২৪ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা

উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণের চাপে বিপর্যস্ত দেশের ব্যাংকখাত। খেলাপি ঋণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি। ঋণের ঝুঁকি মোকাবিলায় ভালো ও মন্দ ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক হলেও পরিচালন মুনাফা পর্যাপ্ত না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি খাতের ২৪টি ব্যাংক সেই শর্ত পূরণ করতে পারছে না। এমনকি তালিকায় রয়েছে কয়েকটি তুলনামূলকভাবে সবল ব্যাংকও। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকখাতে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল মাত্র ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। গত বছর যেখানে ১০টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল, সেখানে এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪টিতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ২৪টি ব্যাংকের সম্মিলিত প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। তবে কয়েকটি ব্যাংক নির্ধারিত সীমার বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করায় সামগ্রিক ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৩

২৪ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা

উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণের চাপে বিপর্যস্ত দেশের ব্যাংকখাত। খেলাপি ঋণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি। ঋণের ঝুঁকি মোকাবিলায় ভালো ও মন্দ ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক হলেও পরিচালন মুনাফা পর্যাপ্ত না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি খাতের ২৪টি ব্যাংক সেই শর্ত পূরণ করতে পারছে না। এমনকি তালিকায় রয়েছে কয়েকটি তুলনামূলকভাবে সবল ব্যাংকও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকখাতে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল মাত্র ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। গত বছর যেখানে ১০টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল, সেখানে এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪টিতে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ২৪টি ব্যাংকের সম্মিলিত প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। তবে কয়েকটি ব্যাংক নির্ধারিত সীমার বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করায় সামগ্রিক ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকায়। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর ঘাটতি ৭৪ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঘাটতি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঘাটতি ২৫৯ কোটি টাকা হলেও বিদেশি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ৩৮৭ কোটি টাকার প্রভিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকলে প্রভিশন ঘাটতি অনিবার্য। মন্দ ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ না করলে ব্যাংক আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রভিশন ঘাটতি কমাতে হলে আগে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এজন্য ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কঠোর যাচাই-বাছাই নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে বিতরণ করা অর্থ ফেরত আসে।

এ বিষয়ে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ এম. হেলাল আহমেদ জনি জাগো নিউজকে বলেন, মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হচ্ছে ব্যাংকখাতের সুরক্ষা কবচ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে তাদের ঋণ কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ করা উচিত। খেলাপি ঋণ বাড়তে দেওয়া কোনো অর্থনীতির জন্যই শুভ নয়। ব্যাংকখাতের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার না হলে রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে খেলাপি ঋণ আবারও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতিতে শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, যার ঘাটতির পরিমাণ ৮২ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক— ৫২ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক, যার ঘাটতি ৪৮ হাজার ৩১ কোটি টাকা। চতুর্থ অবস্থানে ন্যাশনাল ব্যাংক (২৪ হাজার ২৮২ কোটি) এবং পঞ্চম অবস্থানে এক্সিম ব্যাংক (২৩ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা)।

এ ছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকে উল্লেখযোগ্য প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণ ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা লোকসান শ্রেণির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক। পর্যাপ্ত প্রভিশন না থাকা ব্যাংকখাতের জন্য একটি গুরুতর অশনি সংকেত, যা মূলত উচ্চ খেলাপি ঋণের প্রতিফলন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ইএআর/জেএইচ/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow