ষমতা কাঠামো এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা পালন করে, তার ওপর। ভারতের একটি নীতি রয়েছে, যা বাংলাদেশপন্থি ও আমাদের প্রতিবেশীদের পক্ষে।

খবরে আরও বলা হয়েছে, ভারত তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সৃষ্ট হঠাৎ অস্থিরতা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হবে; পাশাপাশি, ঢাকায় একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকারের জন্যেও কাজ করবে। একই সময়, এই সংকটে হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলোর দিকে নজর রাখবে নয়াদিল্লি।

কেএএ/

Read Entire Article