বিমানের একেবারে পিছনের সারির আসনে বসার সুবিধা একটা, কিন্তু অসুবিধা একাধিক। সুবিধা হচ্ছে, টয়লেট একেবারে লাগোয়া, টুপ করে যে-কোনো সময় ঢুকে যাওয়া যায়। যাদের ঘন ঘন টয়লেট পায়, তাদের জন্য এ আসন তোফা। তবে, এর মূল্য আপনাকে দিতে হবে অন্যভাবে। পিছনে ঝাঁকুনি বেশি লাগে; অন্যরা যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে টয়লেট থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন মুফতে দুর্গন্ধ নাকে এসে হানা দেয়; পিছনে আসন একটু এলিয়ে দিয়ে আরাম করবেন, তার উপায় নেই।
সমস্যা অবশ্য আরেকটি আছে, যা ভাগ্য খারাপ হলে হতে পারে। আমার ভাগ্য খারাপ ছিল কি না জানি না, তবে সমস্যাটা আমাকে ফেস করতে হয়েছে। খুলেই বলি। সকাল পৌনে বারোটায় ফ্লাইট। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না-থাকলে, চীনে ফ্লাইট কখনও মিস বা দেরি হয় না। বিগত ১৩ বছর ধরেই দেখছি। আমার সফরসঙ্গী শিশির (চীনা মেয়ের বাংলা নাম, চীনা নাম লি ওয়ান লু) বলে দিয়েছে, যেহেতু বেইজিং থেকে নিংসিয়া যাচ্ছি, মানে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট, সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছালেই হবে। আমি বাসা থেকে ৯টার আগেই বের হলাম, ট্যাক্সিতে চড়েও বসলাম ঠিক ৯টার দিকে। হিসেব অনুসারে, এয়ারপোর্টে সাড়ে ১০টার আগেই পৌঁছানোর কথা। পৌঁছালামও। কিন্তু, সম্ভবত আরও আগে না-পৌঁছানোর দায় আমাকে শোধ করতে হলো কার্যত দুপুরে উপোস করে।
বিমানে উঠে আসন খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, আমার আসনটি টয়লেট-লাগোয়া! বসতেই নাকে এক পশলা দুর্গন্ধ পেলাম। বিমান তখনও ছাড়েনি। এরই মাঝে কেউ একজন কাজ সেরে এসেছেন। বিমানবালাদের কাউকে ডাকবো কি না ভাবলাম। পরে বাদ দিলাম এ চিন্তা। কারণ, ওরা নিজেরাই একটু পর পর টয়লেট চেক করেন; নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। কিছুক্ষণ বাদে দুর্গন্ধ দূর হলো। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। গোল বাঁধলো বিমান যখন আকাশে উড়লো ও দুপুরের খাবার সার্ভের সময় হলো, তখন।
হুই মা ও শিশু
বিমানবালারা খাবার বিতরণ শুরু করেন সামনে থেকে। পিছনে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া আমার এবং আমার মতো বাকি পিছনওয়ালাদের উপায় নেই। একসময় অপেক্ষার পালা শেষ হলো। বিমানবালা এসে বললেন, ‘গরুর মাংসের সাথে ভাত আছে। তুমি খাবে?’ আমি প্রশ্ন করলাম: ‘এটা কি হালাল?’ তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। বুঝলাম তিনি নিশ্চিত নন। আমি বললাম, ‘আমাকে সবজিজাতীয় কিছু থাকলে দাও।’ বেচারি লজ্জার হাসি হেসে বললেন, ‘দেখ, বিমানে আজ অনেক মুসলিম যাত্রী। চাহিদা ধারণার চেয়ে বেশি থাকায়, সবজির আইটেম শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু এই গরুর মাংসই ভরসা।’ আমি বললাম, ‘এটা তো আমি খেতে পারব না!’ সে বলল, ‘আমি খুবই দুঃখিত। আমি তোমাকে রুটিজাতীয় কিছু একটা দিতে পারি, দেব?’ আমি শুকনো মুখে বললাম, ‘আচ্ছা, তাই দাও।’
আবারও অপেক্ষার পালা। একটু পর পর বিমানবালা এসে ‘সরি’ বলেন, আমাকে অপেক্ষায় রাখার জন্য। আমি কাষ্ঠহাসি দিয়ে বলি, ইটস ওকে। আসলে ‘ওকে’ না; পেট চো চো করছে। সকালে তিনটা বিস্কুট আর এক কাপ চা খেয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। শেষমেষ ‘রুটিজাতীয়’ কিছু এলো। একেবারেই শুকনো মিনি ফ্রেঞ্চ ব্রেড। এ খেয়ে কি আর ভাতের ক্ষুধা মেটে?
ক্ষুধার্ত আমাকে নিয়ে এয়ার চায়নার বিমানটি যখন নিংসিয়া-র রাজধানী ইনছুয়ানের হ্যতুং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে এলো, তখন ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট চীন সময় দুপুর দেড়টা। ৫ আগস্ট আজকের বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ দিন। বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আগের দিন একজন মমতাময়ী কর্মকর্তা ফোন করেছিলেন। দাওয়াত দিলেন, বিশেষ দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। মনটা খারাপ হয়ে গেল। ৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার উপায় নেই। কারণ, সকালে আমার ফ্লাইট। অফিস থেকে প্রোগ্রাম ঠিক হয়েছে আগেই। বড় একটা টিমের সাথে নিংসিয়া সফর। টিমে আমি ছাড়াও আছেন চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-র উর্দু, তার্কিস, ফার্সি, সিংহলি, ইন্দোনেশিয়ান, ও গ্রিক বিভাগের একজন করে বিশেষজ্ঞ এবং একজন করে চীনা সহকর্মী। আরও আছেন চায়না ডেইলিসহ একাধিক গণমাধ্যমের একাধিক সাংবাদিক এবং একজন সুন্দরী ইরানি ব্লগারসহ সাধারণ বিদেশিরাও। আমাদের কাজ, নিংসিয়া-র রাজধানী ইনছুয়ানসহ পাঁচটি শহর এবং সেসব শহরে অবস্থিত নানান দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে দেখা; সর্বস্তরে নিংসিয়া-র উন্নয়ন-প্রক্রিয়ার সাক্ষী হওয়া; এবং এখানকার বাসিন্দাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সহাবস্থান সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা অর্জন করা।
হুইদের আদিমতম পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন আরব ও পার্সিয়া (বর্তমানের ইরান) থেকে, ৬৫১ খ্রিস্টাব্দের পর। তাঁরা ছিলেন মূলত ব্যবসায়ী। তখন ছিল থাং রাজবংশ আমল। তাদের একটা বড় অংশ কুয়াংচৌ, ছুয়ানচৌ ও ইয়াংচৌ-এর মতো বন্দরনগরীতে থিতু হন এবং সেসব অঞ্চলে নিজেদের বসতি গড়ে তোলেন। স্থানীয়রা তাদের ডাকতো ‘ফান খ্য’ (বিদেশী অতিথি) নামে। এঁরাই চীনে প্রথম মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করেন।
তো, আমাদের টিমে আমিসহ মুসলিম মাত্র চার জন। তাহলে, বিমানে মুসলিম যাত্রীর সংখ্যা বেশি হবার কারণ কী? বাকিরা কারা? বাকিদের অধিকাংশই হচ্ছেন হুই মুসলিম (‘অধিকাংশ’ বললাম, কারণ তাদের মধ্যে অন্য সংখ্যালঘু জাতির মুসলিমও থাকতে পারেন)। বাংলাদেশের সম্ভবত অধিকাংশ মানুষের কাছে ‘চীনা মুসলিম’ মানেই উইগুর মুসলিম। তাদের অনেকেই জানেন না যে, চীনে ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু জাতি আছে ১০টি। এসব জাতির মধ্যে জনসংখ্যার দিক দিয়ে উইগুররা নয়, বরং এগিয়ে আছে হুই-রা! আসলে, চীনে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে চুয়াং জাতির লোকসংখ্যাই কেবল হুই জাতির চাইতে বেশি। এরপরই মান জাতির স্থান। এর মধ্যে হুই আর মান জাতি মূলত হান তথা ম্যান্ডারিন তথা চীনা ভাষা ব্যবহার করে। অন্য জাতিগুলোর মধ্যে ২১টির নিজস্ব লিখিত ভাষা আছে। উইগুর জাতিরও আছে নিজস্ব লিখিত ভাষা।
