হৃদয়ের শ্মশানের দিকে তাকিয়েই দিন কাটে বাবা রতনের

1 month ago 23

ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন, পড়ালেখা শেষে ছেলে চাকরি করবে, অফিসার হবে। ঘুচে যাবে সংসারের সব কষ্ট-গ্লানি। কিন্তু গত ১৮ জুলাই বিকেলে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার গলায়। এতেই বাবা-মায়ের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৩ জুলাই মারা যান হৃদয় তরুয়া। এরপর থেকেই ছেলের শ্মশানের দিকে তাকিয়েই দিন কেটে যায় বাবা রতন চন্দ্র তরুয়ার। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এক খবরে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে কথা হয় পটুয়াখালীর বাসিন্দা রতন চন্দ্র তরুয়ার সঙ্গে।

হৃদয়ের শ্মশানের দিকে তাকিয়েই দিন কাটে বাবা রতনের

বাসস চট্টগ্রাম অফিস থেকে ফোন করা হলে রতন তরুয়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলেন, ‘আমার আদরের ধন হৃদয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল, অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছিল। অতি অল্প আয়ে তার লেখাপড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব হতো না। টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাতো। অনেক স্বপ্ন দেখেছি তাকে নিয়ে। ছেলেও স্বপ্ন দেখেছিল বিসিএস ক্যাডার হবে, ঘুচাবে সংসারের দুঃখ-দুর্দশা।’

কান্না থামিয়ে কিছুসময় পর রতন তরুয়া বলেন, ‘ছেলের শ্মশানই এখন আমার ধর্ম-কর্ম।’

নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রতন চন্দ্র তরুয়ার দাবি, তার ছেলে হৃদয় তরুয়াসহ যাদেরকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে, সেই স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশসহ দলীয় নেতাকর্মী যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত তাদের যেন বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়।

নিজের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত করুণ জানিয়ে পেশায় কাঠমিস্ত্রি রতন তরুয়া আরও বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে আমি যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার নিমেষেই ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। দেশের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল আমার হৃদয়, এটা কি অপরাধ? হৃদয় তরুয়াসহ যারা রক্ত দিয়ে নতুন স্বাধীনতার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে জাতি যেন তাদের এই আত্মদান কখনো ভুলে না যায়, তাদের যেন যথাযথ সম্মান জানানো হয়। তাদের পরিবারের প্রতি সরকার যেন সহানুভূতিশীল হয়।’

হৃদয়ের শ্মশানের দিকে তাকিয়েই দিন কাটে বাবা রতনের

নিহত হৃদয় চন্দ্র তরুয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের রতন চন্দ্র তরুয়া ও অর্চনা রানীর ছেলে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছোট ছিলেন।

বড় বোন মিতু রাণী তাদের পরিবারের জীবনযুদ্ধের কাহিনী তুলে ধরে বলেন, বাবা পেশায় কাঠমিস্ত্রি, মা বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে যা পেতেন তা দিয়েই চলতো সংসার। ভাইয়ের কাছে খুব বেশি টাকা পাঠাতে পারতেন না। ছেলে একদিন বড় হবে, চাকরি করবে, পরিবারের দুঃখ ঘুচবে, সেই আশায় ছিলেন বাবা-মা।

হৃদয় অত্যন্ত মেধাবী ছিল জানিয়ে মিতু রাণী বলেন, সে যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়, আমার বাবা-মা প্রতিবেশী সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছিলেন। হৃদয়ও জানতো, তার ওপর কত বড় দায়িত্ব। বাবাকে ফোন করলেই বলতো, ‘বাবা আর কয়েকটা বছর। তারপর আর কষ্ট করতে হবে না।’

এমএমএআর/জিকেএস

Read Entire Article