অনেকেই মনে করেন, হাড় বা জোড়ার (joint) ব্যথা যেন বয়স বাড়ার স্বাভাবিক পরিণতি। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এই ব্যথা অনেক সময়ই আমাদের নিজেদের অসচেতনতার ফল। অল্প বয়স থেকেই যদি আমরা হাড় ও জোড়ার যত্ন নেই, তাহলে ভবিষ্যতে চলাফেরা করতে হবে না কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি নিয়ে।
মুম্বাইয়ের কে. জে. সোমাইয়া কলেজ অব ফিজিওথেরাপির ফিজিওথেরাপিস্ট ডা. প্রাচী সারভাইয়া দিয়েছেন এমন ৭টি সহজ অথচ কার্যকর পরামর্শ, যেগুলো প্রতিদিনের জীবনযাপনে একটু খেয়াল রাখলেই হাড় ও জোড়া থাকবে সুস্থ, মজবুত ও ব্যথামুক্ত।
চলুন জেনে নিই—কীভাবে আপনি এখন থেকেই হাড়ের যত্ন নিয়ে ভবিষ্যতের বড় সমস্যাগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন।
১. ব্যথা হলে তা হালকাভাবে নেবেন না
শরীর মাঝে মধ্যে ছোটখাটো ব্যথা বা অস্বস্তি দিয়ে জানান দেয়—সব ঠিক নেই। ‘বয়স হয়েছে’ ভেবে এসব এড়িয়ে যাবেন না। কারণ ব্যথা মানে হাড় বা জোড়ায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। সময়মতো নজর না দিলে পরে তা বড় আকার নিতে পারে।
২. প্রতিদিন একটু হলেও শরীর নড়াচড়া করান
ব্যায়াম শুধু ওজন কমায় না, হাড় ও জোড়াও মজবুত রাখে। হাঁটা, সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম বা খেলাধুলা—যেটা আপনার ভালো লাগে, সেটাই করুন। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন, দিনে ৩০ মিনিট করে চলাফেরা করলে দারুণ উপকার পাবেন।
আরও পড়ুন : পায়ে যে ৭ লক্ষণ দেখলেই বুঝবেন আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
ব্যায়ামের আগে ও পরে স্ট্রেচিং করতে ভুলবেন না!
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
বেশি ওজন মানে আপনার হাঁটু, কোমর ও অন্যান্য জোড়ার ওপর অতিরিক্ত চাপ। তাই ওজন যদি বাড়তে থাকে, তা কমানোর চেষ্টা করুন। ভিটামিন-ডি আর ক্যালসিয়াম খাওয়ার দিকে খেয়াল রাখুন, আর রোদে দিনে অন্তত ১৫ মিনিট সময় দিন।
৪. প্রচুর পানি খান
জোড়ার ভেতরের নরম কার্টিলেজগুলো যাতে ঠিকমতো কাজ করতে পারে, সেজন্য শরীরে পানির ভারসাম্য থাকা জরুরি। দিনে অন্তত ১০-১২ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৫. সোজা হয়ে বসুন, ঠিকভাবে চলুন
ঘাড় নিচু করে মোবাইল দেখা, বাঁকা হয়ে বসা, খারাপ বিছানায় ঘুমানো—এসব অভ্যাস ধীরে ধীরে হাড় ও জোড়ায় সমস্যা তৈরি করে। অফিসে কাজ করলে ভালো চেয়ার ব্যবহার করুন, আর বসে থাকলেও মাঝে মধ্যে উঠে একটু হাঁটুন।
৬. সতর্কভাবে চলাফেরা করুন
পিছলে পড়ে যাওয়া বা হঠাৎ ভারী কিছু তোলা – এ ধরনের ঘটনা থেকে হাড়ের বড় ক্ষতি হতে পারে। তাই গোসলের সময় সাবধান থাকুন, আর কিছু তুলতে গেলে পিঠ না বেঁকিয়ে, হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন।
৭. খারাপ অভ্যাস বাদ দিন, ভালো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান হাড়কে দুর্বল করে তোলে। এই অভ্যাসগুলো কমিয়ে ফল, সবজি, দুধ, ডিম, বাদাম—এসব স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে হাড়ের ঘনত্ব ঠিক থাকবে।
আরও পড়ুন : পুরুষদের প্রস্টেট চেক করানো কেন জরুরি
হাড় ও অস্থিসন্ধি ঠিক রাখা শুধু ওষুধের ওপর নয়, বরং আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট সচেতনতায় গড়ে ওঠে। এখনই যদি আপনি শরীরের কথা শোনেন, তাহলে বয়স বাড়লেও আপনি স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবেন, ব্যথাহীনভাবে।
আজই একটু হাঁটা শুরু করুন, পানি খান, সোজা হয়ে বসুন—দেখবেন হাড় আপনাকে ভালো রাখবে অনেক বছর।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস