১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেলেন ৭৬ জন
‘সেবার ব্রতে চাকরি’ স্লোগানে শতভাগ মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে নওগাঁয় পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকরি পেয়েছেন ৭৬ জন। রোববার (২৪ নভেম্বর) রাতে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ শেষে ওই রাতেই উত্তীর্ণ হওয়া ওই তরুণ-তরুণীদের নাম ঘোষণা করেন নওগাঁর পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. কুতুব উদ্দিন। এই চাকরি পেতে অনলাইন আবেদন খরচ বাবদ জনপ্রতি খরচ হয়েছে মাত্র ১২০ টাকা।
জানা গেছে, উত্তীর্ণ ৭৬ জনের মধ্যে ১২ নারী ও ৬৪ পুরুষ রয়েছেন। তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২ জন ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ১ জন চাকরি পেয়েছেন। এ ছাড়া আরও ৬ জনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রেখে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। মেডিকেল ও পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে উত্তীর্ণদের যোগদান করানো হবে।
নিয়োগপ্রাপ্তরা অনেকে তাদের তাৎক্ষণিক অনুভূতি ব্যক্ত করেন। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে অত্যন্ত স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় তারা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
তারা জানান, ‘তারা অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এর আগের নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েও টাকা না থাকায় চাকরি পাননি। তবে এবার মাত্র ১২০ টাকা খরচ করেই চাকরি পেয়েছেন।’
চাকরি পেয়ে উচ্ছ্বসিত জুবায়ের আল মামুন বলেন, ‘আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। সাংসারিক খরচসহ তার পড়ালেখার জন্য মা-বাবা অনেক কষ্ট করেছেন। একটা চাকরির জন্য খুব আশায় ছিলেন। কোনো ঘুষ কিংবা তদবির ছাড়াই মেধার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছি।’
নতুন নিয়োগ পাওয়া কারিনা আক্তার বলেন, ‘নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। তাদের কষ্ট সফল হয়েছে আজ। পরিবারের সবাই আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমি তাদের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। সবাই বলে পুলিশে চাকরি পেতে অনেক টাকা ঘুষ দিতে হয়। আমার মাঝেও তেমন ধারণা ছিল। কিন্তু আমার কোনো প্রকার তদবির বা ঘুষ দিতে হয়নি। আমি দেশ ও জাতির সেবা করতে চাই।’
সদ্য চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. কুতুব উদ্দিন। তিনি উত্তীর্ণদের দেশপ্রেম, সততা, পেশাদারিত্ব ও সেবার মনোভাব নিয়ে পুলিশ বিভাগে চাকরি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কোনো তদবির ছাড়াই সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হয়েছে। চাকরি পেতে প্রত্যেক প্রার্থীকে মাত্র ১২০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। রাষ্ট্রের সেবায় মেধাবী ও দক্ষ পুলিশ জনবল নিশ্চিত করতে পেরে ভালো লাগছে। এসব মেধাবী দ্রুত পুলিশের বিভিন্ন কৌশল ও পাঠগুলো আয়ত্ত করতে পারবে। এতে আগের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ পুলিশ বিভাগ গড়ে উঠবে বলে আশা করছি।’
এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন, দুজন আইজিপি প্রতিনিধি ও দুজন ডিআইজি প্রতিনিধি সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দালাল ও প্রতারকের খপ্পরে পড়ে কেউ যাতে আর্থিক লেনদেন না করেন সে জন্য জেলাজুড়ে প্রচারণা ও গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হয়।
উল্লেখ্য, ৮৫৮ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে ১৯৯ জন ভাইভা ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হয়। তাদের মধ্যে ৭৬ জন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।