ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়ার কথা থাকলেও দিন-তারিখ এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। তবে সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনেই বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেমেছেন মাঠে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই তারা নানাভাবে নির্বাচনী এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। রাজনৈতিক নানান কর্মসূচিতে যোগদানের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন সামাজিক কর্মকাণ্ডে। অতিথি হচ্ছেন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও। এলাকার মানুষের সমর্থন চাইছেন। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার ও পোস্টার সাঁটিয়ে চাইছেন দোয়া। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো সাংগঠনিক বা দলীয় তৎপরতা নির্বাচনী এলাকায় নেই।
সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনের মধ্যে একটি সিরাজগঞ্জ-৩। এটি রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৪৩। ২ লাখ ৬ হাজার ৩৭৫ নারী, ২ লাখ ৮ হাজার ৪৬৩ পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছেন পাঁচজন।
এ আসনে আগাম নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন বিএনপির সম্ভাব্য ১৭ প্রার্থী। তবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জেলা বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভিপি আয়নুল হক, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রাকিবুল করিম খান পাপ্পু ও প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান তালুকদারের ছেলে রাহিদ মান্নান লেনিন।
- আরও পড়ুন
- বিএনপিতে গ্রুপিং-কোন্দল, মাঠে ছুটছেন জামায়াতের বুলবুল
- বিএনপির ঘাঁটিতেও প্রভাব বেড়েছে জামায়াতের
- বিএনপির চ্যালেঞ্জ জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন
জামায়াতের একক প্রার্থীও জোর সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি দলটির নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কৌশলের অংশ হিসেবে মসজিদ-মাদরাসা ও পাড়া-মহল্লায় সমবেত হয়ে বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে তারা ইসলামি শাসনব্যবস্থার নানাদিক তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন। সমর্থন চাইছেন সাধারণ ভোটারদের৷
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় ফেস্টুন-ব্যানার ও পোস্টার সাঁটিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার কামাল হোসেন, দুলাল হোসেন খান, রুহী আফজাল, সাইফুল ইসলাম শিশির, ব্যারিস্টার আব্দুল বাতেন, নাসির উদ্দিন, স. ম আফছার আলী, আমিনুল বারী তালুকদার, অধ্যাপক আব্দুল হাকিম, আব্দুল আলীম, সবুজ্জল হোসেন উজ্জ্বল, রাকিবুল আলম মিঞা অপু ও সাব্বির আহম্মেদ।
এ আসনে আল-আরাফাহ্ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল ইসলাম উজ্জ্বল নামে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও মাঠে কাজ করছেন।
আসনটিতে বিএনপির অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আব্দুল মান্নান তালুকদার। তবে তিনি গত ১৮ জুলাই ঢাকার নিজ বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বিএনপি থেকে মনোনীত হয়ে ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ, জুন ১৯৯৬ সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন তিনি। প্রবীণ এই নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন। পিতার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সুনাম কাজে লাগাতে এরইমধ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন ছেলে রাহিদ মান্নান লেনিন। গত ১৬ বছরে বিএনপির যেসব নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের হামলা মামলায় নিষ্ক্রিয় ও বিপর্যস্ত ছিলেন তাদের সংগঠিত করছেন লেনিন।
- আরও পড়ুন
১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত - লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
- প্রার্থী নিয়ে কোন্দল মিটেছে বিএনপির, সুযোগ খুঁজছে জামায়াত
আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে জেলা বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ভিপি আয়নুল হক জাগো নিউজকে বলেন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সামনের সারি থেকে লড়াই-সংগ্রাম করেছি। ১৭টি রাজনৈতিক মামলায় অন্তত ছয়বার কারাবরণ করেছি। তবুও জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শ থেকে একচুলও বিচ্যুত হইনি। নিঃস্বার্থভাবে দলের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি৷ দলের দুর্দিনে অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ আজ তারাই প্রার্থী সেজেছে। আমি বিশ্বাস করি দলের দুর্দিনে সঙ্গে ছিলাম, দল নিশ্চয়ই আমাকে অগ্রাধিকার দেবে।
এই আসনে আরও নির্বাচন করতে চান ব্যারিস্টার আব্দুল বাতেন, দুলাল হোসেন খান, কামাল হোসেন, নাসির উদ্দিন, রুহী আফজাল ও সাইফুল ইসলাম শিশির
জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আমি দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছি। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমাকে আগামীতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সামনের সারি থেকে লড়াই-সংগ্রাম করেছি। ১৭টি রাজনৈতিক মামলায় অন্তত ছয়বার কারাবরণ করেছি। তবুও জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শ থেকে একচুলও বিচ্যুত হইনি। নিঃস্বার্থভাবে দলের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি৷ দলের দুর্দিনে অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ আজ তারাই প্রার্থী সেজেছে। আমি বিশ্বাস করি দলের দুর্দিনে সঙ্গে ছিলাম, দল নিশ্চয়ই আমাকে অগ্রাধিকার দেবে।
এ আসনে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান ‘ওরিয়েন্টাল’ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রাকিবুল করিম খান পাপ্পু। তিনি বিগত সময়ে তার নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসন থেকে বারবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। ওই আসনে এবার বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আমিরুল ইসলাম খান আলীম। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী) ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে পাপ্পু এবার তার মনোনয়নের ঝুঁকি এড়াতে জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে রায়গঞ্জ উপজেলার শ্যামনাই গ্রামের বাসিন্দা হয়েছেন। নির্মাণ করছেন বাড়ি। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে তার চেহারা দেখা তো দূরের কথা, কেউ নামও শোনেননি বলে স্থানীয় একাধিক বিএনপি নেতা ও ভোটাররা জানিয়েছেন।
- আরও পড়ুন
- নিজামীর ছেলে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী, ধানের শীষ চান অনেকেই
- বিভক্ত বিএনপি, সুযোগ নিতে চায় জামায়াত
- সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াতের এমপি প্রার্থী, বিএনপিতে সম্ভাব্য তিন
এ আসনে হঠাৎ দলীয় প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে রাকিবুল করিম খান পাপ্পু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে যে কোনো আসনে প্রার্থী হতেই পারি। এটা নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা নেই। তাছাড়া আমি এখন রায়গঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা। এ আসনে বিএনপির ভোটার বেশি। তবে পতিত সরকারের আমলে প্রহসনের চারটি নির্বাচনে দলীয় ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেনি। আগামীতে দল আমাকে মনোনীত করলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো।’
দেশের একজন নাগরিক হিসেবে যে কোনো আসনে প্রার্থী হতেই পারি। এটা নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা নেই। তাছাড়া আমি এখন রায়গঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা। এ আসনে বিএনপির ভোটার বেশি। তবে পতিত সরকারের আমলে প্রহসনের চারটি নির্বাচনে দলীয় ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেনি। আগামীতে দল আমাকে মনোনীত করলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো।
এছাড়া বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় ফেস্টুন-ব্যানার ও পোস্টার সাঁটিয়েছেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার কামাল হোসেন, দুলাল হোসেন খান, শিল্পপতি ও নারী উদ্যোক্তা রুহী আফজাল, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশির, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আব্দুল বাতেন, জেলা যুবদলের সাবেক নেতা ও বর্তমান সিরাজগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সরকারি সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) নাসির উদ্দিন, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি স. ম আফছার আলী, নিমগাছী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল বারী তালুকদার, তাড়াশ উপজেলা বিএনপি নেতা অধ্যাপক আব্দুল হাকিম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আলীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা সবুজ্জল হোসেন উজ্জ্বল, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রাকিবুল আলম মিঞা অপু ও জার্মান প্রবাসী সাব্বির আহম্মেদ।
- আরও পড়ুন
- নির্বাচন বিতর্কিত হলে দেশ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাবে
- প্রধান উপদেষ্টা যে মাসে বলেছেন ওই মাসেই নির্বাচন
- আগামী সংসদ নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হবে: গোলাম পরওয়ার
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে দলীয় ও সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য প্রফেসর ড. শায়খ মাওলানা আব্দুস সামাদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দল আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ লক্ষ্যে প্রতিদিনই সাংগঠনিক কার্যক্রম ও এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আশা করছি বিজয়ী হবো।
জামায়াতের একক প্রার্থীও জোর সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি দলটির নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কৌশলের অংশ হিসেবে মসজিদ-মাদরাসা ও পাড়া-মহল্লায় সমবেত হয়ে বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে তারা ইসলামি শাসনব্যবস্থার নানাদিক তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন। সমর্থন চাইছেন সাধারণ ভোটারদের৷
আসনটিতে আল-আরাফাহ্ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল ইসলাম উজ্জ্বল নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাবি করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ২০২৪ এর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক মার্কায় নির্বাচন করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনে পরাজিত হয়েছি। আমি এবারও প্রার্থী।’
অন্যদিকে ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক নেতারা গত কয়েকটি নির্বাচনে অংশ নিলেও আসন্ন নির্বাচনে তাদের কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে।
এমএএম/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম