বাংলাদেশি নারীদের কাছে সোনার গহনার কদর অন্য যে কোনো ধাতুর চেয়ে আলাদা। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত সোনা শুধু সাজসজ্জার অংশ নয়, বরং আভিজাত্য, মর্যাদা আর আর্থিক নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। অনেক নারী সোনাকে রাখেন ভবিষ্যতের ‘সঞ্চয়’ বা ‘বিপদের বন্ধু’ ভেবে। আবার কেউ কেউ গহনা কেনাকে বিনিয়োগের মতো গুরুত্ব দেন। তাই দাম যেভাবেই উঠুক, সোনার বাজারে সবসময় ভিড় থাকে।
বিশ্ববাজারে গত এক বছরে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজার, ডলারের দাম, আমদানির খরচসহ নানা কারণে সোনার মূল্য বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এই প্রেক্ষাপটে এখন অনেকেই নতুন গয়না কিনছেন। কিন্তু ক্রেতাদের বড় দ্বিধা হলো, কত ক্যারেট সোনা নেবেন? বিশেষ করে ২১ আর ২২ ক্যারেট সোনা নিয়ে বেশি প্রশ্ন ওঠে। দামেও পার্থক্য আছে। তাহলে কোনটা ভালো? আর আসল-নকল বুঝবেন কীভাবে?
২১ ক্যারেট বনাম ২২ ক্যারেট
সোনার বিশুদ্ধতা মাপা হয় ক্যারেটে। ২৪ ক্যারেট মানে ১০০ শতাংশ খাঁটি সোনা। তবে সেটি খুবই নরম, তাই গয়না তৈরির জন্য ব্যবহার উপযোগী নয়। এজন্য ধাতুর সঙ্গে মিশ্রণ করে ২১ বা ২২ ক্যারেটের সোনা ব্যবহার করা হয়।
২১ ক্যারেট সোনা : এই সোনায় বিশুদ্ধতার মাত্রা ৮৭.৫ শতাংশ। অর্থাৎ ২১ ভাগ সোনা ও ৩ ভাগ তামা বা রূপা মেশানো থাকে। এটি তুলনামূলক শক্ত, তাই প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য টেকসই।
২২ ক্যারেট সোনা : এই সোনায় বিশুদ্ধতার মাত্রা ৯১.৬ শতাংশ। এখানে ২২ ভাগ সোনা ও ২ ভাগ অন্য ধাতু থাকে। রং আরও গাঢ় হলুদ হয়, তবে নরম হওয়ার কারণে আঁচড় বা ভাঙার ঝুঁকি বেশি। কাজেই যে গয়না নিয়মিত ব্যবহার করবেন তার জন্য ২১ ক্যারেট বেশি সুবিধাজনক। আর ২২ ক্যারেট গয়না মাঝে মাঝে পরার জন্য আদর্শ। তবে দুই ধরনের সোনাই আসল এবং মূল্যবান।
আসল-নকল চেনার উপায়
১. হলমার্ক / স্ট্যাম্প পরীক্ষা করো : ২১ ক্যারেট এবং ২২ ক্যারেটের গহনা কিনতে হলমার্ক দেখে নিন। গয়নার গায়ে লেখা থাকবে ‘২২K’, ‘২১K’, ‘916’, ‘875’ ইত্যাদি যেখানে ‘K’ মানে ক্যারেট, ‘৯১৬’ বা ‘৮৭৫’ মিলেসিমাল ফিনেস। খেয়াল করুন সেই স্ট্যাম্প স্পষ্ট ও ভালোভাবে খোদাই করা কি না; অস্পষ্ট, আঁকাবাঁকা হলে সেটি নকল স্ট্যাম্প হয়ে থাকতে পারে।
২. ম্যাগনেট পরীক্ষা : সোনা চুম্বকে আকৃষ্ট হয় না। যদি কোনো শক্তিশালী চুম্বক সোনার সঙ্গে লেগে থাকে, তাহলে সম্ভবত এটি কোনো বেস ধাতু দিয়ে তৈরি, আসল সোনা নয়।। তবে মনে রাখতে হবে কিছু সংযুক্ত ধাতু খুব সামান্য চৌম্বকীয় হতে পারে। তাই এটি সবসময়ের জন্য নির্ভরযোগ্য নয়।
৩. ওজন ও ঘনত্ব পরীক্ষা : সোনা সাধারণত ওজন অনুযায়ী ঘন হয়, যা পানিতে ঢুবে যায়। পানিতে দিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। আবার ঘনত্ব বের করার যন্ত্র বা মাস্টার পিস ব্যবহার করা যেতে পারে (এক গহনায় কত ঘন হলে সোনা হতে পারে সে রেট চেক করে)।
৪. সোনার রং-চেহারা : খাঁটি সোনা সাধারণত গাঢ় হলুদ রঙের হয়ে থাকে। রং অনেক উজ্জ্বল বা কম হলুদ লাগলে হয়তো মিক্স বেশি থাকতে পারে। আলোর নিচে ধরে দেখতে পারেন। খাঁটি সোনা প্রতি দিক থেকে একই রং দেখায়। তাই যদি কোনো অংশে অন্য ধাতুর ছাপ পাওয়া যায় (একটা দিক গাঢ়, অন্যটা ফ্যাকাশে), তাহলে সন্দেহ করুন।
৫. স্ক্র্যাচ টেস্ট : একটি আনগ্লেজড সিরামিক প্লেটে জিনিসটি আলতো করে ঘষুন। যদি সোনা খাঁটি হয় তবে সোনালি রঙের রেখা রেখে যাবে, অন্যদিকে নকল সোনা কালো বা ধূসর দাগ রেখে যাবে।
৬. অ্যাসিড/রসায়নিক পরীক্ষা : গহনার একটি অপ্রকাশিত বা কম দৃশ্যমান অংশে হালকা স্ক্র্যাচ তোলে (যেখানে ক্ষতি কম হবে), তারপর বিশেষ করে নাইট্রিক এসিড প্রয়োগ করুন। যদি সেই অংশ দ্রুত ধুয়ে যায় বা রং পরিবর্তন হয়, তাহলে সেটা খাঁটি নয়। এই পরীক্ষা বাড়িতে করতে যাবেন না। পেশাদার যন্ত্র বা জুয়েলারের কাছে করানো ভালো। কারণ অ্যাসিড ভুলভাবে ব্যবহার করলে গহনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোনা কিনতে বিশ্বস্ত দোকান নির্বাচন করুন। কেনার আগে সেই দোকান, বিক্রেতার নাম ও খ্যাতি সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারেন। বিশেষ করে খেয়াল রাখুন যে, গহনায় হ্যালমার্কিং সংস্থা অথবা স্বীকৃত কোনো ল্যাব দ্বারা সনদ আছে কি না।
সূত্র : রয়্যাল দুবাই জুয়েলার্স, টিভি নাইন বাংলা, ডিস্কোভার অ্যালার্ট