জাতিসংঘের উদ্যোগে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে ‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য প্রাপ্ত বার্তা’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সংলাপ আয়োজন করা হচ্ছে।
এই সংলাপ জাতিসংঘ আয়োজিত বৃহত্তর সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের অর্থসংকটসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।
রোববার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
এদিন বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অংশীজনদের অংশগ্রহণে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কক্সবাজারে অনুষ্ঠেয় অংশীজন সংলাপ উপলক্ষেই রোববারের বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানান কামরুজ্জামান।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। এতে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, দাতা দেশসমূহ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে রোঙিঙ্গাদের অর্থায়ন ইস্যুটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।
কামরুজ্জামান বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় ২০২৫ সালের জন্য যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা (জেআরপি) অনুযায়ী ৯৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি অর্থায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত ৪৫৫ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, বৈঠকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা যারা রোহিঙ্গা বিষয়ে কাজ করছেন, তারা তাদের চলমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আপডেট প্রদান করেন। পাশাপাশি অর্থায়ন সংকটের ফলে যেসব চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, অংশীজনেরা খাদ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা—এই তিনটি প্রধান জীবনরক্ষাকারী বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। তারা আলোচনা করেন কীভাবে এই তিন খাতে প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনা ছিল ৯৩৫ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন নিশ্চিত করা। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা সংস্থা এবং রাষ্ট্র থেকে প্রায় ৪৫৫ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলাসহ অন্যান্য দিক নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে সকালে ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান কক্সবাজারে অনুষ্ঠেয় সম্মেলন তুলে ধরেন এবং এতে অংশগ্রহণ করে সম্মেলন সফল করার আহ্বান জানান।
কামরুজ্জামান জানান, কক্সবাজারে স্টেকহোল্ডার ডায়ালগ ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ২৪ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে যেখানে তারা নিজেদের মতামত তুলে ধরবেন। ২৫ আগস্ট মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন সকালে প্রধান উপদেষ্টার অংশগ্রহণে একটি সেশন হবে এবং এরপর মোট চারটি বিষয়ভিত্তিক (থিমেটিক) আলোচনার আয়োজন থাকবে। এই আলোচনাগুলোর সারসংক্ষেপ পরে পৃথক একটি সেশনে তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, এই আলোচনা নিউইয়র্কে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য হাই লেভেল কনফারেন্সকে সামনে রেখেই আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনায় উঠে আসা বিষয়গুলো আমরা নিউইয়র্কের সম্মেলনে উপস্থাপন করবো।
এক প্রশ্নের জবাবে কামরুজ্জামান বলেন, কক্সবাজারের সম্মেলনে অংশ নিতে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নয়টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ঢাকাস্থ সব দূতাবাস, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী কাজ করা সংগঠন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে স্টেকহোল্ডারদের উপস্থিতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
তবে কতটি দেশের প্রতিনিধি এতে অংশ নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু অল্প সময়ে এই আয়োজন করা হয়েছে, তাই এখনো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। ফলে এখনই অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
জেপিআই/ইএ