‘হয় গুলি খাইতে হবে, নয় রিজাইন দিয়ে বের হতে হবে’

2 hours ago 4

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া নামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষককে মারধর ও জিম্মি করে পদত্যাগপত্রে সই নিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। এর আগে হামলাকারীদের মেসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশনা ছিল—‘হয় গুলি খাইতে হবে, নয় রিজাইন দিয়ে বের হতে হবে’।

বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে আমিশাপাড়া ইউনিয়নের আবিরপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতন স্কুলে এ ঘটনা ঘটে।

পরে আহত অবস্থায় ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে চাটখিলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ছে। হামলার সময় বাধা দিলে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।

‘হয় গুলি খাইতে হবে, নয় রিজাইন দিয়ে বের হতে হবে’

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকরা জানান, বুধবার দুপুরে বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা চলছিল। হঠাৎ বেশকিছু তরুণ প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢোকেন। এসময় তারা প্রধান শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে সই দিতে চাপ দিতে থাকেন। পরে না দিতে চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ মারধর করেন।

ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক আবু জায়েদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বৈরাচারের সময় থেকে মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া প্রধান শিক্ষক, এটা সত্য। তবে তাকে সরিয়ে দিতে একটা প্রক্রিয়া আছে। তা না মেনে জিম্মি করে মারধর করে পদত্যাগ করানো নিন্দনীয়। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি কাম্য নয়।’

প্রধান শিক্ষক মাহফজুর রহমান ভূঁইয়ার স্ত্রী রাবেয়া বেগমের ভাষ্য, ‘হামলাকারীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিদ্যালয়ে ঢোকে। তারা আমার স্বামীকে মারধর করে লিখিত পদত্যাগপত্রে এবং দুটি সাদা কাগজে সই আদায় করে নিয়েছে। হামলাকারীরা স্থানীয়ভাবে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চাই।’

‘হয় গুলি খাইতে হবে, নয় রিজাইন দিয়ে বের হতে হবে’

এদিকে হামলাকারীদের মেসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশনার একটি স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রথমে ২-৩ জন স্কুলে ঢুকবে আর হেডমাস্টারের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা চালিয়ে যাবে। কথা না শুনলে জোর করে মোবাইল ফোন নিয়ে নেবে। তারপর ভেতরে রিজাইন করতে বাধ্য করবে। যতক্ষণ (পদত্যাগ) করবে না ততক্ষণ আটকে রাখবে। লাস্টে না শুনলে একটা মেশিন বের করবে। হয় গুলি খাইতে হবে শরীরে, নয় রিজাইন দিয়ে বের হতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবিরপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতন স্কুলের সভাপতি ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথিত এপিএস জাহাঙ্গীর আলম। তার লোক হিসেবে মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া এখানে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তিনি বিদ্যালয়ের কক্ষ দখল করে আবাসিক বাসা গড়ে তোলায় এলাকার অনেকে আপত্তি তোলেন। এরমধ্যে তাকে বহিষ্কারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতও দেন তারা। অন্যদিকে, হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল থেকে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়ার ঘটনাটি শুনেছি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

‘হয় গুলি খাইতে হবে, নয় রিজাইন দিয়ে বের হতে হবে’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরিন আক্তার বলেন, ‘মঙ্গলবার এলাকার কিছু লোক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন। তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তাদের বলা হয়েছিল। এরমধ্যে বুধবার একদল ব্যক্তি হামলার ঘটনা ঘটায়। দুপুরের হামলার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক ফোনে অবহিত করেন।’

সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক বলেন, হামলার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। এতে বিএনপি বা সহযোগী সংগঠনের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা জামায়াতের আমির হানিফ মোল্লা বলেন, শুনেছি প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সোচ্চার হয়েছেন। তবে হামলার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। খোঁজ নিয়ে জেনেছি এ ঘটনায় জামায়াতের কেউ জড়িত ছিলেন না।

ইকবাল হোসেন মজনু/এসআর/জিকেএস

Read Entire Article