নারীদের কাছে সোনার গহনার কদর তুলনামূলক অন্যান্য ধাতুর চেয়ে অনেক বেশি। বহুকাল ধরেই সোনা অলঙ্কার তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে। এটিকে একদিকে যেমন নারীরা সাজসজ্জায় ব্যবহার করছেন তেমনি গয়নার পরিমাণ তারা তাদের আভিজাত্যের অংশ বলেই মনে করেন। অনেকে আবার সোনার গয়না কেনা এক ধরনের ইনভেস্টমেন্ট বলেই ধরে নেন। বিপদের বন্ধু মনে করেন সোনাকে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েই চলেছে। এক বছরে সোনার দাম প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ বা তারও বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। বাজারের অবস্থা, বৈদেশিক মুদ্রার অভিসর, আন্তর্জাতিক সোনা বাজার, আমদানির খরচ ও অন্যান্য আরও বেশ কিছু কারণেই সোনার দাম বাড়ছে।
অনেকেই এখন সোনা কিনছেন। কিন্তু কত ক্যারেটের সোনা কিনবেন তা বুঝতে পারেন না। বিশেষ করে ২১ এবং ২২ ক্যারেটের সোনা নিয়েই বেশি ঝামেলায় পোহাতে হয়। দামেও কিন্তু বেশ কম বেশি আছে এর। আসলে ২১ এবং ২২ দুই ক্যারেটের সোনাই আসল এবং ব্যবহার উপযোগী। তবে এদের মধ্যে ধাতুর মিশ্রণ কমবেশি থাকে।
গয়নায় সোনার বিশুদ্ধতা ক্যারেট দিয়ে পরিমাপ করা হয়, যেখানে ২৪ ক্যারেট সোনা ১০০ শতাংশ খাঁটি সোনা। ফলে খুবই নমনীয় হয় এই সোনা, যার কারণে এটির তৈরি গয়না ব্যবহার উপযোগী হয় না। ২১ ক্যারেট এবং ২২ ক্যারেট সোনার গয়না দুটোই আসল সোনা দিয়ে তৈরি, তবে তাদের বিশুদ্ধতার মাত্রায় পার্থক্য রয়েছে।
২১ ক্যারেট সোনার বিশুদ্ধতার মাত্রা ৮৭.৫ শতাংশ, অর্থাৎ এতে ২১ ভাগ সোনা এবং ৩ ভাগ অন্যান্য ধাতু যেমন তামা বা রূপা থাকে। এটি ২২ ক্যারেট সোনার তুলনায় এটিকে কম খাঁটি করে তোলে। অন্যদিকে ২২ ক্যারেট সোনার বিশুদ্ধতার মাত্রা ৯১.৬ শতাংশ, অর্থাৎ এতে ২২ ভাগ সোনা এবং ২ ভাগ অন্যান্য ধাতু থাকে। এই উচ্চতর বিশুদ্ধতার মাত্রার ফলে একটি সমৃদ্ধ, গাঢ় হলুদ রং এবং একটি নরম, আরও নমনীয় টেক্সচার তৈরি হয়।
সোনার পরিমাণ যত বেশি হবে, গয়না তত বেশি মূল্যবান হবে। তবে বিশুদ্ধতা যত বেশি হবে, সোনা তত নরম হবে এবং এতে আঁচড় এবং ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি তত বেশি হবে। এই কারণে ২১ ক্যারেট সোনা এমন গয়না তৈরিতে ব্যবহার হয় যেগুলো সারাক্ষণ ব্যবহার করা যাবে। অন্যদিকে ২২ ক্যারেট সোনা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য বা মাঝে মাঝে পরা হবে এমন গয়না তৈরি ব্যবহার হয়। তবে দৈনন্দিন ব্যবহার করলে বেশ যত্ন নিতে হবে।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ১৮ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট এবং ২২ ক্যারেট সোনা উভয়ই মূল্যবান এবং সুন্দর গয়না তৈরি করতে পারে, এবং পছন্দটি শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত পছন্দ এবং পরিধানকারীর নির্দিষ্ট চাহিদার উপর নির্ভর করে।
