‘হোমিও-ইউনানি-আয়ুর্বেদ চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদন বৈষম্যপূর্ণ’

2 months ago 28
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে চরম বৈষম্যপূর্ণ বলে মত দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক জাতীয় ঐক্য পরিষদ। পরিষদের নেতারা বলেছেন, প্রতিবেদনে ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো প্রস্তাবনা নেই। বরং এই স্বাস্থ্য খাত সম্পর্কে অনেক ভুল ও অসংগত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা এই প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। সোমবার (২৬ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি হোটেলে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনা শীর্ষক অনুষ্ঠানে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এ দাবি করেন। বৈষম্যবিরোধী হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক জাতীয় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে কোথায় হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের সম্পর্কে কী ‘ভুল’ তথ্য ও পরিসংখ্যান রয়েছে, তা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়। সম্মেলনে এই চিকিৎসা খাত নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তুলে ধরেন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. মির্জা লুতফর রহমান লিটন ও সদস্য সচিব ডা. তাওহিদ আলবেরুনী। এ সময় পরিষদের সদস্য ডা. আমিনুল বারী কানন, ডা. মিজানুর রহমান খান, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান সোহাগ, ডা. কাজী হাবিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এই চিকিৎসকরা দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক খাতে ইতিবাচক সংস্কার ও উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মত দেন এবং এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সুদৃষ্টি কামনা করেন। সম্মেলনে বলা হয়, কমিশনের প্রতিবেদনে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে অসংগত তথ্য উপস্থাপন ও চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। কমিশনে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা খাতের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এমনকি কমিশন হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ, ইউনানি আয়ুর্বেদিক বোর্ড, কাউন্সিল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট খাতের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের থেকে মতামত নেয়নি। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ হোমিওপ্যাথি এবং শূন্য দশমিক ২ শতাংশ মানুষ আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা নেন। তবে এ পরিসংখ্যান ঠিক নয়, এর আগে বিভিন্ন জাতীয় জরিপ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২৮ শতাংশের বেশি মানুষ হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নেন। আরও বলা হয়, দেশে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধিত হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে ৬০৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানের ওষুধের বাজার কমপক্ষে আড়াই হাজার কোটি টাকার। দেশে এই ধরনের চিকিৎসক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। আয়োজকরা বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন’ বা সনাতন চিকিৎসাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। চীন ও ভারতে এর বিশেষ কদর রয়েছে। বাংলাদেশেও এসব চিকিৎসা মূলত ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের আওতাভুক্ত। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতেও একে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা তো স্বীকৃত চিকিৎসক। তারা কোন পরিচয়ে চিকিৎসাসেবা দেবেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মির্জা লুৎফর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদনে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের প্রতি চরম অবহেলা দেখানো হয়েছে, অবমাননা করা হয়েছে। আমরা এ প্রতিবেদনের সংশোধন চাই।
Read Entire Article