বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ হেডফোনে গান শুনছে, কেউ পডকাস্ট বা সিনেমা দেখছে। আবার অফিসে কনসেন্ট্রেশনের জন্য কেউ ইয়ারবাড কানে দিয়ে কাজ করছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হেডফোন, ইয়ারবাড এখন এমনভাবে মিশে গেছে, যেন এটা শরীরেরই একটা অংশ!
কিন্তু জানেন কি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কানে হেডফোন রাখার অভ্যাস একটা নীরব রোগ ডেকে আনছে—টাইনিটাস। এই সমস্যায় পড়ে গেলে আপনার কানে দিনরাত অদ্ভুত এক শব্দ বাজতে পারে, যেটা বাইরের কেউ শুনবে না—শুধু আপনি শুনবেন!
আরও পড়ুন : খিটখিটে মেজাজ দূর করার ৭ সহজ উপায়
আরও পড়ুন : মেহেদির রং গাঢ় করতে জেনে নিন ঘরোয়া টিপস
চলুন, বিশেষজ্ঞের মতে জেনে নিই এই রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার।
টাইনিটাস কী?
ধরুন, চারপাশ একদম নিঃশব্দ, কোনো শব্দ নেই। কিন্তু আপনি শুনতে পাচ্ছেন—মোবাইল ফোনের রিংটোন, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, শোঁ শোঁ শব্দ বা এক ধরনের গুঞ্জন।
এই অদৃশ্য শব্দ শুনতে থাকা অবস্থাকেই বলে ‘টাইনিটাস’। এটি কানের একটি জটিল সমস্যা, যেটা আপনার শ্রবণশক্তির স্থায়ী ক্ষতিও করতে পারে।
কেন হয় এই সমস্যা?
অডিয়োলজি বিশেষজ্ঞ ড. সুগত ভট্টাচার্য বলছেন, টাইনিটাস হওয়ার কিছু মূল কারণ হলো:
- কানে বেশি জোরে শব্দ শোনা (বিশেষ করে হেডফোনে ফুল ভলিউমে গান)
- শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া
- কানের ইনফেকশন বা ময়লা জমা
- মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ
- কিছু শারীরিক রোগ বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও হতে পারে
হেডফোনে গান শোনার সঙ্গে সম্পর্ক কী?
হেডফোন বা ইয়ারবাডে গান শোনার সময় আমরা প্রায়ই সাউন্ড বাড়িয়ে ফেলি, বিশেষ করে আশপাশে শব্দ থাকলে। এই ‘লাউড নয়েজ’-ই সবচেয়ে বড় কারণ টাইনিটাসের।
ইয়ারবাড তো সরাসরি কানের ভেতরে ঢুকে, যা কানের জন্য আরও ক্ষতিকর।
ফুল ভলিউমে গান শোনা শুধু কানের ক্ষতি করে না, মাথাব্যথা, মানসিক চাপ, এমনকি মনোযোগের ঘাটতিও তৈরি করে।
টাইনিটাসের চিকিৎসা আছে?
দুঃখজনকভাবে, টাইনিটাসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে আশার কথা হলো—সঠিক নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যার উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
- সাউন্ড থেরাপি
- কগনিটিভ বিহেভিওর থেরাপি (CBT)
- স্ট্রেস কমানো ও লাইফস্টাইলে পরিবর্তন
- চা-কফি, অতিরিক্ত লবণ বা মাদক থেকে দূরে থাকা
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
হেডফোন ব্যবহার করতেই হলে কীভাবে সেফ থাকবেন?
যারা কাজের প্রয়োজনে বা পড়াশোনার সময় হেডফোন ব্যবহার করতে বাধ্য, তারা কিছু নিয়ম মানলেই ঝুঁকি অনেক কমে যাবে:
৬০/৬০ রুল মেনে চলুন:
- ভলিউম ৬০% এর বেশি নয়
- দিনে ৬০ মিনিটের বেশি হেডফোন ব্যবহার নয়
Noise-canceling হেডফোন ব্যবহার করুন: এগুলো আশপাশের শব্দ কমিয়ে দেয়, ফলে আপনি কম ভলিউমেও শুনতে পারবেন।
মানসিক চাপ কমান: টাইনিটাসের উপসর্গ মানসিক চাপ বাড়লে আরও খারাপ হয়। তাই রিল্যাক্স থাকুন।
আজকের যুগে হেডফোন, ইয়ারবাডের ব্যবহার একেবারে বাদ দেওয়া সম্ভব না—তবে সচেতন ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
আরও পড়ুন : এই ৪ ধরনের মানুষের জন্য রসুন ক্ষতিকর
আরও পড়ুন : আপনার শিশুর এই লক্ষণগুলো কিডনির ঝুঁকির ইঙ্গিত দিতে পারে
শুধু কানে হেডফোন পরা নয়, আপনার শ্রবণশক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য আর ভবিষ্যতের জন্য সচেতন হন।
অন্যথায়, আপনি হয়তো গান শোনার আনন্দ নিতে গিয়ে সেই চিরকালই ‘কানে বাজা এক অদৃশ্য শব্দের’ বন্দী হয়ে পড়বেন।