হুই মসজিদ
বলছিলাম, জনসংখ্যার দিক দিয়ে উইগুরদের চেয়ে হুই-রা এগিয়ে আছে। ২০১০ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুসারে, হুই মুসলিমদের সংখ্যা এক কোটি ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭ জন। অন্যদিকে, উইগুরদের সংখ্যা এক কোটি ৬৯ হাজার ৩ শত ৪৬ জন। প্রসঙ্গক্রমে বাকি ৮টি সংখ্যালঘু মুসলিম জাতির নাম ও জনসংখ্যাও এখানে তুলে দিচ্ছি: কাজাখ (১৪ লাখ ৬২ হাজার ৫ শত ৮৮), কিরগিজ (এক লাখ ৮৬ হাজার ৭ শত ৮), তুংসিয়াং (৬ লাখ ২১ হাজার ৫ শত), সালার (এক লাখ ৩০ হাজার ৬ শত ৭), উজবেক (দশ হাজার ৫ শত ৬৯), পাও’আন (২০ হাজার ৭৪), এবং তাজিক (৫১ হাজার ৬৯)।
আগেই বলেছি, হুই মুসলিমদের একটা ক্ষুদ্র অংশ আরবি ও ফার্সি জানলেও, সিংহভাগ মানুষই দৈনন্দিন জীবনে চীনা ভাষা ব্যবহার করেন। তাদের জীবনাচারেও সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জাতির প্রভাব স্পষ্ট। অনেক সময় তাদেরকে হান জাতির মানুষ থেকে আলাদা করা মুশকিল হয়ে যায়। আমি বেইজিংয়ের একাধিক মসজিদে নামাজ পড়েছি। অধিকাংশ ইমামই ক্লিন শেভড্। নামাজের সময় তাঁরা পাগড়ি ও লম্বা কুর্তা পড়েন বটে,তবে বাকি সময় তাদের পোশাক-আশাকে তাদের ইমাম বলে চেনার কোনো উপায় নেই। প্রশ্ন হচ্ছে: কেন হুই মুসলিমদের জীবনাচারে হান সভ্যতা ও সংস্কৃতির এতো প্রভাব? এর উত্তর নিহিত আছে হুই মুসলিমদের ইতিহাসে।
হুইদের আদিমতম পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন আরব ও পার্সিয়া (বর্তমানের ইরান) থেকে, ৬৫১ খ্রিস্টাব্দের পর। তাঁরা ছিলেন মূলত ব্যবসায়ী। তখন ছিল থাং রাজবংশ আমল। তাদের একটা বড় অংশ কুয়াংচৌ, ছুয়ানচৌ ও ইয়াংচৌ-এর মতো বন্দরনগরীতে থিতু হন এবং সেসব অঞ্চলে নিজেদের বসতি গড়ে তোলেন। স্থানীয়রা তাদের ডাকতো ‘ফান খ্য’ (বিদেশী অতিথি) নামে। এঁরাই চীনে প্রথম মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। স্বাভাবিকভাবেই, তাদের প্রভাবে স্থানীয় হান জাতির কেউ কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। আবার বিদেশী এই মুসলিমদের সাথে স্থানীয়দের বিয়েশাদীর সম্পর্কও স্থাপিত হয়। এভাবে হুই জাতি ধীরে ধীরে একটা আকৃতি নিতে থাকে। সং রাজবংশ আমলে তাদের উত্তরপুরুষদের ডাকা হতো ‘স্থানীয়ভাবে জন্ম-নেওয়া বিদেশি’ বলে।
মঙ্গোল ইউয়ান রাজবংশ আমলে চীনে, পার্সিয়ান, তুর্কি ও আরবদের অভিবাসন বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। বিজয়ী মঙ্গোলরা তাদেরকে সৈন্য, প্রশাসক ও অন্যান্য কর্মী হিসেবে ব্যাপকভাবে নিয়োগ দেওয়া শুরু করায়, এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মঙ্গোলরা নিজেদের চাইতে এঁদেরকে নীচু শ্রেণীর মনে করলেও, স্থানীয় হানদের চাইতে বেশি মর্যাদা দিত।
সং রাজবংশ আমলের বিভিন্ন লেখায় ‘হুই হুই’ টার্মটি শুধু উইগুরদের বোঝাতে ব্যবহার করা হতে দেখা যায়। পরে, মধ্য এশিয়ার সকল মুসলিমকেই ‘হুই’ নামে ডাকা শুরু হয়। যাই হোক, চীনে চতুর্দশ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দি পর্যন্ত মিং ও ছিং রাজবংশের রাজত্ব কায়েম ছিল। ওই সময়কালেই হুই-রা চীনা নাম ব্যবহার শুরু করে; পোশাক-আশাকেও তাঁরা হানদের অনুসরণ করতে থাকে। তাদের কেউ কেউ ইসলামের মূল ধারাকে ধারণ করেই, কনফুসিয়াসের কিছু শিক্ষাও দৈনন্দিন জীবনে মেনে চলতে থাকেন। এভাবে ধীরে ধীরে হুইদের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনে আরবি ও ফার্সির প্রচলন কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। তবে, ধর্মীয় কাজে আরবির প্রচলন তখনও ছিল, এখনও আছে। হালাল খাবার ও মসজিদভিত্তিক কমিউনিটি গড়ে তোলার ব্যাপারটিও তাঁরা সযত্নে ধরে রেখেছেন।
ইনছুয়ানে প্রথম হোটেলে চেকইনের জন্য অপেক্ষা
ছিং রাজবংশ আমলে (১৬৪৪-১৯১২) ইসলাম পরিচিত ছিল ‘হুইচিয়াও’ বা ‘হুই ধর্ম’ নামে। তখনকার সম্রাটরা হুইদের বিরুদ্ধে দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেছিল। ফলে, হুইরা বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহ ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর তুনকান বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। তখন, অনেক হুই মধ্য-এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মাইগ্রেট করে। আজকের কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তানে সেই অভিবাসী হুইরাই ‘তুনকান কমিউনিটি’ নামে পরিচিত এবং তাঁরা প্রাচীন কালের হুই উপভাষা ও ইসলামি ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
জেনেটিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আধুনিক হুইদের শরীরে বইছে হান, আরব, পার্সিয়ান, তার্কিস, ও মঙ্গোলিয়ান রক্ত। মঙ্গোলিয়ান রক্ত কীভাবে এলো? কানসু প্রদেশে মঙ্গোলদের হালাহুই গ্রুপ, ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর, সেখানকার হুই সমাজের সাথে মিশে গিয়েছিল। হুই ভাস্কর্যেও সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায়। দা গ্রেট মস্ক অব সিয়ান (সিয়ানের মহান মসজিদ) হুইরা প্রতিষ্ঠা করেছিল ৭৪২ খ্রিষ্টাব্দে। পরে, মঙ্গোল শাসকরা সেটা পুনর্নির্মাণ করে। এ মসজিদে চীনা মন্দিরের আদল স্পষ্ট; আবার এটি নির্মাণ করা হয়েছে মক্কামুখী করে। বস্তুত, চীনের হুই মসজিদগুলোর অধিকাংশের নকশায় চীনা ও আরবি সংস্কৃতির মিশেল লক্ষণীয়।
সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে জনসংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও, হুই জাতির লোক চীনের সবচেয়ে বেশি জায়গায় দেখা যায়। আর এসব জায়গার মধ্যে তাঁদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি নিংসিয়া-য়। নিংসিয়ার প্রায় ৭৩ লাখ বাসিন্দার ৩৬ শতাংশই হুই। বস্তুত, হুইদের কথা মাথায় রেখেই, ১৯৫৮ সালের ২৫ অক্টোবর প্রতিষ্ঠা করা হয় নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। চীনের পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একটি নিংসিয়া। বাকি চারটি হচ্ছে: ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল; সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল; কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল; সিচাং (তিব্বত) স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। আর, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গঠনের লক্ষ্য ছিল, ধর্ম-গোত্র-জাতি নির্বিশেষে চীনের সকল অঞ্চলের উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।
ধান বানতে গিয়ে ঠিক শিবের গীত না-হলেও, এতোক্ষণ বর্তমান থেকে অতীতেই বেশি বিচরণ করেছি। অতীত আবারও আসবে পরের লেখাগুলোতে, তবে আজকের লেখায় আর নয়। এবার অতীত থেকে বর্তমানে আসার পালা। আগেই বলেছি, দুপুর দেড়টায় আমাদেরকে নিয়ে এয়ার চায়নার বিমানটি ইনছুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। চীনের বিমানবন্দর মানেই বিশাল ও আধুনিক। এটিও ব্যতিক্রম নয়। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে ফিরতে বাসে চেপে বসলাম। ছিমছাম শহর, সুন্দর ও চওড়া সড়ক। শিশির বলল, এখানে মানুষজন খুবই কম। কম হবারই কথা। ৬৬ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি প্রদেশ-পর্যায়ের অঞ্চলের লোকসংখ্যা এক কোটিরও কম!
বিমানবন্দর থেকে হোটেলে আসতে পাক্কা এক ঘন্টা সময় লাগলো। চেকইনের পর ফ্রেস হতে-না-হতেই শিশিরের ক্ষুদে বার্তা। সাড়ে ৫টায় ডিনারে যেতে হবে। চীনারা সাধারণত পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই ডিনার শুরু করে। বিগত ১৩ বছরেও আমি এতে অভ্যস্ত হতে পারিনি। তবে, ডিনারের খবরে আনন্দিত হলাম। আকাশে অনাহারে থাকার প্রতিক্রিয়া পেটে হচ্ছিল। ফ্রেস হয়ে নিচে নামলাম (আমার রুম ৯ তলায়)। সবাই মিলে হোটেলের পাশেই একটি মুসলিম রেস্তোরাঁয় গেলাম। ভেবেছিলাম নিংসিয়ার খাসি ও গরুর মাংস বেশি ভালো লাগবে। আমার আরেক সহকর্মী শিখা (শুয়ে ফেই ফেই) আসার আগে আমাকে বলেছিলেন, নিংসিয়ার খাসির মাংস সেরা। কিন্তু আমার বাঙালি মুখে মাছই বেশি রুচলো। আস্ত মাছ রান্না করে পরিবেশন করেছে। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমনি চমৎকার। অন্যান্য খাবারও ভালো। বিশেষ করে ফ্রায়েড পটেটো। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর ধারেকাছেও নেই!
খাওয়ার পর বাইরে একটু হাঁটাহাঁটি করব ভেবেছিলাম। কিন্তু, আমাদেরকে যারা যত্ন করে ডেকে এনেছেন, তাঁরা সবাইকে নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসলেন। ঘন্টা-দুয়েকের এ বৈঠককে রোমান্টিক বলার উপায় নেই। তবে, আগামীকালের ঘোরাঘুরি রোমান্টিক হবে বলে আশা করি। (চলবে)
ইনছুয়ান, নিংসিয়া, চীন
লেখক: বার্তাসম্পাদক, চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)।
[email protected]
এইচআর/জেআইএম