হিংসা ইমানের স্বাদ ও জীবনের আনন্দ কেড়ে নেয়

1 day ago 3

গত শুক্রবার (সৌদি আরবে ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খৃষ্টাব্দ মোতাবেক ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি) মসজিদুল হারামে জুমার নামাজ পড়ান শায়খ ড. বানদার ইবনে আবদুল আজিজ বালিলাহ। তিনি প্রায় এক দশক যাবত মসজিদে হারামের ইমাম হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

শায়খ বালিলাহ ১৯৭৫ সালে সৌদি আরবের মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামি আইনে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং ইসলামি ফিকহে মাস্টার্স করেন। ২০০৮ সালে তিনি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০১৩ সালে শায়খ বানদার বালিলাহ মসজিদে হারামের ইমাম নিযুক্ত হন। এর আগে মক্কার আরও কিছু মসজিদে তিনি ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত শুক্রবারের জুমার খুতবায় তিনি বলেন:

দুনিয়ার জীবনে আমাদের বড় বিপদগুলোর অন্যতম হলো হিংসা যা আমাদের অন্তরেই বসবাস করে। এটি একটি ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট স্বভাব, অসুস্থ ও ধ্বংসাত্মক মানসিকতা। হিংসা মানুষের বরকত নষ্ট করে, কল্যাণ নষ্ট করে, সুস্থ বিবেককে মেরে ফেলে। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আপনারা হিংসা থেকে বেঁচে থাকুন, কারণ এটি ভালো কাজগুলো এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেমন আগুন লাকড়ি খেয়ে ফেলে।

হিংসা এমন একটি ধ্বংসাত্মক ব্যাধি যা মানুষের হৃদয় ও আত্মাকে গ্রাস করে। হিংসা থেকে জন্ম নেয় দুঃখ, হতাশা, ঘৃণা ও প্রতিহিংসার চক্র।

হিংসা এমন একটি মারাত্মক রোগ যা ইমানের স্বাদ কেড়ে নেয়, শোকর ও কৃতজ্ঞতার আনন্দ বিনষ্ট করে দেয়। হিংসুক ব্যক্তি আল্লাহ তাকে যে নেয়ামতগুলো দিয়েছেন তা উপভোগ করতে পারে না। অন্যের প্রাপ্তি তার কাছে নিজের বিপর্যয় মনে হয়। এটি চরম দুর্বলতার নিদর্শন, হতভাগ্যতার চিহ্ন, এবং আল্লাহর তাকদিরে অসন্তুষ্টির প্রকাশ।

যদি হিংসুক ব্যক্তির অন্তর শুদ্ধ হতো, তার বক্ষ প্রশস্ত হতো, আর আত্মা পবিত্র হতো, তাহলে সে কে কী পেল বা কে বঞ্চিত হলো, কে সম্মানিত বা পরীক্ষিত হলো—তা নিয়ে পড়ে থাকত না। সে কখনোই চাইত না যে, অন্যের নেয়ামত বিনষ্ট হয়ে যাক, বা তাদের ওপর বিপদ আসুক।

জেনে রাখুন, হে আল্লাহর বান্দারা! আসমানে সংঘটিত প্রথম পাপ ছিল হিংসা। ইবলিস হিংসা করেছিল আদমের (আলাইহিস সালাম) প্রতি, যখন আল্লাহ তাআলা তাকে নিজের হাতে সৃষ্টি করলেন, তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দিলেন, এবং ফেরেশতাদের তাঁকে সিজদা করতে আদেশ দিলেন। এই হিংসা ইবলিসকে কুফরির দিকে ঠেলে দেয় এবং সে চিরদিনের জন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

একইভাবে পৃথিবীতে সংঘটিত প্রথম পাপও ছিল হিংসা—আদমের (আ.) এক ছেলের অন্য ছেলের প্রতি হিংসা, যার পরিণতি ছিল হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংস। আল্লাহ তাআলা বলেন, তারপর তার মন তাকে তার ভাইকে হত্যা করতে প্ররোচিত করল, সে তাকে হত্যা করল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হলো। (সুরা মায়েদা: ৩০)

সুতরাং হিংসা হলো সবচেয়ে প্রাচীন এবং গুরুতর অপরাধসমূহের অন্যতম। এটি উম্মাহর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে, যেমন একটি বিশুদ্ধ হাদিসে এসেছে, তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, কেনাবেচায় জিনিসের মূল্য বাড়িয়ে একে অপরকে ধোঁকা দিয়ো না, একে অপরের প্রতি শত্রুতা রেখো না, একে অপর থেকে ঘৃণাভরে মুখ ফিরিয়ো না এবং এক অপরের কেনাবেচার উপর কেনাবেচা করো না। আর হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলমান মুসলমানের ভাই। মুসলমান নিজের ভাইয়ের প্রতি জুলুম করবে না, তাকে তুচ্ছ ভাববে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না। (সহিহ মুসলিম)

রাসুল (সা.) আরও বলেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা ইমানদার হবে না যতক্ষণ না একে অপরকে ভালোবাস। আর আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলব, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে? তোমাদের মধ্যে সালামের প্রচলন করো। (সহিহ মুসলিম)

হিংসা এমন একটি মারাত্মক বিপদ যা মুমিনের ইমান দুর্বল করে, নেক আমল নষ্ট করে, এবং জীবনকে কষ্ট ও অশান্তিতে পূর্ণ করে। এটি বহু পাপ ও ক্ষতির দরজা খুলে দেয়।

তাই হে আল্লাহর বান্দারা! আল্লাহকে ভয় করুন এবং আপনাদের অন্তরকে হিংসা থেকে পবিত্র করুন। আল্লাহর কাছে সন্তুষ্টি চান, তার অনুগ্রহ কামনা করুন। আল্লাহর তাকদিরে সন্তুষ্ট হোন এবং তার নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ হোন।

আল্লাহ আমাদের অন্তরকে হিংসার মতো ধ্বংসাত্মক ব্যাধি থেকে হেফাজত করুন এবং আমাদের অন্তরসমূহে শান্তি, সন্তুষ্টি এবং কৃতজ্ঞতা দান করুন, আমিন।

সূত্র: ইনসাইড দ্যা হারামাইন

ওএফএফ

Read Entire Article