২০ লাখ টাকা ছিনতাই, বিচারের মুখোমুখি ২ পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন

1 month ago 8

রাজধানীতে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে করা মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ পাঁচজন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন বিচারক। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় তা বদলির আদেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন পল্টন মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় ডেমরা পুলিশ লাইনসের দুই কনস্টেবল মাহাবুব আলী ও আছিফ ইকবাল এবং তাদের তিন সহযোগী শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেলকে আসামি করা হয়। গত ২৫ এপ্রিল পাঁচজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩৯৫ ও ৩৯৭ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমিত কুমার সাহা। এই অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত।

‘ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পেয়ে দণ্ডবিধি ৩৯৫/৩৯৭ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।’- সুমিত কুমার সাহা, এসআই, পল্টন থানা

বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় বদলির আদেশ

গত ১০ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে মামলাটি বিচারের জন্য বদলির আদেশ দেন। বিচারক আদেশে বলেন, মামলাটির ধার্য তারিখ আজ। আসামি মাহাবুব আলী, আছিফ ইকবাল, হৃদয়, রাসেল ও শাহজাহানের বিরুদ্ধে গত ২৫ এপ্রিল দণ্ডবিধি ৩৯৫ ও ৩৯৭ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে। আসামি শাহজাহান ছাড়া সব আসামি জামিনে। শাহজাহান জামিনে পলাতক রয়েছেন। অভিযোগপত্র গৃহীত। অভিযোগপত্রে উল্লেখিত পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩৯৫ ও ৩৯৭ ধারায় অভিযোগপত্র আমলে গ্রহণ করা হলো। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত। পরবর্তী বিচারের জন্য নথি সিএমএম বরাবর প্রেরণ করা হলো।

অপরাধ সত্য বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত

আসামি মাহাবুব আলী, আছিফ ইকবাল, হৃদয়, রাসেল ও শাহজাহানের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পেয়ে গত ২৫ এপ্রিল দণ্ডবিধি ৩৯৫ ও ৩৯৭ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই সুমিত কুমার সাহা। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তারা ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন।

 jagonews24

অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে সাজা হতে পারে

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩৯৫ ও ৩৯৭ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

‘ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। আদালত অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়েছে। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় তা বদলির আদেশ দিয়েছেন আদালত।’- আলমগীর হোসেন, আদালতে পল্টন থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা

ডাকাতির শাস্তি

দণ্ডবিধি ৩৯৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ডাকাতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে।

মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত সংঘটনের উদ্যোগ সহকারে দস্যুতা বা ডাকাতি

দণ্ডবিধি ৩৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি দস্যুতা বা ডাকাতি সংঘটনকালে অপরাধকারী কোনো মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করে, অথবা কাউকে গুরুতর আঘাত করার উদ্যোগ করে, তবে যে কারাদণ্ডে অনুরূপ অপরাধকারীকে দণ্ডিত করা হবে তার মেয়াদ সাত বছরের কম হবে না।

ছিনতাই হওয়া ২০ লাখ টাকা বাদীর জিম্মায়

ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং অফিসার আজিমের ব্যাগসহ ২০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান আসামিরা। এ ঘটনায় করা মামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এই ২০ লাখ টাকা আদালতের আদেশে বাদীর জিম্মায় দেওয়া হয়। গত ৪ অক্টোবর এই টাকা বুঝে পেয়েছেন বলে হলফনামা দিয়েছেন মামলার বাদী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছিনতাই হওয়া ২০ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছি।’

‘পুরো বিষয়টা আমি পুলিশকে জানাই। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা উদ্ধারসহ আসামিদের গ্রেফতার করে। এজন্য পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে অন্য কোনো পুলিশ সদস্য এমন নিকৃষ্ট কাজে জড়িত না হয়।’- আবদুল্লাহ আল মামুন, মামলার বাদী

কী হয়েছিল সেদিন

গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন তার প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং অফিসার মো. আজিমকে (২১) মোট ২১ লাখ পাঁচ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠান। বাদীর মতে, মার্কেটিং অফিসার আজিম মামলার ঘটনাস্থল পল্টন মডেল থানাধীন ৫৭, পুরানা পল্টন লাইনে টিডেন্ট টাওয়ারে আইএফআইসি ব্যাংকের উপশাখায় এক লাখ টাকা বাদীর এক গ্রাহকের হিসাব নম্বরে জমা দেন। এরপর আজিম অবশিষ্ট ২০ লাখ পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে বাদীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের এক্সিম ব্যাংকের পল্টন শাখায় জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। এ সময় কনস্টেবল মাহাবুব আলী ও আছিফ ইকবাল পুলিশের পোশাক পরা অবস্থায় ব্যাংকে প্রবেশ করেন। অন্য আসামিরা ব্যাংকের ভেতরে ও আশেপাশে অবস্থান করছিলেন। আসামি মাহাবুব ও আছিফ ব্যাংকে ঢুকে অন্য আসামিদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক ও সহযোগিতায় বাদীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং অফিসার মো. আজিমকে জোর করে বাইরে নিয়ে আসেন। পুলিশ সদস্যরা আজিমকে জানান, তার নামে মামলা আছে। তার কাছে থাকা টাকাগুলো অবৈধ। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে টাকাভর্তি ব্যাগ নিজেদের দখলে নেন দুই পুলিশ কনস্টেবল।

jagonews24

বিভিন্ন এলাকা ঘোরানো হয় আজিমকে

আজিমকে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। পরে ঘটনাস্থল ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ মোতাবেক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ। লুণ্ঠিত টাকার মধ্যে আসামি মাহাবুব আলী ও আছিফ ইকবালের হেফাজত থেকে ১০ লাখ টাকা, আসামি হৃদয়ের হেফাজত থেকে ছয় লাখ এবং আসামি রাসেলের হেফাজত থেকে চার লাখ টাকা উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।

যে যা বললেন

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই সুমিত কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পেয়ে দণ্ডবিধি ৩৯৫/৩৯৭ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।’

আদালতে পল্টন থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। আদালত অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়েছে। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় তা বদলির আদেশ দেন আদালত।

এ বিষয়ে মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি প্রথমে শুনে আশ্চর্য হয়েছিলাম যে ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য জড়িত! প্রথমে বিষয়টা সত্য মনে করছিলাম যে আমার কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলাও থাকতে পারে। পুরো বিষয়টা আমি পুলিশকে জানাই। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা উদ্ধারসহ আসামিদের গ্রেফতার করে। এজন্য পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে অন্য কোনো পুলিশ সদস্য এমন নিকৃষ্ট কাজে জড়িত না হয়।’

জেএ/এমএমএআর/জিকেএস

Read Entire Article