এবার আসুন আসল নকল কীভাবে চিনবেন।
১. হলমার্ক / স্ট্যাম্প পরীক্ষা করো
২১ ক্যারেট এবং ২২ ক্যারেটের গহনা কিনতে হলমার্ক দেখে নিন। গয়নার গায়ে লেখা থাকবে ‘২২K’, ‘২১K’, ‘916’, ‘875’ ইত্যাদি যেখানে ‘K’ মানে ক্যারেট, ‘৯১৬’ বা ‘৮৭৫’ মিলেসিমাল ফিনেস। খেয়াল করুন সেই স্ট্যাম্প স্পষ্ট ও ভালোভাবে খোদাই করা কি না; অস্পষ্ট, আঁকাবাঁকা হলে সেটি নকল স্ট্যাম্প হয়ে থাকতে পারে।
২. সোনার রং-চেহারা
খাঁটি সোনা সাধারণত গাঢ় হলুদ রঙের হয়ে থাকে। রং অনেক উজ্জ্বল বা কম হলুদ লাগলে হয়তো মিক্স বেশি থাকতে পারে। আলোর নিচে ধরে দেখতে পারেন। খাঁটি সোনা প্রতি দিক থেকে একই রং দেখায় কি না; যদি কোনো অংশে অন্য ধাতুর ছাপ পাওয়া যায় (একটা দিক গাঢ়, অন্যটা ফ্যাকাশে) তাহলে সন্দেহ থাকবেই।
৩. ম্যাগনেট পরীক্ষা
সোনা চুম্বকে আকৃষ্ট হয় না। যদি কোনো শক্তিশালী চুম্বক সোনার সঙ্গে লেগে থাকে, তাহলে সম্ভবত এটি কোনো বেস ধাতু দিয়ে তৈরি, আসল সোনা নয়।। তবে মনে রাখতে হবে কিছু সংযুক্ত ধাতু খুব সামান্য চৌম্বকীয় হতে পারে। তাই এটি সবসময়ের জন্য নির্ভরযোগ্য নয়।
৪. ওজন ও ঘনত্ব পরীক্ষা
সোনা সাধারণত ওজন অনুযায়ী ঘন হয়। যা পানিতে ঢুবে যায়। পানিতে দিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। আবার ঘনত্ব বের করার যন্ত্র বা মাস্টার পিস ব্যবহার করা যেতে পারে (এক গহনায় কত ঘন হলে সোনা হতে পারে সে রেট চেক করে)।
৫. স্ক্র্যাচ টেস্ট
একটি আনগ্লেজড সিরামিক প্লেটে জিনিসটি আলতো করে ঘষুন। একটি আসল সোনার টুকরো সোনালি রঙের রেখা রেখে যাবে, অন্যদিকে নকল সোনা কালো বা ধূসর দাগ রেখে যাবে।
৬. অ্যাসিড / রসায়নিক পরীক্ষা
এটি যদিও সাধারণ মানুষ করতে পারবেন না। তবুও জেনে রাখুন হয়তো কখনো কাজে আসতে পারে। এটি পেশাদাররা করে থাকেন। গহনার একটি অপ্রকাশিত বা কম দৃশ্যমান অংশে হালকা স্ক্র্যাচ তোলে (যেখানে ক্ষতি কম হবে), তারপর বিশেষ করে নাইট্রিক অ্যাসিড প্রয়োগ করা হয়। যদি সেই অংশ দ্রুত ধুয়ে যায় বা রং পরিবর্তন হয়, তাহলে সেটা খাঁটি নয়। এই পরীক্ষা বাড়িতে করতে যাবেন না। পেশাদার যন্ত্র বা জুয়েলারের কাছে করানো ভালো-কারণ অ্যাসিড ভুলভাবে ব্যবহার করলে গহনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সোনা কিনতে বিশ্বস্ত দোকান বেছে নিন। কেনার আগে সেই দোকান, বিক্রেতার নাম ও খ্যাতি সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারেন। গহনায় যদি একটি সনদ থাকে, যেমন সরকারি হ্যালমার্কিং সংস্থা অথবা একটি স্বীকৃত ল্যাব দ্বারা, সেটি অনেক মূল্যবান। তবে নিজেদের সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।
সূত্র: রয়্যাল দুবাই জুয়েলার্স, আল খতিব গোল্ড
কেএসকে/জিকেএস