১৬ বছরে দেখিনি কোনো সংসদ সদস্য আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছেন

3 months ago 49

নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হবে বৃহস্পতিবার (৬ জুন)। ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাছে এখন আলোচনার বিষয় বাজেট। ব্যতিক্রম নয় রাজশাহীও। বাজেট ভাবনা নিয়ে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকুর সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজশাহী প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন

জাগো নিউজ: বাজেট ও রাজশাহীর উন্নয়ন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

মাসুদুর রহমান রিংকু: রাজশাহী কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এ অঞ্চল থেকে প্রতিদিন ২০০-২৫০ ট্রাক জীবন্ত মাছ যায় বাইরের জেলাগুলোতে। ঢাকাসহ ১৮ জেলায় মাছ যায়। এটাতে হিউজ পরিমাণে একটা ট্রানজেকশন আছে। প্রতিদিন ৬-৮ কোটি টাকার ট্রানজেকশন হয়। এই খাতে সরকার যদি একটি মৎস্য প্রসেসিং জোন করে দেয়, সেই দাবি আমরা করে আসছি। যেহেতু আমাদের এখানে কোনো ফ্যাক্টরি নেই, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি নেই। আমরা বলেছি, কৃষিটাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করবো। এই অঞ্চলে ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।

আমকে নিয়ে কাজ করার সম্ভাবনা আছে। পান নিয়ে কাজ করার সম্ভাবনা আছে। টমেটো নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। মাছতো আছেই। এগুলো আমরা বারবার চাচ্ছি। আসন্ন বাজেটে আমরা এগুলোই চাচ্ছি। দাবিগুলোর একটিও যদি ফুলফিল হয়, এই অঞ্চল জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখবে। এই অঞ্চলে ভারী শিল্প নেই। এখানে কৃষি বেসড জোন (কৃষিভিত্তিক জোন) করার দাবি আমরা বারবার করে আসছি। এই অঞ্চলে কৃষি বেসড জোন হলে আমরা সরাসরি শাকসবজি, আম, পান বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো। এজন্য সরকারের সহযোগিতা আমরা চেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখিনি। আমরা আমাদের বাজেট প্রস্তাবনায় একই কথা বলেছি। আমাদের কিছু সমস্যার কথাও বলেছি।

জাগো নিউজ: যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে আপনাদের চাওয়া কী?

মাসুদুর রহমান রিংকু: আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইনের কথা আমরা বলেছি। সোনামসজিদ থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ফোর লেন, হাটিকমরুল থেকে রাজশাহী ফোর লেনের কথা বলেছি। কিন্তু এগুলো এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। আমাদের নতুন সম্ভাবনা দুয়ার খুলেছে সুলতানগঞ্জ থেকে মায়া নৌবন্দর। এই বন্দরও যদি আমরা সারাবছর ব্যবহার করতে পারি, তাহলে অনেক পণ্য আমরা আদান-প্রদান করতে পারবো।

আপনারা জানেন বিশ্বের সবচেয়ে কম খরচ নৌপথে। একটি ট্রাকে যে পরিমাণ পণ্য আসে তার তুলনায় একটি বার্জে যে পরিমাণ মালামাল ওঠে তা ১০ ট্রাকের সমান। সেখানে ব্যবসায়ীদের সাশ্রয় হয়। কিন্তু এই পোর্টটি (মায়া নৌবন্দর) এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ পোর্ট হয়নি। ট্রায়াল শেষ হয়েছে। এখনো প্রতিবেদনের অপেক্ষায়। আমাদের সোনামজিদ পোর্ট থেকে এই পোর্ট ব্যবহার করলে ব্যবসায়ীদের শুধু পাথর আনতেই প্রতি সেপ্টিতে অন্তত পাঁচ ডলার সাশ্রয় হবে।

জাগো নিউজ: রাজশাহী অঞ্চলের উন্নয়নে জনপ্রতিনিধিদের কেমন সহায়তা পাচ্ছেন?

মাসুদুর রহমান রিংকু: আমাদের এই অঞ্চলে ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের ছয়টি আসন আছে। আমাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার জায়গা কিন্তু সংসদ ভবন। আমি ১৬ বছরে দেখিনি কোনো সংসদ সদস্য আমাদের এই দাবিগুলো তুলে ধরেছেন। দাবিগুলো আপনাদের মাধ্যমে যেটুকু প্রচার হচ্ছে সেটুকুই। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। এনবিআরের চেয়ারম্যান ৩৬৫ দিনে একদিন এখানে আসেন প্রাক-বাজেট অনুষ্ঠানে। এই একদিনেইতো সীমাবদ্ধ।

আমাদের দৌড়টা কতটুকু। আমাদের দৌড় মেয়র, স্থানীয় সংসদ সদস্য পর্যন্ত। এর বাইরেতো আমরা যেতে পারবো না। নীতিনির্ধারক যারা আছেন তারাতো বসেন ঢাকায়। ঢাকায় এই দাবি প্রচার করা বা জোর করে আদায় করাতে যে ফোর্স দরকার তারাইতো এটি করবেন। আমরা বারবার আওয়ামী লীগের এমপিকে প্রতিনিধিত্ব করাচ্ছি। তারাইতো আমাদের এই অঞ্চলের দাবি-দাওয়া আদায় করে নিয়ে আসবেন।

আমরা এই অঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে যে ডেভেলপমেন্ট করছি সেটা কিন্তু নিজেদের উদ্যোগে। আমি কেন নিজেদের উদ্যোগের কথা বলছি? দেখেন রাজশাহীর আম আমাকে কেন কনটেন্ট করতে ঢাকায় পাঠাতে হবে? এটাতো কাঁচা পণ্য। কেন এটাকে ঢাকায় পাঠাতে হবে? তারা সার্টিফাইড করবে, তারপর আমরা পাঠাতে পারবো। আমাদের কথা হচ্ছে এখানে ফল গবেষণা ইনস্টিটিউট আছে, সায়েন্স ল্যাবরেটরি আছে। এটাকে কাজে লাগান না কেন? এটাকে কাজে লাগালে আমরা সাপোর্ট পাবো। এটাকে পাচ্ছি না বলেইতো আমাদের নিজেদের উদ্যোগে ঢাকায় যেতে হচ্ছে।

একজন ব্যবসায়ীকে যেতে-আসতেতো খরচ হচ্ছে। এটাতে পণ্যের মূল্যও বেড়ে গেলো। এগুলো নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন এগুলো বিভাগীয় শহরে হবে। তবে এই কাজটি করিয়ে নিয়ে আসার জন্য সেক্টর অনুয়ায়ী কাজ করতে হবে। এটার জন্য সংসদ সদস্য, মেয়রকে ভূমিকা রাখতে হবে। তারপরই এটি আলোর মুখ দেখবে।

সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/এমএস

Read Entire Article